সেই ছাত্রলীগ নেতার সিন্ডিকেটেই আরও দুই নারীকে ধর্ষণ

কামরুন নাহার | ১৬:১৮, জানুয়ারি ১৫ ২০২০ মিনিট

ধর্ষণের বিরুদ্ধে উত্তাল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে চলছে বিক্ষোভ। স্থানীয়রা করছেন মানববন্ধন। সড়কগুলোতে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা । নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হওয়ার আগে আরও দু’জন পোশাককর্মী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। দুই পোশাককর্মী গণধর্ষণের মামলার আসামিরা তারাবো পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সোহানের সহযোগী। এই ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে রূপসী নিউ মডেল স্কুল মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় বেড়াতে এসে বরপা বাগানবাড়ির বাসায় ফেরার পথে মৈকুলী এলাকা থেকে দুই পোশাককর্মীকে তুলে নিয়ে যায় রূপসী প্রধানবাড়ি এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে আকাশ (১৯), ইমান আলীর ছেলে ইসমাইল প্রধান (২৩), জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ওয়াজেদ আলীর ছেলে আনিছুর রহমান (২৫) ও লাইছ উদ্দিনের ছেলে হাবুসহ (২৭) কয়েকজন। তারা সবাই তারাবো পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সোহানের সহযোগী। তারা দুই পোশাককর্মীকে তুলে নিয়ে রূপসী প্রধানবাড়ি বালুর মাঠে একজনকে গণধর্ষণ করে এবং আরেকজন দৌড়ে মসজিদের ছাদে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন গণধর্ষণের শিকার পোশাককর্মী। ঘটনায় জড়িত আকাশ, ইসমাইল ও আনিছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠালেও অন্য সহযোগীরা পলাতক রয়েছেন। পোশাককর্মী গণধর্ষণের বিচার শেষ না হতেই আট মাসের মাথায় গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) আবু সুফিয়ান, তৌসিফ, আফজাল ও তানভীরসহ আরও কয়েকজ সহযোগী গন্ধর্বপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দুদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। এদিকে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে তারা। সেইসঙ্গে ধর্ষকদের উপযুক্ত বিচার চেয়েছেন এলাকাবাসী। এ অবস্থায় রোববার (১২ জানুয়ারি) আবু সুফিয়ানসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে তৌফিক ও আফজাল নারায়ণগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এদের দু’জনের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরই মধ্যে স্কুলশিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার আসামি তারাবো পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সোহানকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আলম শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভুইয়া মাসুম। ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে- রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন তারাবো পৌরসভা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সোহানকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হলো। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, দু’টি ধর্ষণের ঘটনায় এজাহারনামীয় যেসব আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তাদের বাঁচাতে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল উঠে-পড়ে লেগেছে। সেইসঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতদের বাঁচাতেও মরিয়া তারা। তারাব পৌরসভা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানের সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে ফেনসিডিল, ইয়াবা, মদ ও বিয়ারসহ সব ধরনের মাদক ব্যবসায় জড়িত। ছিনতাই-ডাকাতি থেকে শুরু করে নানা অপরাধে জড়িত তারা। তাদের শেল্টার দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী স্থানীয় কয়েকজন নেতা। এসব নেতার মদদে ধর্ষকরা ধরা পড়ছে না। রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার পর শনিবার রাতে তৌসিফ ও আফজালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে রোববার মামলার প্রধান আসামি তারাবো পৌরসভা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সোহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে দু’জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ওসি মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, এর আগে পোশাককর্মীকে গণধর্ষণের ঘটনায় কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। বাকিরা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।