দুই নেতায় বছর পার বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১১:০৪, ডিসেম্বর ০৮ ২০২০ মিনিট

বিশেষ প্রতিবেদক।। স্মরকালের সেরা উৎসবমুখর পরিবেশে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু উদ্যানমুখী মিছিলের স্রোতে নগরী এক রকমের স্থবির হয়ে পড়েছিল সেদিন। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিকালে কাউন্সিল অধিবেশন ডাকা হয় বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে। শীর্ষ দুই পদ নিয়ে নানা গুঞ্জনের শেষে অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীরকে সভাপতি এবং সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের এমপি। তারপর পেরিয়ে গেছে ১ বছর। আর বাড়েনি কমিটির পরিধি। অপরদিকে পদহীন নেতায় পরিণত হন ত্যাগীরা। মাত্র দুই নেতা নির্ভর মহানগর আওয়ামী লীগ অনেকটা গতিহীন হয়ে পরে। বছর শেষে এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমনকি পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুতও হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি হবে ৭৪ সদস্যের। অ্যাডভোকেট আফজালুল করীম মহানগর আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এর আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি আশির দশকের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা ও সরকারি বরিশাল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস। গত ১ বছরে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় তিনিও অন্যদের মতো এখন দলে পদহীন নেতা। নগর আওয়ামী লীগের কমিটি কেন ১ বছরে পূর্ণাঙ্গ হয়নি জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। নব্বইয়ের তুখোড় ছাত্রনেতা সরকারি বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন আনোয়ার হোসাইন। নগর আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। তিনিও এখন দলের পদহীন নেতা। আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার বলেন, ‘দলে আমাদের এখন কোনো পরিচয় নেই। গত বছর ডিসেম্বরে সম্মেলনের পর অনেক আশা-ভরসা ছিল অন্তত পরিচয় দেওয়ার মতো একটি পদ পাব। কিন্তু নগরে নেতারা এখন অবহেলিত। তিনি অনিতিবিলম্বে নগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনসহ নগরীর চার থানা কমিটি ঘোষণার দাবি জানান। মহানগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক হুমায়ন কবির বলেন, তাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ অসুস্থ। তাছাড়া করোনার কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি। তবে এ বিষয়ে কার্যক্রম চলছে। বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর এ প্রসঙ্গে বলেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ স্থানীয়ভাবে খসড়া করেছেন। তাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মতামতের অপেক্ষায় আছেন তারা। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, এ বছর কমিটি ৭৬ সদস্যে উন্নীত হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কারা ঠাঁই পেতে পারে এ প্রসঙ্গে সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দলের জন্য যারা ত্যাগী, রাজপথে সরব ছিলেন এবং সাবেক ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা কমিটিতে গুরুত্ব পাবেন।’ এবার কোনোমতেই অনুপ্রেবেশকারী কমিটিতে স্থান পাবে না। পদ না থাকায় নেতারা হতাশ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ তো এসে বলেননি যে তাদের পদ দরকার। তারা দুজনে (সভাপতি-সম্পাদক) ভালোভাবেই সংগঠন পরিচালনা করছেন। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, গত ১ বছরে দলের কার্যক্রম প্রস্ফুটিত হয়নি। নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ সিটি মেয়র হওয়ায় তাকে নেতাকর্মীদের পাওয়া দুষ্কর। সভাপতি জাহাঙ্গীর বরিশালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি (পিপি)। তাই তিনিও থাকেন আদালতের কাজে ব্যস্ত। নেতাকর্মীরা তাদের নানা সমস্যার কথা বলার সুযোগ পান না। পদবিহীন এসব নেতা তাই ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, বরিশাল মহানগরসহ বিভাগের অনেক জেলাতে সম্মেলন হলেও কমিটি হয়নি। খুব শিগগিরিই যাতে কমিটি সম্পন্ন হয় সে বিষয়টি কেন্দ্র থেকে তদারকি করা হচ্ছে।