আটকে আছে নগরীর খাল সংস্কার প্রকল্পের বরাদ্দ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০১:০৯, সেপ্টেম্বর ২২ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর খালগুলো খনন, তীর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য দুই হাজার ৬৫০ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এখনো মেলেনি প্রকল্পের বরাদ্দ। বরাদ্দের অভাবে থমকে আছে খালগুলোর সংস্কার। যেগুলোকে বহুকাল থেকেই এই নগরীর প্রাণ বলা হচ্ছে। পাশাপাশি কতক খালের অস্তিত্বও বিলীন হয়েছে। আপাতত চিঠি চালাচালি আর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ভাষায় সন্তুষ্টি থাকতে হচ্ছে। এদিকে সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নগরীর ৫৪টি খাল উদ্ধার ও সংস্কারের জন্য দুই হাজার ৬৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সরকার সেই প্রস্তাবে এখনও কোনো সাড়া দেয়নি। অপরদিকে নগরীর সড়ক উন্নয়নের জন্য সংশোধিত সাড়ে ছয়শ’ কোটি টাকার বরাদ্দেরও নেই কোন হদীস। তবে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহ এক ভিডিও বার্তায় আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে একনেকে এই প্রস্তাবগুলো পাশ হয়ে যাবে। কিন্তু খাল সংস্কারের প্রস্তাব আদৌ পাশ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা, সেই ভিডিও বার্তায় সিটি মেয়র নিজেই উল্লেখ করেছেন এক সময়ে নগরীর ৪৬টি খালের কথা। তার মধ্যে ২২টি খালেরও অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিয়ে নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাহলে নগরীর ৫৪টি খাল উদ্ধার ও সংস্কারের জন্য যে বরাদ্দ মন্ত্রণালয়ে চাওয়া হয়েছে তা পাশ হবে কিনা কিংবা নগরীর সড়ক উন্নয়ন বরাদ্দের মতো মুখ থুবরে পড়বে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও নগরীর সড়ক ও ড্রেন উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দটি প্রথমবার আটকে যাওয়ার কারন হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের অদক্ষতাকেই দেখছেন মেয়র। এদিকে বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের তালিকা অনুযায়ী মাত্র দুটি খাল জেলা প্রশাসনের এবং দুটি সিটি করপোরেশনের। বাকি ১৮টি খাল জেলা পরিষদের আওতাধীন। জেলা পরিষদের দায়িত্বশীল সূত্রও এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, খাল পুনরুদ্ধারে বরাদ্দ না থাকায় খালগুলোকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিশেষ কেউ কথা বলতেও রাজি নন। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, খালগুলোর মালিকানা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় তিন দপ্তরের মধ্যেই ঠেলাঠেলি রয়েছে। ফলে খালের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাচ্ছে নগরী থেকে। খালগুলো না থাকায় বৃষ্টি হলেই এখন জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় নগরী। জলাবদ্ধতায় সড়কের সংস্কার কাজ টিকছে না বেশিদিন। প্রত্যেক বছর বর্ষা গেলে সুড়কির সড়কে পরিণত হয় প্রধান ও অপ্রধান সড়কগুলো। এদিকে সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কয়েক কয়েক বছর আগে নগরীর ২৩টি খাল চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছিল। যদিও কাগজ-কলমে থাকলেও সরজমিনে দেখা গিয়েছে সেই ২৩ খালের মধ্যে বেশ কয়েকটি খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। যেমন নাপিতখালী খালের মত কোনো কোনো খাল আজ সরু ড্রেনে পরিণত হয়েছে। আবার চরবদনা খালের মত কোনো কোনো খালের একেবারেই কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় ৫৪টি খাল উদ্ধার ও সংস্কারের জন্য সিটি করপোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব একনেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে প্রস্তাবটি এগারোশ’ কোটি টাকার প্রস্তাবের মত ফেরত আসা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এ ব্যাপারে বাসদ বরিশাল জেলা কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমন বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন সচারচারই একটি কথা বলে থাকে, বরাদ্দ নেই। এটি মেয়রের ‘অযোগ্যতা’। অন্য সিটি করপোরেশনের মেয়র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বাজেট পাস করিয়ে আনেন। কিন্তু বরিশালের ক্ষেত্রে কোনো বাজেটই তো পাস করাতে পারছেন না। তাহলে নগরীর উন্নয়ন হবে কিভাবে? বরিশাল নগরের খালগুলোর দুরাবস্থা নিয়ে কথা হয় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। আমার কাছে তেমন কোন তথ্য নেই তবে বরাদ্দ না থাকায় জেলা পরিষদের আওতাধীন খালগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না। খালের তীরের জমি ইজারা দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ইজারা না দিলেও খালের জমি বেদখল হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, খালগুলো খনন এবং সংরক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে একটি মেগা প্রকল্প করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সূত্রে জানা গেছে, নগরীর খালগুলো খনন, তীর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য দুই হাজার ৬৫০ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনাটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত ওই প্রকল্প অনুমোদন এবং অর্থ বরাদ্দ পেলেই নগরীর খালগুলোর হারানো চেহারা আবার ফিরে পাবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, জেল খালের সীমানা নির্ধারণ ও সংরক্ষণের জন্য তারা ২০১০ সালে আদালতে মামলা করেছিলেন। ওই মামলা এখনও চলছে। যেকোনো উপায়ে নগরীর খালগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন। তবে দীর্ঘ চার বছর পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে ও নিজস্ব পরিচ্ছনতা কর্মীদের নিয়ে শুরু হয়েছে নগরীর জেল খাল সংস্কার কাজ। নগরীর নথুল্লাবাদ ব্রীজ থেকে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মরকখোলার পোল পর্যন্ত সংস্কার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ কাজে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়নি। বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি’র) পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, ঢাক ঢোল পিটিয়ে নয়। অনেকটা নিরবে খাল পরিস্কার ও সংস্কার শুরু করেছি। কোন প্রকল্প নয় সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ও নিজস্ব কর্মী নিয়ে এ কাজ চলছে।