বাড়ির পাশে মিলল মাটিচাপা দেয়া অর্ধগলিত হোসনার খোঁজ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৭:০৮, সেপ্টেম্বর ১৬ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ স্বামীর বাড়ি থেকে নিখোঁজের ৫১ দিন পর মাটিচাপা দেয়া অবস্থায় হোসনা বেগম নামে এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে পুলিশ আবাদি জমিতে মাটিচাপা দেওয়া লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আজ বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হোসনার স্বামী আনারুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যে কালো কাপড় পরানো অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের সন্তোষপুর আকন্দপাড়ায়। এর আগে গত ২৮ আগস্ট মিঠাপুকুর থানায় হোসনার স্বামী আনারুল হক ও তার মা আনোয়ারা বেগমের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হোসনার বাবা হাসমত আলী। হোসনার বাবার বাড়ি বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নে। গত ২৮ জুলাই বাবার বাড়ি থেকে হোসনা স্বামীর বাড়িতে যান। গত ২৯ আগস্ট কালের কণ্ঠের অনলাইন সংস্করণে ‘জামাই বাড়ি গিয়ে দেখলেন একমাস ধরেই মেয়ে নিখোঁজ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পর থেকে পুলিশ এ নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। অবশেষে জীবিত নয়, মাটিচাপা লাশ উদ্ধার হলো হতভাগী হোসনার। পরিবার ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের হাসমত আলীর মেয়ে হোসনা বেগম। প্রায় দেড় বছর আগে মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর গ্রামের আকমল হোসেনের ছেলে আনারুলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই হোসনার ওপর নেমে আসে নানা অত্যাচার। কথায় কথায় মারধর শুরু করেন আনারুল। গত ছয় মাস আগে হোসনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে সামান্য কথার অজুহাতে কিলঘুষি মারলে হোসনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। শত নির্যাতনের পরেও স্বামীর সংসার আকড়ে ছিল হোসনা বেগম। গত মাসের ২৮ জুলাই বাবার বাড়ি থেকে হোসনা স্বামীর বাড়িতে যান। এর পর থেকে হোসনার সঙ্গে বাবার বাড়ির লোকজনের যোগাযোগ ছিল না। গত ২৬ আগস্ট বদরগঞ্জ থেকে মেয়ের খোঁজে জামাইয়ের বাড়িতে যান হোসনার বাবা হাসমত আলী। বাড়িতে গিয়ে দেখেন গোটা বাড়িতে তালা মারা। কোথাও বাড়ির লোকজন নেই। জামাই আনারুলের মোবাইল ফোনও বন্ধ। পরে পাশের বাড়িতে আনারুলের মা আনোয়ারা বেগমের খোঁজ মেলে। হাসমত জানতে চান, বাড়িতে তালা মারা কেন। তার মেয়েই বা কোথায়। এতে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেনি আনোয়ারা। পরে সন্দেহ হলে আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে হাসমত জানতে পারেন, কিছুদিন আগে হোসনাকে বেদম মারপিট করা হলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর থেকে আর তার দেখা পাওয়া যায়নি। এতে হাসমত আলীর সন্দেহ হয় মেয়েকে হত্যা করে লাশ গুম করে রাখা হয়েছে। মেয়ের সন্ধান পেতে হাসমত আলী ওই এলাকার ইউপি মেম্বার সাজু মিয়ার মাধ্যমে গত শুক্রবার সেখানে সালিস বৈঠক ডাকেন। কিন্তু ওই সালিস বৈঠকে আনারুল ও তার মা আনোয়ারা বেগম হাজির হননি। এমনকি আশপাশের কোথাও তাদের খুঁজেও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ওইদিন মিঠাপুকুর থানায় জামাই ও তার মায়ের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পিতা। হাসমত আলী বলেন, মেয়ের সুখের জন্য বিয়েতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা যৌতুক দেই। এর পর থেকে আনারুল কথায় কথায় মেয়েকে নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করত। ভয়ে সে স্বামীর বাড়ি যাইতে চাইত না। আর এখন মাটি চাপা মেয়ের লাশ পেলাম। আমি ঘাতক জামাই ও তার মায়ের ফাঁসি চাই। ওই এলাকার ইউপি সদস্য সাজু মিয়া বলেন, বাড়ির পাশে একটি আবাদি জমি থেকে গৃহবধু হোসনার মাটি চাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মিঠাপুকুর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক আজাদ মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করা হয়। কিন্তু ঘাতক আনারুল এতো দিন পলাতক ছিল। তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাশের নবাবগঞ্জ উপজেলায় আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য মতে মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়। মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান জানান, ঘাতক স্বামী আনারুলকে গ্রেপ্তার করার পর লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রংপুর মর্গে পাঠানো হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অন্য যারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় নেওয়া হবে।