বরিশাল বিভাগে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু হচ্ছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৭:১৭, ডিসেম্বর ২৩ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশের আট বিভাগের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া বরিশাল বিভাগে প্রথমবারের মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হচ্ছে। সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ নামে প্রতিষ্ঠানটি চালুর জন্য এরই মধ্যে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসম্মত মেডিকেল শিক্ষক না থাকলে সেখানে মানহীন চিকিৎসক তৈরি হবে। এতে মানুষ কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, বেসরকারি সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে শর্ত পালনের শর্তে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হলো। ওই আদেশে বলা হয়, বেসরকার মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০১১ (সংশোধনী)-এর বিধিবিধান প্রতিপালন করতে হবে। নীতিমালার ৫.১ ধারা অনুসারে অনুমোদন ফি হিসেবে দুই লাখ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া নীতিমালার ৩ ধারা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নীতিমালার ৬ নম্বর ধারা অনুসারে একাডেমিক অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) অধিভুক্ত গ্রহণ করতে হবে বলে ওই নির্দেশনায় বলা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে প্রত্যেক বিভাগে একাধিক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হলেও বরিশাল বিভাগ সেদিক দিয়ে ব্যাপকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। এ বিভাগে বেসরকারি পর্যায়ে কোনো মেডিকেল কলেজ ছিল না। সরকারপ্রধানের একটি নির্দেশনা রয়েছে, দেশের প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা। এদিক থেকে ঢাকা বিভাগে সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে অসংখ্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও উচ্চতর ডিগ্রির শতকরা ৯৯ ভাগ প্রতিষ্ঠান ঢাকায় স্থাপন করা হয়েছে। এতে চিকিৎসকদের বিভিন্ন বিভাগ বা জেলায় বদলি করা হলেও নানা তদবির করে তারা আবার ঢাকায় ফিরে আসছেন। মেডিকেল চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানান, শুধু মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দিলেই হবে না, এসব প্রতিষ্ঠান বিএমডিসির নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা হচ্ছে কি না, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। যদিও বাংলাদেশে এটি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠছে। এসব মেডিকেল কলেজ নীতিমালার শর্ত পরিপালন করছে না। দেশে মেডিকেল শিক্ষায় শিক্ষকের ব্যাপক স্বল্পতা রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণ না করে নতুন করে প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যুক্তিযুক্ত হচ্ছে না বলে তারা মনে করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে নীতিমালার শর্ত পরিচালনে ব্যর্থ হওয়ায় এরই মধ্যে রাজশাহী বিভাগের শাহ মাখদুম মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শুধু তা-ই নয়, তিন বছর আগে শাহবুদ্দিন মেডিকেল কলেজসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। রাজধানীর পপুলার মেডিকেল কলেজ স্থাপনা ও নীতিমালার শর্ত পূরণ না করেই পরিচালনা করা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ফোরেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, কোনো স্থানে মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলে সেটি ওই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ। তবে দেশে মেডিকেল শিক্ষায় শিক্ষকের তীব্র সংকট রয়েছে। অপরদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানকে সরকার অনুমোদন দিয়েছে, তারা বিএমডিসির নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে মানসম্মত শিক্ষকের অভাবে মানহীন বা নিম্নমানের চিকিৎসক তৈরি হবে। এতে তাদের কাছ থেকে মানসম্মসত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাবে না। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ১১০টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে।’