বরিশাল সদর
সরকারি বরিশাল কলেজ
নাম পরিবর্তনের আন্দোলনে আতংকিত নগরবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনাকালীন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বরিশালের বিভিন্ন সংগঠন। করোনাকালীন সময়ে এধরণের কর্মসূচী মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছেনা। এতে নগরীর সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। আন্দোলনে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত হচ্ছেনা বরং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। শত শত মানুষ ও শিশুদের মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এ কোন ধরনের আন্দোলন? কিসের জন্য এ আন্দোলন? কলেজটি যে নামে তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছ সে নামে দাঁড়িয়ে থাকলে কি বা এমন ক্ষতি? এমনি এক প্রতিবাদী কন্ঠে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন নগর আ’লীগ সভাপতি ও বরিশাল কলেজের সাবেক ভিপি এ্যাড. একে এম জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, এটি একটি পুরানো কলেজ, লাখ লাখ শিক্ষার্থী এখান থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করেছে। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এর নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবীতে মাঠে নেমেছে। এছাড়া সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তনের দাবী দুরভিসন্ধিমুলক। এনিয়ে তিনি আরো বলেন, ১৯৬৩ সালে ৪০ লাখ ২ হাজার টাকায় সরকারের নিলাম সম্পত্তি কিনে নিয়েছে বরিশাল কলেজ। এককথায় এটি কলেজটির খরিদকৃত সম্পত্তি। আর বরিশালের সাথে এই কলেজের একটি হৃদয়ের সম্পর্ক রয়েছে এবং এটির দ্বারা বরিশালের একটি পরিচিতি দেশ বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু একটি সংগঠন এই কলেজের নাম পরিবর্তনের দাবীতে আন্দোলন করছে। এসময় তিনি আরো বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। গণস্বাক্ষর কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। আর যারা বরিশালের ঐতিহ্য বরিশাল কলেজের নাম পবির্তন করার পায়তারা করছে তারা এদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চা করে। বরিশালের রাজনৈতিক শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার অপচেষ্টা করছে এই অনাহুত দাবীর আন্দোলন করে। তবে আমরাও বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে সচেষ্ট আন্দোলন গড়ে তুলছি এবং এর বিরুদ্ধে যেকোন কর্মসূচীর প্রতিবাদ করা হবে। এছাড়া এদের সাথে এদেশের মাটি ও মানুষের কি সম্পর্ক রয়েছে তা তাদের কর্মসূচি দেখলেই বোঝা যায়। কর্মসূচীতে ৫০/৬০ জনের বেশি লোক হয়না। আর দেখবেন ব্যানার সর্বস্ব কতগুলো দল প্রচার করে একটি দলের একজনও পাওয়া যায়না। শুধু তাই নয়, কলেজটির নাম পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করা অনেকে বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে শিশুদের ব্যবহার করেছে, যা সত্যিই অমানবিক ও অশোভন। এদিকে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে নগরীতে। পুরানো এ কলেজটির নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবীতে অব্যাহত কর্মসূচীর গণস্বাক্ষর কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়াও পড়েছে। টাউন হল চত্বরে সকাল থেকেই বরিশাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নিজ নিজ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেই গণস্বাক্ষর নিচ্ছেন সাধারণ মানুষের। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বরিশাল মহানগর কমান্ডের সাংগঠনিক কমান্ডার এনায়েত চৌধুরী বলেন, আমরা চাই বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত থাকুক এবং এটির সাথে মুক্তিযুদ্ধসহ বরিশালের অনেক ঐতিহ্য ও স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আর এই করোনাকালীন সময়ে এ ধরণের কর্মসূচী মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছেনা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে যেহেতু সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতের একটি ব্যাপার রয়েছে। তিনি বলেন, মহানগর আ’লীগ ও চরমোনাই সংগঠনও বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে মাঠে নেমেছে। চরমোনাই সংগঠন তো কঠোর কর্মসূচী দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে যদি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়। তবে তিনি বলেন, সরকারি বরিশাল কলেজের নাম যদি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধে বরিশালে স্মরনীয় যে কোন ব্যক্তির নামে করতে হবে। জেলা প্রশাসকসহ শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়ে বিবৃতিতে চার মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলো-মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিনাঞ্চলের জন্য গঠিত নবম সেক্টরের কমান্ডার মেজর (অব.) এমএ জলিল। এর পরের নামটি হলো-মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত মুজিব বাহিনীর প্রধান বর্তমানে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরীবিক্ষন কমিটির আহবায়ক (মন্ত্রী মর্যাদার) আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির। এরপরের জন হলেন বীর প্রতীক রফিকুল ইসলাম বাদশা। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত সুইসাইডাল স্কোয়াডের প্রধান রেজাই সত্তার ফারুক। এই চার বীর মুক্তিযোদ্ধার যে কোন একজনের নামে নামকরন করার জন্য দাবী জানিয়েছি। জানাগেছে, স্থানীয় সংস্কৃতিজনদের অনুরোধে সাম্প্রতি ঐতিহাসিক সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ নামকরণের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে বরিশাল জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী এমন পরিবর্তনের বিষয়ে সুপারিশসহ মতামত চেয়ে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে চিঠি প্রেরণ করে মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পরই প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। চলতি মাসের ১৫ তারিখ সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ নামকরণের পক্ষে-বিপক্ষে একই স্থানে একই সময়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল থেকে দুপরে পর্যন্ত নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে পরস্পর বিরোধী দুটি কর্মসূচি পালিত হয়। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই কিছুটা উত্তপ্ত ছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র সদর রোড এলাকা। আর একারণে সকাল থেকেই টাউন হলসহ সদর রোড কেন্দ্রিক বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে বরিশাল কোতায়ালি থানা। এর আগে ওই স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানের ডাক দেয় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও সমমনা দলগুলো। আর এ কর্মসূচি ঘোষণার খবর পেয়ে আধা ঘন্টার ব্যবধানে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও সমাবেশের ডাক দেয় সরকারি বরিশাল কলেজের পুরাতন ও নতুন শিক্ষার্থীরা। সুত্রে আরো জানা গেছে, বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে ক্ষমতাসীন দলের সাথে বিএনপির নেতারাও যোগদান করে। মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে ক্রমশ নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কলেজটি সরকারীকরণের পরে ‘সরকারি বরিশাল কলেজ’ নামে স্বীকৃত হয়। ১৯৬৩ সালে যখন এই কলেজটি নাইট কলেজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখনও ছিল বরিশাল নাইট কলেজ। স্বাধীনতার পরে এটি ডে এবং নাইট কলেজ রুপান্তরিত হয়। এখন এই কলেজটি বাংলাদেশ জুড়ে বরিশাল কলেজ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।