দক্ষিণাঞ্চলে ৭ লাখ হেক্টরে রবি ফসল আবাদের পরিকল্পনা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:১৮, নভেম্বর ২১ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবদেক ॥ চলতি রবি মৌসুমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো সহ গম, গোল আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, শীতকালীন সবজি, তেল বীজ, মসলা, ডাল জাতীয় ফসল এবং তরমুজ ও সয়াবিন চাষের লক্ষ্যে কৃষি যোদ্ধাগন প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তবে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’এর পরে ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় ভর করে লঘুচাপের প্রভাবে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর উজানের ঢলের সাথে প্রবল বর্ষনে গোটা দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় উঠতি আউশের ক্ষতির সাথে আমন বীজতলা ও রোপা আমনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও অমাবশ্যার ভরা কোটালে ভর করে আরো দু দফার প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের আগাম রবি ফসল সহ রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তিন দফার অতি বর্ষণে এবার দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি জমিতে দীর্ঘদিন পানি আটকে ছিল। এখনো অনেক জমি থেকে পানি সম্পূর্ণ নিস্কাশন হয়নি। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে রবি ফসল আবাদ এবার কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আউশ ও আমনের সব ক্ষতি কাটিয়ে এ অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন রবি আবাদের মাধ্যমে ঘুরে দাড়াবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত বছর রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে যেখানে ৬ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়েছিল, কৃষি মন্ত্রণালয় এবার সেখানে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫শ’ হেক্টরে এসব ফসল আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ তথ্য কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর’র। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে আমনের জমিতে থোর ও ফুল আসতে শুরু করেছে। আর দিন পনেরর মধ্যেই আমনের কর্তন শুরু হয়ে চলবে পৌষের শেষ ভাগ পর্যন্ত। ইতোমধ্যে কৃষকরা বোরো বীজতলা তৈরীর কাজও শুরু করেছেন। অন্যান্য রবি ফসল আবাদও শুরু হয়ে যাবে খুব সহসাই। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় অতিক্রম করেই দক্ষিণাঞ্চলে এবার ৬ লাখ ১৫ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছানের ব্যাপারে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারনের দায়িত্বশীল মহল। পাশাপাশি চলতি রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে গত বছরের সোয়া লাখ হেক্টরের স্থলে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫১৬ হেক্টরে বোরো আবাদের মাধ্যমে ৬ লাখ টনেরও বেশী চাল উৎপাদণের লক্ষ্য রয়েছে। বিদায়ী খরিপ-১ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে আউশ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টনেরও বেশী। এছাড়া প্রায় ৫২ হাজার হেক্টরে শীতকালীন শাক-সবজি, ৩৫ হাজার হেক্টরে তরমুজ, ৭ হাজার হেক্টরে গম, ১৩ হাজার ৫১ হেক্টরে মিষ্টি আলু, ৯ হাজার ৫১ হেক্টরে গোল আলু, ১০,১৭৫ হেক্টরে ভুট্টা, আড়াই হাাজার হেক্টরে আখ, ৬,১২৯ হেক্টরে শসা, ক্ষিরা ও মর্মা ছাড়াও ১ হাজার ৩৮৪ হেক্টরে ফুট আবাদের লক্ষ্য অর্জনে কাজ শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগণ। এসব ফসলের বাইরেও দক্ষিনাঞ্চলে এবার প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন ধরনের তেল জাতীয় ফসল আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে ২৩ হাজার হেক্টরে চিনা বাদাম, ১৩ হাজার হেক্টরে সরিষা, ৪ হাজার ২১২ হেক্টর সূর্যমূখী, ২ হাজার ৪৫৩ হেক্টরে তিল ও প্রায় ১২৫ হেক্টরে তিসির আবাদ হচ্ছে। এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলে এবার আরো প্রায় ২৪ হাজার হেক্টরে সয়াবিনের আবাদ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে ৭০ হাজার টন। তবে দক্ষিণাঞ্চলের সম্ভাবনাময় এ তেলবীজ আজ পর্যন্ত কোন তেলকলে ভোজ্যতেল উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছেনা। বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিড-এর কারখানার নিয়োজিত ফিডাররা মাঠ থেকেই সয়াবিন তেল বীজ সংগ্রহ করে তা প্রাণি খাদ্যের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে। উপরন্তু দক্ষিনাঞ্চলে সূর্যমূখি উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র বিপনণের অভাবে এর আবাদ সম্প্রসারণ হচ্ছে না বলে জানা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলে এবার প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ডাল জতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে মুগ ডালই আবাদ হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ১ হাজার হেক্টরে। যা দেশে মোট মুগ আবাদের প্রায় ৬০ ভাগ। এছাড়া ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টরে খেসারী, ২৩ হাজার হেক্টরে ফেলন, প্রায় ৪ হাজার হেক্টরে মুশুর, ১ হাজার হেক্টরে ছোলা ও প্রায় ৫০ হেক্টরে মাসকালাই ও মটর ডালের আবাদ হচ্ছে। এসবের বাইরে দক্ষিণাঞ্চলে চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টরে মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে। যার মধ্যে মরিচ আবাদ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টরে। এছাড়া ১ হাজার ৬শ হেক্টরে পেয়াঁজ, ১ হাজার ১শ হেক্টরে রসুন ছাড়াও ৩ হাজার হেক্টরে ধনিয়া এবং প্রায় ৮শ হেক্টরে আদা, কালোজিরা ও হলুদের আবাদ হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এবার গত জুলাই মাসে সারা দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে ১১.৩% বেশী হলেও বরিশাল অঞ্চলে তা ছিল ১৫.৬% কম। জুন মাসেও সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২% বেশী বৃষ্টি হলেও বরিশাল অঞ্চলে তা ছিল ০.৬% কম। কিন্তু আগষ্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অতিভারি বর্ষণে ফসলের আবাদ ও স্বাভাবিক উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হচ্ছে। তবে এসব কিছুর পরেও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে চলতি রবি মৌসুমে সব ধরনের ফসলের আবাদ ও উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল যথেষ্ট আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।