শেবামেক’র ফরেনসিক বিভাগের সংকট ও শূন্যতা কাটছে না

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:২০, নভেম্বর ২১ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সংকট আর শূন্যতা শব্দটিই যেন শুরু ও শেষ কথা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই শিক্ষক তথা চিকিৎসক পরিপূর্ণ ছিলো না বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগটিতে। কখনো একজন আবার কখনো দুজন চিকিৎসক দিয়েই চলেছে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগটি। অধ্যাপকসহ বিভাগটিতে ৮ টি পদ সৃষ্ট থাকলেও শতভাগ তো দূরের কথা এক তৃতীয়াংশ পদও কখনো পূরণ হয়নি। উপরন্ত এক জন দুজন দিয়ে কোন ভাবে খটুড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা বিভাগটি থেকে বদলী করারও একাধিক নজির রয়েছে। গত দুদিন আগে ঠিক তেমনই একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ১৯ নভেম্বর বদলী করে দেয়া হয়েছে বিভাগটির অধ্যাপকের দায়িত্বে থাকা ডাঃ কামদা প্রসাদ সাহাকে। গত ৯ মাস ধরে এ বিভাগে দায়িত্ব পালন করা এই চিকিৎসককে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের গবেষণা, প্রকাশনা ও কারিকুলাম উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক পদে বদলী করা হয়েছে। ফল হিসাবে অধ্যাপক শূন্যতায় পড়েছে বিভাগটি। আর একাডেমিক কার্যক্রমসহ লাশের ময়নাতদন্ত ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজের ভার অর্পিত হয়েছে বর্তমানে দায়িত্বরত দুজন লেকচারারের উপর। এতে শুধু সংকট নয় মহা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সংকটের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফরেনসিক বিভাগের লেকচারার ডাঃ রিফায়েত বলেন, গ্রাজুয়েশন ও পোষ্ট গ্রাজুয়েশন ও নিয়মিত ব্যাচ মিলিয়ে বিভাগটিতে প্রায় আড়াইশ জন শিক্ষার্থী থাকে। এদের নিয়মিত একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আরো অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। এছাড়া ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুতসহ ফরেনসিক ল্যাব সংশ্লিষ্ট সকল কাজই আমাদের করতে হয়। যা দু জন কেন, সৃষ্ট সকল পদ পরিপূর্ণ থাকলেও যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করতে বেগ পেতে হবে। তিনি বলেন করোনার কারনে আপাতত একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তাই এ দিক থেকে একটু স্বস্তি রয়েছে। কিন্তু এছাড়াও অন্যান্য যে সব কাজ রয়েছে তা দু’জন লেকচারের পক্ষে চালিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তথ্য মতে, ১৯৮১ সালে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের আওতায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে চালু হয় মর্গ ও মৃত দেহ সংরক্ষণ ও লাশ কাটা কার্যক্রম। এনাটমি বিভাগের তিন সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয় ফরেনসিক বিভাগের। পরে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যাপক, তিন জন লেকচারার ও একজন মেডিকেল অফিসারসহ মোট ৮ টি পদ সৃষ্ট হয় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের জন্য। কিন্তু শুরু থেকেই ওই ৮ পদের বিপরীতে কখনো এক জন বা দু’জন শিক্ষক দিয়েই চলেছে এ বিভাগটির সকল কার্যক্রম। ১৯৮৪ সালে শুরু হয় ময়না তদন্ত। অস্থায়ী ডোম দিয়ে চালানো হয় এ কাজ। তখনো একজন অধ্যাপকের তত্ত্বাবাধানে চলে সকল কার্যক্রম। ২০১২ সালে ফরেনসিক বিভাগের জন্য আলাদা ভবন, মর্গ তৈরী ও আধুনিকায়ন করা হলে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট বেশ প্রকট হয়ে ওঠে। কিন্তু তখনো কাউকে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়নি। জানতে চাইলে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ সরোয়ার বলেন, ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসক সংকট নতুন কোন ঘটনা নয়। বর্তমানে বিভাগটি অধ্যাপক শূন্য। অর্থ্যাৎ অধ্যাপক, সহকারী ও সহযোগী মিলিয়ে ৪ টি অধ্যাপকের পদ থাকলেও সব গুলোই শূন্য। আর এ শূন্যতা নিয়ে একটি সরকারী ও পুরানো মেডিকেল কলেজ চলতে পারে না। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরা শিক্ষক চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অনুরোধ জানিয়ে থাকি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কখনোই দ্রুততার সাথে কাজটি করা হয়না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে বিলম্ব হতে পারে। কিন্তু দ্রুততম সময়ে শূন্যপদ পূরনে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। নতুবা একাডেমিকসহ মহা সংকট তৈরী হবে।