ভেকু হারুনের মাটি চুরির হিড়িক
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাকেরগঞ্জের চরামদ্দি ইউনিয়নের সঠিখোলা গ্রামের ইটভাটায় ইট তৈরীর জন্য রাতের আঁধারে চলছে মালিকাধীন ফসলি জমির মাটি চুরির হিড়িক। ইটভাটা মালিকদের সক্রিয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই মাটি চুরি হয় বলে এমন অভিযোগ করেন জমির মালিকরা। ভুক্তভোগী সূত্রে জানাগেছে, বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের চরকরমজি এলাকার কথিত আ.লীগ নেতা হারুন অর রশিদ হাওলাদার কয়েক বছর ধরে আরএসবি ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছে। সেই ইট ভাটায় ইট তৈরীর জন্য পার্শ্ববর্তী এলাকা চরামদ্দি ইউনিয়নের চরসঠিখোলা গ্রামের নকিব সিকদার গংদের ২০ শতাংশ জমির মাটি ভেকু দিয়ে রাতের আধারে চুরি করে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী জমির মালিক বদরুল সিকদার, আলাউদ্দিন মানিক হাওলাদার, রাসেল সিকদার, মাইনউদ্দিন মোল্লা, শামসু মোল্লাসহ অন্যান্যদের জমির মাটিও একইভাবে চুরি করে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
চরকাউয়া ইউনিয়নে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। গতবছর একইভাবে মাটি চুরির সময় হাতে-নাতে ধরে ফেলে সঠিখোলা এলাকার একাধিক বাসিন্দারা। তখন উক্ত চোরাইকৃত মাটির মূল্য পরিশোধ ও স্থানীয়দের কাছে ক্ষমা চেয়ে সেই যাত্রায় রক্ষা পায় এই হারুন। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। সুযোগ বুঝে ফের এই হারুন ওরফে ভেকু হারুন অত্র এলাকার ফসলি জমির মাটি চুরি করা শুরু করেছে। এ ব্যাপারে, জমির মালিক ৯ নং ওয়ার্ড সঠিখোলা এলাকার বাসিন্দা নকিব সিকদার বলেন, গত বছর মাটি চুরি করেছে হারুন তা আমরা হাতে-নাতে ধরেছি এবং পরে ও ক্ষমা চাওয়াতে বিষয়টি নিয়ে আর সামনে এগোয়নি। এর মধ্যে আবারো এবছরও হারুন মাটি চুরি শুরু করছে। চোরাই মাটি দিয়েই ওর ইটভাটা চলে। মাটি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমি স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ সবুর কে জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। এ নিয়ে তিনি আরো বলেন, রাতের আধারে ছোট পন্টুনের উপর ভেকু উঠিয়ে খালগুলোর দুপাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রলার বোঝাই করে নিয়ে যায় ইট ভাটায়। এছাড়া বাড়ি থেকে দুরবর্তী এলাকার জমির মাটি চুরি করায় দেখতে পায় না জমির মালিকরা। কিন্তু সকালে কিংবা ২/১দিন পরে লোক মারফত শুনতে পেয়ে দেখতে পায় নিজ জমিতে পুকুরের মতো জলাশয় হয়ে গেছে। এভাবে অধিকাংশ মানুষের পৈত্রিক সম্পত্তির মাটি রাতের আধারে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অভিযুক্ত হারুন বলেন, আমি কারো মাটি চুরি করি না। আমি ভিভিআইপি লোক। আমার চলাফেরা মন্ত্রী লেভেলে। আমি এখন জমি কিনি। উল্লেখ্য, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রির কোন এক অনুষ্ঠানে ছবির এক কোনায় এই সুচতুর হারুনকে উকি দিতে দেখা গেছে আর ওই ছবিটি অত্র এলাকায় ব্যবহার করে একটি ছত্রছায়া তৈরী করতে মরিয়া সে। অথচ এনিয়ে একাধিকসূত্র জানায়, দলীয় নেতা কিংবা মন্ত্রী ও সাংসদরা যদি কোন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করে সেক্ষেত্রে দলীয় নিস্ক্রীয় কর্মী অথবা সমর্থকও অংশগ্রহণ করে তখন ফটোসেশনে কেউ হয়তো উকি দিতে পারে এর দায়ভারতো অনুষ্ঠানের মধ্যমনিদের নয়। এদিকে হারুন ওরফে ভেকু হারুনের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, গত বছর মাটি চুরি করেছিলেন কেনো এবং ক্ষমা চেয়ে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে পার পেয়েছিলেন এমন প্রশ্নের উত্তর কেনো উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি সরকারি দলের লোক। অন্য কারো কাছে তারা জমির মাটি বিক্রি করতে পারে, আমি মাটি চুরি করিনি।
মাটি চুরির ব্যাপারে সঠিখোলা ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সবুর জানান, পৈত্রিক জমির মালিক নকিব ভাই আমাকে জানিয়েছেন গত বছরের মতো এবছরও তার মাটি চুরি হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। চুরির সে পার্শ্ববর্তী অন্য উপজেলার লোক হওয়ায় আমি কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। অপর এক সূত্র জানায়, আরএসবি ব্রিকসের মালিক হারুন তার ইটভাটা নিয়ামানুসরণ করেনি এবং অবৈধ উপায়ে আবাসিক এলাকায় ইট পোড়ায়। তাও আবার পরিবেশ আইন লঙ্গন করে টিনের চিমনি দিয়ে। যে কারণের ইট পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় অত্র এলাকায় পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করে। এ নিয়ে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, পরিবেশ আইন না মেনে যদি কেউ ইট ভাটা পরিচালনা করে তাহলে তা পরিবেশ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আমাকে ০১৭১২৬৯৯৩৮৮ এই নাম্বারে ফোন করে তথ্য জানালেও তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। আরএসবি ইট ভাটা এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা বলেন, কয়েক বছর যাবত আবাসিক এলাকায় ইট পোড়ানোর কারণে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের চর্ম ও শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগবালাই লেগেই আছে। এছাড়া স্থানীয় ফলজ ও বনজ গাছেরও ক্ষতি সাধন হচ্ছে। আমরা ইট ভাটা বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।