জগদীশ সারস্বত স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফের দুর্নীতির অভিযোগ

কামরুন নাহার | ১৬:৪৭, জানুয়ারি ১৫ ২০২০ মিনিট

ভর্তির ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাত নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর জগদীশ সারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভর্তি ফি হিসেবে আদায় হওয়া ২০ লাখ টাকা নিজের কাছে রেখে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী ওই টাকা বিদ্যালয়ে ব্যাংকের হিসেব নম্বরে জমা দেয়ার। কিন্তু প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম কোন নিয়ম মানে না। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি না থাকায় নিজের ইচ্ছেমতো বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত, স্কুলের নারী শিক্ষক-কর্মচারীদের যৌন হয়রানীসহ নানা অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক শাহ আলমের বিরুদ্ধে। তবে তিনি দাবী করেছেন, বিদ্যালয়ের দৈনিক ব্যয় বহনের জন্য কিছু টাকা নিজের কাছে রেখেছেন। ওই টাকার পরিমান কত সেটা জানা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক শাহ আলম। বিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে, এ বছর স্কুলটিতে তৃতীয় থেকে নবম শ্রেনী প্রর্যন্ত প্রায় ২’শ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ভর্তি ফি, এক মাসের বেতন ও সেশন চার্জ বাবদ ২ হাজার ৮’শ টাকা করে রাখা হয়েছে। সে হিসাবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেনীতে সবমিলিয়ে অন্তত ৫’শ পুরানো শিক্ষার্থী রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকেও নতুন বছরে নতুন শ্রেনীতে ভর্তি হতে হয়েছে। এ সকল পুরানো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জন প্রতি ভর্তি ফি, এক মাসের বেতন ও সেশন চার্জ বাবদ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৬৪০ টাকা করে। সে হিসাবে পুরাতন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ আদায় হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে চলতি মাসে স্কুলের আয় হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। বিধি অনুযায়ী আয়ের অর্থ বিদ্যালয়ের নামে খোলা ব্যাংক হিসাব নম্বরের অনুকুলে জমা রাখার কথা। কিন্তু প্রধান শিক্ষক শাহ আলম এসব অর্থ ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিজের কাছে রেখেছেন। তবে একটি সুত্র জানিয়েছে এ নিয়ে কথা চাউর হওয়ায় চতুরতার আশ্রয় নিয়ে গত সোমবার মাত্র ৩০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম বলেন, যারা এসব অভিযোগ করছে তারা স্কুলের উন্নতি আর শান্তি চায় না। আমি টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছি। যেহেতু স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি নেই, তাই টাকা জমা দিলে আর উত্তোলন করা যাবে না। তাই স্কুলের দৈনন্দিন খরচের জন্য কিছু টাকা হাতে রাখা হয়েছে। তবে কি পরিমান টাকা ভর্তি বাবদ আয় হয়েছে, ব্যাংকে জমা পরিমান এবং নিজের কাছে কি পরিমান টাকা রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তার জানা নেই বলে জানান। এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির সাবেক ম্যানেজিং কমিটির আহবায়ক রাবেয়া খানম বিনা বলেন, আমরা প্রধান শিক্ষকের সার্বিক কার্যক্রমে খুবই বিব্রত। তার বিরুদ্ধে একটার পর একটা অভিযোগ আসছে। তিনি বলেন, দৈনন্দিন খরচ বহন করার জন্য ভর্তির এত বেশী অর্থ হাতে রাখার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। এটা একটা অযুহাত। তিনি আরো বলেন, মেয়রের প্রতিনিধি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিটু প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়ে বলেছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তা আমলে না নিয়ে বলেছেন তার কাছে মেয়রকে বলতে হবে। উল্লেখ্য গত বছরে এক অডিট আপত্তিতে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয় উঠে আসে। একই বছর যৌন হয়রানীসহ অসদাচরনের অভিযোগে এক যোগে বিদ্যালয়ের ১০ জনের অধিক নারী শিক্ষক-কর্মচারী কোতয়ালী মডেল থানায় সাধারন ডায়েরী করেন। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, অর্থ আত্মসাতের সুবিধার্থে প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। স্কুলটিকে তিনি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন। সব বিষয়েই তিনি স্বেচ্চাচারিতা করছেন। ম্যানেজিং কমিটি না থাকাকেই তারা এই সুযোগের একমাত্র কারন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তারা স্কুলের স্বার্থে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।