আনসার ভিডিপি ক্লাবের জমি ভূমিদস্যুদের কব্জায়

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০০:১০, নভেম্বর ২২ ২০২০ মিনিট

আনোয়ার হোসেন ॥ আনসার ভিডিপি ক্লাবের প্রায় দেড় একর জমি ভূমিদস্যুদের কব্জায়। প্রায় দুই যুগ ধরে বরিশাল সদর উপজেলার দশটি ইউনিয়নে এ ক্লাবগুলোর ভূসম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। নিয়মানুসারে জেলা আনসার ভিডিপি দপ্তর এ বিষয়ে তদারকির দায়িত্বে থাকলেও খোদ দপ্তরটিতেই খোঁজ নেই ইউনিয়ন পর্যায়ে।  এ আনসার ভিডিপি ক্লাবগুলোর ব্যাপারে। এর মধ্যে কাশিপুর, চরবাড়িয়া, জাগুয়া, শায়েস্তাবাদ, চরমোনাই, চরকাউয়া, টুঙ্গীবাড়িয়া, চন্দ্রমোহন, কড়াপুর ও চাঁনপুরসহ এই ইউনিয়নগুলোতে মোট দশটি আনসার ভিডিপি ক্লাব রয়েছে। আর ক্লাবগুলোর ভূসম্পত্তি ইতিমধ্যে ভূমিদস্যুদের শকুনি থাবায় দখল হয়ে গেছে। সূত্রে জানা গেছে, কাশিপুর সুরভী পাম্পের সামনে সাবেক মেম্বার কাদের এবং কড়াপুর ইউনিয়নে কটুরাকাঠি গ্রামের সাবেক মেম্বার আবুল বাশার আনসার ভিডিপির সরকারি জমি নিজের দখলে নিয়ে গেছে এবং কাশিপুরের ক্লাবটির জমি ইতিমধ্যে বিক্রিও করে দিয়েছে কাদের মেম্বার। এ ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে কোন প্রকার তথ্য দিতে তিনি রাজী হননি বরং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে বলেন, ক্লাবতো আপনাদের না। তাহলে আপনারা এ বিষয়ে কেনো কথা বলেন। অপরদিকে কড়াপুর কটুরাকাঠি কুটিরশিল্প এলাকার আনসার ভিডিপি ক্লাবটিও আবু মেম্বার দখল নিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। প্রথমে সাইকেল রিক্সার গ্যারেজ গড়ে তুলেন। এরপর ব্যাটারি চালিত হলুদ অটোরিকশার চার্জিং গ্যারেজ তৈরী করে মাসোয়ারা হাতিয়ে নেয়। এ নিয়ে তিনি বলেন, আনসার ক্লাবের জায়গা কুটির শিল্পের পিছনে। কিন্তু কোন জায়গায় তা দেখাতে সমর্থ হয়নি। অথচ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুটির শিল্পটিই আনসার ভিডিপির ক্লাব ঘর। যার সভানেত্রী হিসেবে একসময় জৌলূসি দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাবেক ইউপি মেম্বার সেতারা বেগম। যদিও সেতারা বেগম ও আবু মেম্বার সম্পর্কে দেবর-ভাবি। একইভাবে দখল হয়ে গেছে জাগুয়া ইউনিয়নের আনসার ভিডিপি’র ক্লাবের জমি। এ ব্যাপারে জাগুয়া ইউনিয়নের আনসার ভিডিপির সদস্য বারেক জানায়, একসময় এই ইউনিয়নে আনসার ভিডিপির ক্লাব ছিল। আমরা ক্লাবগুলোতে বসে অনেক সময় কাটিয়েছি। তবে এখন বয়স হইছে কোন জায়গাটা যে ক্লাবের জন্য আনসার ভিডিপি দিয়েছিলো তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আনসার ভিডিপি’র ক্লাবের জমি দখল হওয়ার ব্যাপারে চরমোনাই ইউনিয়নের আনসার ভিডিপির সদস্য ফাতেমা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন যাবত কোন কর্মকান্ড নেই বিধায় ক্লাবটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এভাবে প্রতিটি ইউনিয়নেই আনসার ভিডিপির সম্পত্তি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে কিংবা কেউই বিক্রিও করে দিয়েছেন। এছাড়াও আনসার ভিডিপির এ ক্লাবের দাতারা অনেকেই ইতিমধ্যে মারাও গেছেন। পরে তাদের ওয়ারিশরাই তা দখল করেছেন। এদিকে, বরিশাল সদর আনসার ভিডিপি দপ্তরের টিআই রেশমা সুলতানা বলেন, বরিশাল সদর উপজেলার দশটি ইউনিয়নে দশটি কুটির শিল্প সমিতি ও দশটি ক্লাব আমাদের কাগজপত্রে উল্লেখ রয়েছে। সমিতিতে ৩২ জন নারী ও ৩২জন পুরুষ সদস্য রয়েছে। এক সময়ে এই সদস্যরা সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করত। তারা নিজ নিজ আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সোচ্চার ছিলো। এছাড়া অফিসের উদ্যোগেও বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তা ও ক্রীড়া সমাগ্রী বিতরণ করা হতো ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, এ সদস্যদের আত্মনির্ভরশীলতার জন্য কুটির শিল্প প্রশিক্ষণসহ হাঁস-মুরগী পালনের জন্যও প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। কিন্তু এখন আর এসব কর্মকান্ড ক্লাবগুলোতে নেই । তবে কেনো এই আনসার ভিডিপির ক্লাবগুলো নিস্ক্রিয় এবং তার ভূসম্পত্তি বেদখল জানতে চাইলে বরিশাল আনসার ভিডিপি দপ্তরের পরিচালক বলেন, ক্লাবগুলো পরিচালিত হতো প্রকল্পের মাধ্যমে। স্থানীয়ভাবে আনসার ভিডিপির সদস্যদের সমন্বয়ে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য নানামুখি প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা করা হতো। যেমন-এর মধ্যে নারী ও পুরুষ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো পশু পালন, কুটির শিল্প, সমবায়ের মাধ্যমে সঞ্চয় ও বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করা। পাশাপাশি অবকাঠামো সহায়তা প্রদানের মধ্যে ক্লাব ঘর নির্মাণ করে দেয়াসহ বিনোদনের জন্য ক্রীড়া সামগ্রী দেয়া হতো। কিন্তু এ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাহলে কি আনসার ভিডিপি ক্লাবের জন্য দাতারা যে জমি দিয়েছেন সেই জমির কি কোন দেখভাল বা সুরক্ষা আপনাদের দপ্তর থেকে করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমরা এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে ক্লাবের জমি উদ্ধারের ব্যবস্থা নেবো।