বরিশাল
বরিশালের জনপদে ফের নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারার আনাগোনা
মহামারি করোনার ভয়ে-আতঙ্কে অধিকাংশ মানুষ ঘরমুখি। গোটা দেশব্যাপি চলছে এক ধরনের গভীর নিরবতা। পুলিশ প্রশাসন সাধারন মানুষকে সেবা দানের পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় ব্যস্থ রয়েছে। ঠিক এমন সুযোগে বরিশালের সর্বহারা অধ্যুষিত উজিরপুর এবং তার পাশ্ববর্তী গৌরনদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সদস্যরা গোপন বৈঠক করে সু-সংগঠিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি ইদানিং প্রায়ই গভীর রাতে গুলির শব্দ শুনতে পান ওইসব অঞ্চলের বাসিন্দারা।
অতি সম্প্রতি সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সাবেক আঞ্চলিক নেতারা চারটি স্পর্টে জড়ো হয়ে গোপন বৈঠক করেছে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আবার সর্বহারা কামরুল গ্রুপের তৎপরতায় সর্বহারা জিয়া গ্রুপের সাবেক নেতাদের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জিয়া গ্রুপের নেতারা কামরুল গ্রুপের নেতাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করছে। পাশাপাশি তারাও নতুনভাবে মাঠে নামতে এক ধরনের তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি। তবে পুলিশের ভাষ্য মতে, সর্বহারা বলতে কিছু নেই, কতিপয় খারাপ মানুষ আগেও সর্বহারার নামে চুরি ডাকাতি করতো। হয়তো ওই গ্রুপগুলো চুরি ডাকাতির জন্য সংগঠিত হতে পারে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময়ে বরিশালের সর্বহারা খ্যাত উজিরপুর, বাবুগঞ্জ ও গৌরনদী উপজেলার মানুষ ছিলো সর্বহারার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ভীত সন্ত্রস্থ। সর্বহারা সন্ত্রাসী নেতাদের কর্মকান্ডের কাছে জিম্মি ছিলো সাধারন মানুষ। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহনের পরে র্যাবের সর্বহারা বিরোধী অভিযানে এ অঞ্চলের সর্বহারা কামরুল ও জিয়া গ্রুপের প্রভাবশালী আঞ্চলিক নেতারা ক্রসফায়ারে নিহত হন। এ সময় জীবন রক্ষায় সর্বহারা নেতারা আত্মগোপনে চলে যায়। ২০০৮ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পরে সর্বহারা নিধন নীতিতে কঠোর অবস্থান নেন। ফলে পরবর্তি সময়ে এ অঞ্চলের সর্বহারা নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সকলেই জীবন রক্ষায় আন্ডার গ্রাউন্ডে জীবন যাপন করেন। আর সর্বহারা মুক্ত হয়ে বরিশালের সর্বহারা অধ্যুষিত সন্ত্রাসী রক্তাক্ত জনপথ উজিরপুর, গৌরনদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা শান্তির জনপদে পরিনত হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহনের পরে একাধিক শীর্ষ সর্বহারা নেতা ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন। সর্বহারা নেতারা কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ইউপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। উজিরপুর ও বাবুগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সর্বহারা কামরুল গ্রুপের তৎপরতায় সর্বহারা জিয়া গ্রুপের সাবেক নেতাদের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জিয়া গ্রুপের নেতারা কামরুল গ্রুপের নেতাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করছে এবং তারাও (জিয়া গ্রুপ) সাবেক নেতাদের মধ্যে এক ধরনের যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। সর্বহারা কামরুল ও জিয়া গ্রুপের তৎপরতা এবং সু-সংগঠিত হওয়ার আগেই প্রশাসনের নজরদারি দেয়ার জন্য অভিমত ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুধীজন নেতৃবৃন্দ। সর্বহারা কামরুল গ্রুপের নেতাদের দফায় দফায় বৈঠক করা ও জিয়া গ্রুপের নজরদারির বিষয়টি খতিয়ে দেখে আগে ভাগে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধি বরিশালের পুলিশ সুপার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন। গৌরনদীর সাকোকাঠি, আধুনা, মহীষা গ্রামের এলাকাবাসি জানান, গত কয়েক দিন ধরে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সাবেক আঞ্চলিক নেতাদের পদচারনায় গোটা এলাকার মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সর্বহারা কামরুল গ্রুপ সু-সংগঠিত হওয়ার জন্য ৬ জুন থেকে ১৩ জুন চারটি স্থানে গোপন বৈঠক করেছে। গত ৬ জুন প্রথম বৈঠকে বসে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সাবেক নেতা, সাবেক এক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতার মল্লিকস্থ গ্রামের বাড়িতে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আঞ্চলিক নেতা সুভাষ চন্দ্র, এক সময়ের দুর্ধর্ষ সর্বহারা নেতা উজিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী শাহজিরা গ্রামের হুমায়ুন কবির, ইমাম হোসেন ও আজিজুল মোল্লাসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন সর্বহারা নেতাকর্মী। গত ৯ জুন সকালে বৈঠক বসে সরিকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সর্বহারা কামরুল গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা সুভাষের আধুনাস্থ গ্রামের বাড়িতে। ওই দিন সন্ধ্যায় তৃতীয় বৈঠক বসে সাকোকাঠি শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের পেছনে। সবশেষ গত ১৩ জুন সন্ধ্যায় বৈঠক করে উজিরপুরের সীমান্তবর্তী সর্বহারা নেতা আজিজুল মোল্লার মহিষাস্থ গ্রামের বাড়িতে।