ভূয়া পরিচয়পত্র তৈরিতে ১ লাখ টাকা নিতেন ইসির দুই কর্মী

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:২৯, সেপ্টেম্বর ১৩ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেননি, কিংবা ক্রেডিট কার্ডের টাকা পরিশোধ করেননি এমন লোকজন ছিল চক্রটির গ্রাহক। তাঁদের নতুন করে ঋণ পাইয়ে দিতে নতুন করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিত তারা। গত শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) লালবাগ বিভাগ এই চক্রের পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের দুজন নির্বাচন কমিশন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁরা হলেন মো. সুমন পারভেজ, মো. মজিদ, সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর, মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, সুমন পারভেজ ও মজিদ ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দেবেন, এই শর্তে একেক জনের কাছ থেকে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিতেন। ঋণ হাতে পাওয়ার পর তাঁদের দিতে হতো মোট টাকার ১০ শতাংশ পর্যন্ত। তদন্তে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, যাঁরা দ্বিতীয় আরেকটি পরিচয়পত্র করিয়েছেন তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা রয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২০-২৫টি পরিচয়পত্র জব্দ করেছে পুলিশ। এসব পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তাঁরা সিটি ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন। মো. মিল্টন নামের এক ব্যক্তি নর্থ সাউথ সড়কের সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, সুমন পারভেজ সাত-আট বছর আগে ‘ভেরিফিকেশন ফার্মে’ কাজ করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল কেউ ঋণ পাওয়ার যোগ্য কি না, তা যাচাইবাছাই করা। পরে চাকরি ছেড়ে এই কাজে যুক্ত হন। এই চক্রের অপর সদস্য মজিদের ঋণের দরকার পড়ায় তিনি সুমন পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর দু’জন মিলে এই কারবারে নামেন। কারও ঋণ প্রয়োজন হলে তাঁরা নির্বাচন কমিশনের খিলগাঁও অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর ও গুলশান অফিসের মো. আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এই দুজন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন। একটি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র কী করে তৈরি করা যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে আসামিদের উদ্ধৃত করে পুলিশ জানায়, অপারেটররা এ জন্য একটি কৌশল অবলম্বন করেন। যাঁরা দ্বিতীয় পরিচয়পত্র করিয়েছেন, তাঁরা জন্মসনদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে নাগরিকত্বের সনদ ও বিদ্যুৎ বিল ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের হাতে পৌঁছে দিতেন। তাঁরা অফলাইনে সব তথ্য, আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে পরিচয়পত্র অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। অনুমোদন হতে সময় লাগত সর্বোচ্চ ১৫-২০ মিনিট। তারপরই নতুন আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র চক্রটির ঋণ নিতে ইচ্ছুক এমন লোকজনের হাতে তুলে দিতেন।