নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:১৫, জানুয়ারি ০২ ২০২১ মিনিট

রির্পোট দেশ জনপদ ॥ করোনাভাইরাসের তাণ্ডবের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা ও সঙ্কট দেখা দিয়েছে এটি বাস্তবতা। এই সীমাবদ্ধতার ভেতরেও বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি প্রশিক্ষণ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারা অবশ্যই কৃতিত্বের বিষয়। বুধবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। আগামীতে নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ তৈরির পরিকল্পনার কথা এতে উঠে আসে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার খুলনা শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীর পরিচালনায় তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের লক্ষ্য হলো, নিজস্ব শিপইয়ার্ডেই যুদ্ধজাহাজ তৈরি করার। এছাড়াও কক্সবাজার এবং পেকুয়াতে সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে এবং রামনাবাদে নৌবাহিনীর ঘাঁটি সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এ সবের মাধ্যমে বাংলাদেশ সমুদ্র সম্পদকে যেন উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে চলেছে। কিছুকাল আগে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে নতুন সংযোজিত যুদ্ধ জাহাজ ‘বানৌজা সংগ্রাম’-এর কমিশনিং প্রদানকালে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা এবং সম্পদ রক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নৌজাহাজটির জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানে লেবাননে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব; কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- সেই নীতি নিয়েই আমরা চলব। কাজেই যেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা দরকার সেখানে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মাত্র দুটি গানবোট নিয়ে নৌবাহিনীর কমান্ডোরা অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনার মাধ্যমে ছাব্বিশটি শত্রুজাহাজকে ধ্বংস করার গৌরব অর্জন করেছিল। ‘শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়’ মূলমন্ত্র নিয়ে এদেশের নৌবাহিনী দেশপ্রেম বুকে ধারণ করে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। প্রসঙ্গত অভিযান পরিচালনার ধরন উপযোগী প্রয়োজনীয় সক্ষমতার একাধিক জাহাজ নির্মাণের বদলে একটি জাহাজেই একাধিক সক্ষমতায় গড়ে তোলার অত্যাধুনিক মাল্টিমিশনশিপ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে উন্নত রাষ্ট্রসমূহ। বাংলাদেশের জন্যও এমন প্রযুক্তি প্রয়োগের চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। ভিডিও টেলিকনফারে›েসর মাধ্যমে কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার দায়িত্বভার গ্রহণের পর জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে নৌবাহিনীকে একটি যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংযোজন এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সমুদ্রসীমা রক্ষার পাশাপাশি সমুদ্রসম্পদকেও যেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো যায় এ লক্ষ্য নিয়েই সরকার ব্লুু-ইকোনমির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের গুরুত্বারোপ করেছে। শুধু নদীমাতৃকই নয়, বাংলাদেশ হলো সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশ। ফলে এ দেশের নৌবাহিনীর গুরুত্ব অনেক বেশি। সমুদ্র জয়ের পর দেশের সমুদ্রসীমা মোট স্থল আয়তনের তিন-চতুর্থাংশের সমান হওয়ায় নৌবাহিনীর কর্মপরিধি বহুগুণ বেড়েছে। কোন দেশের নৌবাহিনী যেসব রুটিন দায়িত্ব পালন করে থাকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে দায়িত্বের পরিসর কিছুটা বেশি। কেননা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের জন্য একটি স্বাভাবিক ও নিয়মিত বিষয়। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ের সময় যথারীতি নৌবাহিনী প্রস্তুত ছিল। ‘আমফান’ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা নৌ-অঞ্চলে নৌবাহিনীর ২৫টি জাহাজ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় দ্রুততম সময়ে জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ এবং চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি, ঘূর্ণিঝড়পরবর্তী সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অনুসন্ধান কাজের জন্য নৌবাহিনীর দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট এবং দুটি হেলিকপ্টারও প্রস্তুত ছিল। বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে আলাদাভাবে নৌবাহিনীর ওপর বিশেষ কর্তব্য না চাপলেও মানবিকতা ও সেবার মনোভাব থেকে নৌবাহিনী প্রশংসিত অবদান রেখে চলেছে। সব মিলিয়ে নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রা চলমান ক্রান্তিকালেও অব্যাহত রয়েছে, এটি পরম স্বস্তির বিষয়।