বরিশাল
বরিশালের আলোচিত রাজনৈতিক সন্ত্রাস মাসুম গ্রেপ্তার
বরিশাল শহরের আলোচিত রাজনৈতিক সন্ত্রাস মাসুদ হাওলাদার মাসুমকে অবশেষে গ্রেপ্তারে সফলতা পেয়েছে পুলিশ। শহরের ১০ নং ওয়ার্ডের ভাটারখাল কলোনীর এই সন্ত্রাসীকে একটি মামলায় গত শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ হামলার শিকার হয়। একাধিক মামলায় অভিযুক্ত ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুমের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ অন্তত তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। সেই ঘটনায় পুলিশ স্ত্রী রিমি বেগম, ভাই সোহেল হাওলাদার, বোন শিল্পি এবং সহযোগী রিফাতকে আটক করলেও পালিয়ে যায় মাসুম। তবে সেই ঘটনার পরে ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার আগেই বহুমুখী অপরাধে জড়িত মাসুমকে রোববার গভীর রাতে পুলিশ তাদের বাগে নিয়ে আসল।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করে, মাসুম ১০ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের পদধারী নেতা হলেও আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি দলটির নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় ছিলেন। বিতর্কিত এই ছাত্রনেতা গত বছরের ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকারের পতনের পরে কীর্তনখোলা নদীর পশ্চিম তীরবর্তী ভাটারখাল কলোনীসহ গোটা ওয়ার্ডে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন। এনিয়ে দ্বন্দ্বে স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী জিদনী শেখকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া দেওয়া হয়। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী কাঁচাবাজরে চাঁদাবাজি, ছিনতাই এমনকি মাদক বাণিজ্যে জড়িত থাকারও প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, ত্রিশোর্ধ্ব সন্ত্রাসী মাসুমের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে মারধর করাসহ খোদ আদালত সম্মুখে মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ আছে। এসব ঘটনাবলীতে তার বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
একাধিক মামলার আসামি মাসুমের সর্বশেষ সন্ত্রাসে গত রোববার রাতে আক্রান্ত হন বরিশাল কোতয়ালি থানাধীন স্টিমারঘাট ফাঁড়ি পুলিশের এসআই গোলাম মো. নাসিমসহ তিন পুলিশ সদস্য। পুলিশ জানায়, ওই দিন রাতে মাসুমকে গ্রেপ্তার করতে ভাটারখাল এলাকায় তার বাসায় যান এসআই নাসিমসহ বেশকজন পুলিশ সদস্য। এসময় পুলিশ সদস্যদের ওপর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলে পড়েন ছাত্রদল নেতা। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন এবং মাসুম এসআই নাসিমের হাত কামড়ে পালিয়ে যান।
পুলিশ এই ঘটনায় তার স্ত্রী, ভাই-বোন এবং সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। এবং পুলিশ বাদী হয়ে মাসুমকে প্রধান অভিযুক্ত করে ৭০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে ভাটারখাল এলাকার একটি বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। পুলিশও ছিল তোকে তোকে, কখন রাজনৈতিক সন্ত্রাস মাসুমের টুটি চেপে ধরা যায়।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আলোচিত সন্ত্রাসী মাসুমকে গ্রেপ্তারে স্টিমারঘাট ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ নাসিম সাহসী ভুমিকা রাখেন। বিভিন্ন মাধ্যম নিশ্চিত হয়ে রোববার গভীর রাতে ভাটারখাল এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন তিনি। অবশ্য গত শুক্রবার এই পুলিশ কর্মকর্তার হাত কামড়েই পালিয়ে গিয়েছিলেন মাসুম।
রাজনৈতিক সন্ত্রাস মাসুমের ৫ আগস্ট পরবর্তী বেশকিছু সন্ত্রাসী কার্যকলাপ তুলে ধরে শনিবার গভীর রাতে এই ‘ভাটারখালে ছাত্রদল নেতা মাসুমের ধারাবাহিক সন্ত্রাসে বিএনপির বদনাম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে বরিশালটাইমস। পুলিশ জানিয়েছে, এই সংবাদটি তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়। মূলত এরপরে এই মূর্তিমাণ সন্ত্রাসীকে ধরতে মাঠপুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মাসুমের এই গ্রেপ্তার খবরে ওয়ার্ড বিএনপির নেতারাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিএনপি নেতা জানান, মাসুমকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আগামী বুধবার ওয়ার্ডবাসী মানববন্ধন করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল। এরই মধ্যে রোববার রাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে, এই খবর ভাটারখালবাসীর জন্য খুশির বটে।
কোতয়ালি থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের ওপর হামলার মামলায় মাসুমকে দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশনা আছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ।
ভাটারখালের ত্রাস মাসুমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ পেয়েছে। সেই ভিডিওর নিচে অসংখ্য মানুষ কমেন্ট করে তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলে ধরছেন এবং তাকে গ্রেপ্তার করায় পুলিশকে সাধুবাদ জানানো হচ্ছে।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, মাসুম রোববার রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে তার অপরাধের জগতের নিয়ন্ত্রণ নিতে বেশ কয়েকটি গ্রুপ মরিয়া হয়ে উঠেছে। সদর রোডের একটি গ্রুপ মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে সিটি মার্কেটসংলগ্ন সব্জির বাজারে আতঙ্ক তৈরি করেছে।’


