বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি

কামরুন নাহার | ১৭:০০, জানুয়ারি ১৫ ২০২০ মিনিট

  ফণী-বুলবুল ও শীতে হতাশ কৃষক নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পৌষের অকাল দু’দফার প্রাকৃতিক দূর্যোগে শষ্যের গুণগতমান ভাল না হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের দর পতনে কৃষককুল এখন দিশেহারা। বরিশালের বিভিন্ন হাটে ধানের গড় দাম এখন ছয়শ’ টাকারও নিচে। অথচ এবার আমন রোপণের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ এবং কর্তনের আগে ‘বুলবুল’ এর আঘাতে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের ধান চাষের ও উৎপাদন ব্যয় অন্তত ২০ ভাগ বেড়ে গেলেও ধানের দাম গত বছরের চেয়ে কম। সর্বশেষ গত শনিবার দক্ষিণাঞ্চলের ধানের পাইকারি হাটগুলোতে যে মূল্য পরিস্থিতি দেখা গেছে তাতে কৃষকের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। চরম দুঃশ্চিন্তার ছাপ পরেছে সকল কৃষকের চোখে ও মুখে। সূত্রমতে, অগ্রহায়ণের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ে প্রবল বৃষ্টির সাথে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়া নিয়ে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় আঘাত হানে। ফলে এসব জেলার মাঠে থাকা কয়েক লাখ হেক্টর জমির উঠতি আমন ধান মাটিতে ফেলে দেয়ায় তা প্রবল বৃষ্টি আর জোয়রের পানিতে নিমজ্জিত হয়। বুলবুলের বয়ে আনা মেঘমালায় বরিশালে দেশের সর্বোচ্চ প্রায় ২৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে মাত্র পাঁচ ঘন্টায়। ওই বর্ষনে আমনসহ প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমির ফসল বৃষ্টির আর জলোচ্ছাসের পানিতে নিমজ্জিত হয়। পানি সরে যেতে সপ্তাহখানেকে সময় লাগলেও উঠতি আমনের বেশিরভাগ ধানেই চিটা হয়ে যায়। এমনকি  ধানের থোর পর্যায়ের গুণগত মানও বিনষ্ট হয়। সূত্রে আরও জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় আবাদকৃত সোয়া সাত লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আমন থেকে ১৬ লাখ টনেরও বেশি চাল পাবার লক্ষ্য থাকলেও তা অর্জন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে কৃষিবিদদের মধ্যে। বুলবুলের আঘাতে মাটিতে শুয়ে পরা ধানের প্রায় পুরোটাই নিমজ্জিত হয়েছে বৃষ্টি আর বাড়তি জোয়ারের পানিতে। ফলে অনেক এলাকার ২৫-৩০ ভাগ ফসল কাটাই সম্ভব হয়নি। যে ফসল ঘরে উঠেছে তাতেও চিটার পরিমাণ বেশি। বুলবুলে ভর করে অগ্রহায়ণের ক্ষতিকর বর্ষণের পরে গত কয়েকদিনের অকাল বর্ষণেও ধানের আরও ক্ষতি হয়েছে। অনেক কৃষক ধান কাটলেও পৌষের বৃষ্টির কারণে তা শুকানো যাচ্ছেনা। আর ধান বিক্রি করতে গিয়েও দাম মিলছে না। এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিমণ আমনের উৎপাদন ব্যয় হয়েছে সাড়ে পাঁচশ টাকারও বেশি। অথচ ধান হাটে পৌঁছানোর পরিবহন ব্যয়ের পরে দাম মিলছে সাড়ে পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ টাকা। এ অবস্থায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক চরম দূরাবস্থার মধ্যে পরেছেন। খাদ্য অধিদপ্তর দক্ষিণাঞ্চলে যেসব শর্তে ধান কিনছে, তাতে কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছে না। তাদের নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে মধ্যবর্তী ফরিয়াদের ওপরই। আর সেখানে দাম মিলছে ফরিয়া সিন্ডিকেটের নির্ধারিত হিসেব অনুযায়ী। ফলে এবার মারাত্মক ক্ষতির কবলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির প্রান কৃষি ও কৃষক। এমনকি এবার বাজারে শীতকালীন সবজির দাম সাম্প্রতিকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছালেও তাতে লাভবান হয়নি দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা। কারন সারাদেশের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা দক্ষিণাঞ্চলে রবি মৌসুম শুরু হয় প্রায় দু’মাস বিলম্বে। যে কারণে বুলবুলের ছোবলে আগাম শীতকালীন সবজির পুরোটাই নষ্ট হয়ে কৃষকদের পরিপূর্ণভাবেই সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কৃষকরা জানান, ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের ছোবলে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখনও তারা সরকারী কিংবা বেসরকারীভাবে কোন সহযোগিতাই পাননি।