নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত দপদপিয়া সেতুর নিচের নদীর দুই পাশেই গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ স্থাপনা। সড়ক ও জনপদ বিভাগের বড় বাবু (কেরানি) সাথে মাসিক মাসোয়ারা চুক্তিতে সুরুজ মোল্লা ও জাকির গংরা গড়ে তুলেছেন এ অবৈধ স্থাপনা। এপার-ওপার মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা-পাকা ঘর উঠিয়ে ভাড়া দিয়ে মাসে ৬শ/১হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর এ ভাড়ার একটি অংশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের বড় বাবুদের মাসোয়ারার খাতায় জমা দিতে হয়। এ নিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাসুদ বলেন, চলতি মাসেই এ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে এবং সে লক্ষ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ নিয়ে আমার দপ্তরের কেউ যদি জড়িত থাকে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু ব্রিজটির দু’পার্শ্ব এবং স্প্যানের নিচের ফাঁকা জায়গাগুলো দখল করে এভাবে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠলো কিভাবে জানতে চাইলে এর কোন সদুত্তর মেলেনি।
এ নিয়ে একাধিক সূত্র জানায়, সেতু দপ্তরটির বড় বাবু (কেরানি) হুমায়ুন কবিরের সাথে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় এ অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। তবে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি কোন আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত না এবং যদি কেউ আমার কথা বলে থাকে সে না জেনে ভুল বলেছে। তবে আমাদের কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ হয়েছে অচিরেই ভেঙ্গে ফেলা হবে অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু আপনার অফিসের মাত্র কয়েক গজের মধ্যেই এই অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে তা আপনার দৃষ্টিগোচর হয়নি জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হবে। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, নগরীর ২৪নং ওয়ার্ডস্থ দপদপিয়া ব্রিজের নিচের খালি জায়গা দখল করেছে জাকির হোসেন খান। ব্রিজটির স্প্যানের নিচের ওই জায়গায় তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে আরো দোকান ঘর ও গোডাউন। এ নিয়ে ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর আনিসুর রহমান শরিফ বলেন, আমি একাধিকবার অবৈধ দখলদারীদের দোকান ঘর উঠানোর জন্য নিষেধ করেছি। এরপরেও অদৃশ্য ক্ষমতার কারণে দখলদাররা তাদের দোকান নির্মাণ করে। এখন যদি আপনাদের লেখনির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এ অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেয় তাহলে আমি অনেক খুশি হবো এবং পাশাপাশি আমি মিলাদ পড়াবো। এদিকে সেতুটির নিচে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী জাকির বলেন, ওখানে আমি একাই ঘর তুলিনি জামাল গাজি ও খোকন গাজিরাও ঘর তুলেছে। তাদের অবৈধ স্থাপনাগুলো আপনারা দেখছেন না কেন? আপনার কথা অনুসারে তাদের স্থাপনাগুলো অবৈধ হলে আপনারটা তো অবৈধ এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর মেলেনি। এমন তথ্য রয়েছে যে, আপনার নেতৃত্বে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে যোগসাজোশ করে মাসোয়ারার ভিত্তিতে এ ঘর উঠানো হয়েছে। এসময় দপদপিয়া সেতুর নিচে অবৈধ ঘর উত্তোলনকারী জাকির বলেন, আমরা উঠিয়েছি আপানাদের দরকার কি? আর আপনাদের কাছে এ ব্যাপারে কি বলবো? সেতু অফিসতো আমাদেরকে কিছু বলে না তাহলে আপনারা কেনো জিজ্ঞেস করছেন? অপরদিকে অত্র এলাকার একাধিক স্থানীয়সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ অফিস যদি না জানে তাহলে বছরের পর বছর এই অবৈধ স্থাপনাগুলো উঠলো কি করে। তাদের অফিসও ব্রিজের টোল ঘরের কাছেই তারা কি এই অবৈধ স্থাপনা দেখে না? মূলতো মাসতুতো ভাই সম্পর্কে চলছে সরকারি জায়গা দখলের মহোৎসব। এতো গেলো ব্রিজটির এপারের চালচিত্র।
ওপারেও ভার্সিটির সামনে থেকে নদীর পাড়ে ব্রিজের নিচের খালি জায়গাগুলোও দখল হয়ে গেছে সুরুজ মোল্লা ও তার স্ত্রীর বড় ভাই বাহারের নেতৃত্বে। অত্র এলাকায় প্রায় ৩০টি দোকান ঘর রয়েছে ব্রিজের স্প্যানের মধ্যের জায়গায়। এ নিয়ে একাধিক দোকানিরা জানায়, এখানে যতগুলো দোকান দেখেন প্রায় প্রত্যেকেই মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে দোকান ভাড়া নিয়েছে। প্রতি মাসে ৭শ’ থেকে হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয় এবং ভাড়ার টাকা সুরুজ মোল্লা বাহিনীর লোকজন উত্তোলন করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাকির ও সুরুজ গংরা সড়ক ও জনপদ অফিসে এককালীন টাকা দিয়ে ব্রিজের নিচের ফাঁকা জায়গা অবৈধ দখল নিয়ে এসব দোকান ঘর ভাড়া দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে একাধিক দোকানীরা বলেন, আরে ভাই এটাতো সহজ হিসেব। ব্রিজটার (সড়ক ও জনপথ) অফিস ওপার টোল ঘরের সাথেই। সেখানে ৫/৭ জন জনবল রয়েছে তারা কি দেখে না, যে দোকানগুলো উঠানো হয়েছে তাদের জায়গায়। কই কিছুইতো বলে না, বছরের পর বছরতো এভাবেই চলছে। মূলত এরা দেখেও না দেখার ভান করে সুবিধা নিচ্ছে। দপদপিয়া ব্রিজের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণকারী সুরুজ মোল্লা ও তার আত্মীয় বাহারের ০১৭১৬৬২১৭৯৩ নাম্বারে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, অত্র এলাকায় সরজমিনে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।