মাকড়সার বিষ সংগ্রহ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো স্বস্তিক

কামরুন নাহার | ২০:১১, জানুয়ারি ২০ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ শক থেরাপি। অপরাধীর পেট থেকে কথা বের করতে এই থেরাপি অদ্বিতীয়। মানসিক রোগ কিংবা স্নায়ুর রোগ সারাতেও শক থেরাপির ব্যবহার রয়েছে। এবার এই সহজ-সরল ইলেকট্রিক থেরাপির মাধ্যমে মাকড়সার বিষ সংগ্রহ করে স্বস্তিক মাহাতো তাক লাগিয়ে দিলেন গোটা বিশ্বকে। খুলে গেল বিষ-বিজ্ঞানের নতুন দরজা। পদ্ধতির উদ্ভাবক স্বস্তিক মাহাতো পুরুলিয়ার জে কে কলেজের প্রাণীবিজ্ঞানের ছাত্র। বিষ নিষ্কাশন নিয়ে একটি পোস্টার তৈরি করেছিলেন স্বস্তিক। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সম্মেলনে স্বস্তিকের পোস্টারটি প্রথম স্থান দখল করে। তার দাবি, নতুন পদ্ধতিতে কোনও ক্ষতি না করেই মাকড়সাসহ যেকোনও ছোট পতঙ্গের বিষ নিষ্কাশন বা ‘মিল্কিং’ সম্ভব। সাপের বিষ নিয়ে এ দেশে অনেক গবেষণা হয়েছে। এই মুহূর্তে ব্রিটেনের ব্যাঙ্গর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনীতা মালহোত্রার তত্ত্বাবধানে একটি বড় টিম সর্পবিষের প্রকৃতি নির্ণয়ে নিরলস খাটছেন। কিন্তু মাকড়সার বিষ নিয়ে এ যাবৎ কোনও কাজ হয়নি। অথচ, বেশ কয়েকটি রহস্যমৃত্যুর ক্ষেত্রে মাকড়সাকে খলনায়ক বানানো হয়েছে। বাংলায়ও বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঘাতক হিসাবে মাকড়সাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি হুগলির বৈদ্যবাটিতে এক গৃহবধূকে বাথরুমের মধ্যে দংশন করে পোকা। পরে বধূর মৃত্যু হয়। ওই পোকা মাকড়সা হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান। এই পরিস্থিতিতে আটপেয়েদের নিয়ে গবেষণা নতুন করে গতি পেয়েছে। এক বছর আগে প্রকল্পটি শুরু করেন পুরুলিয়ার জগন্নাথ কিশোর কলেজের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম সাহা। ‘কো-ইনভেস্টিগেটর’ হিসাবে রয়েছেন কলকাতা বিশ্বিবদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যাপক ও ইউজিসি এমিরেটাস অধ্যাপক অ্যান্টনি গোমস। ‘জুনিয়র রিসার্চ ফেলো’ হিসাবে প্রকল্পে যুক্ত হন স্বস্তিক। সহযোগী হিসাবে রয়েছেন আর এক ছাত্র অভিজিৎ ঘোষ। স্বস্তিক বলেন, ‘বনে-বাদাড়ে, নদীর পাড়ে ঘুরে মাকড়সা ধরে আনা হয় প্রথমে। তারপর ল্যাবরেটরিতে গিয়ে তার থেকে চলে বিষ নিষ্কাশন। এখন পর্যন্ত ‘জায়েন্ট উড স্পাইডার’ প্রজাতির নেফিলা ফিলিপিস গোত্রের প্রায় একশো মাকড়সার থেকে বিষ নিষ্কাশন করা হয়েছে।’ ছোটখাটো চেহারার এই আটপেয়ে বাদুর, ইঁদুরকে অনায়াসে মেরে ফেলতে পারে। মাকড়সার কামড় খেয়ে আঙুলে পচন ধরার উদাহরণ অনেক রয়েছে। একটি মাকড়সা থেকে গড়ে ০.২১ মিলিগ্রাম বিষ সংগ্রহের পর তা থেকে পাউডার বানিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। নেফিলা সাধারণত জঙ্গলে থাকে। তবে লোকালয়েও দেখা যায়। স্বস্তিক জানান, চূড়ান্ত পর্বে কুড়িটি পোস্টারের মধ্য লড়াই হয়। সেখানেই সবাইকে টেক্কা দেয় তার বিষ নিষ্কাশনের মডেল। পার্থপ্রতিম জানিয়েছেন, ইলেকট্রিক শক ব্যবহার করে কাঁকড়াবিছে ও ট্যারান্টুলার বিষ বের করারও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু স্বস্তিক ও তাঁর সহযোগীরা ছোট মাকড়সার বিষ নিষ্কাশনের খুব সহজ ও সস্তা একটি পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন।