বরিশাল
চরকাউয়ায় অধিগ্রহণের টাকায় মালিকের পোয়াবারো, ভাড়াটিয়ার সর্বনাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সদর উপজেলার পূর্ব চরকাউয়া গ্রামে চুক্তি অনুযায়ী ভাড়াটিয়ার গড়া স্থাপনাসহ অধিগ্রহণের টাকা পেয়ে ঘর মালিকের যেন পৌষ মাস। পতিত জমির চেয়ে কয়েকগুণ টাকা বেশি পেয়েছে যেই স্থাপানার কারণে সেই ভাড়াটিয়া ঘুরছে দ্বারে দ্বারে।
ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীর নাম মতিউল ইসলাম রানা। এ বিষয়ে একাধিকবার স্থানীয় শালিসে সামাধানের সিদ্ধান্ত হলেও ঘর মালিক তৈয়ব গাজী তা মানছেন না। উল্টো ভাড়াটিয়া রানাকে সমঝোতার জন্য বরিশাল হাটখোলা এক আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠানে বসে হুমকি দিয়েছে ঘরমালিক তৈয়ব। এসব কথা উল্লেখ করে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী রানা।
বিষয়টি মিমাংসার জন্য বসা অন্যতম শালিস দোলোয়ার শিকদার বলেন, ব্যবসায়ী রানা তার টাকা দিয়ে ওখানে স্থাপনা করেছেন সত্য। সেই অনুযায়ী তার চুক্তিও আছে। কিন্তু ঘর মালিক অধিগ্রহণে বড় অংকের টাকা পাওয়ার পরেও কেন ভাড়াটিয়ার পাওনা চুকিয়ে দিচ্ছেনা জানিনা।
আরেকজন শালিস মনির গাজী বলেন, ভাড়াটিয়াকে পাওনা বুঝিয়ে দিতে রাজিও হয়েছিলেন ঘরমালিক তৈয়ব গাজী। কিন্ত ভাড়াটিয়া রানা কিছু বিষয়ে অতিরিক্ত টাকা দাবী করায় বিষয়টি সুরাহা হয়নি।
জানা গেছে, পূর্ব চরকাউয়ায় তৈয়ব গাজীর একটি অসম্পূর্ণ স্থাপনা ২০১৯ সালে ১০ বছর মেয়াদী ভাড়া চুক্তির মাধ্যমে নির্মাণ সম্পন্ন করেন ব্যবসায়ী রানা। চুক্তি মোতাবেক স্থাপনা নির্মাণ বাবদ খরচের টাকা ভাড়াটিয়া বহন করবে এবং সেই টাকা ফেরতযোগ্য জামানত হিসেবে ঘরমালিকের কাছে গচ্ছিত থাকবে। মেয়াদান্তে ঘর ছাড়ার সময় জামানতের সম্পূর্ণ টাকা ঘর মালিক ভাড়াটিয়াকে ফেরৎ দিতে বাধ্য থাকবেন। এর মধ্যে ২০২২ সালে সরকার এই ভুমি ও স্থাপনার একটি অংশ অধিগ্রহণ করে। তাতে জমির মালিক ক্ষতিপূরণ বাবদ সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা পায়। তখন স্থানীয় মধ্যস্ততাকারীদের মাধ্যমে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, যে পরিমাণ ঘর ভাঙ্গা হয়েছে সেই হারে জামানতের টাকা থেকে ভাড়াটিয়াকে ১লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হবে এবং মাসিক ভাড়া সেই হারে কমবে। কিন্তু ঘরমালিক তৈয়ব গাজী টাকা পরিশোধ না করে ঘর ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। অথচ ঘরের মেয়াদ চুক্তি অনুযায়ী তখনও ০৫ (পাঁচ) বছর বাকি।
এদিকে ব্যবসায়ী রানা মেয়াদের আগে ঘর ছাড়তে রাজি না হওয়ায় ঘর মালিক তার উপরে ক্ষিপ্ত হতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ আগস্ট হাটখোলা কাঠেরগোলা নামক স্থানে ঘরমালিক তৈয়বের আত্মীয় সোহরাব হোসেনের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আলোচনায় ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিত অনেক লোকের সামনে ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এতে ব্যবসায়ী রানা রাজি না হওয়ায় তাকে ঘর থেকে নামিয়ে দিয়ে দোকান তালাবদ্ধ করার হুমকি দেয়। বিষয়টি জানিয়ে ২৭ আগস্ট কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ব্যবসায়ী রানা। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই মনোসিজ মজুমদার ব্যবসা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় ভাড়াটিয়ার অবস্থানের বৈধতা নিশ্চিত হয়ে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে মন্তব্য করেন যে, ঘরের মালিক এখন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তৈয়ব গাজীর হুমকি অবৈধ। পরবর্তীতে বিবাদী পক্ষকে থানায় ডেকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
ব্যবসায়ী মতিউল ইসলাম রানা বলেন, এমতাবস্থায় উক্ত স্থাপনা সরকার যেকোনো সময় ভেঙ্গে দিলে আমার রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া তৈয়ব গাজী ঋণখেলাপীর দায়ে তার স্থাপনাটি সোনালি ব্যাংক চকবাজার শাখায় বাজেয়াপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে সমযোতা চুক্তি করে অভিযুক্তের পক্ষে কিস্তি দেওয়া শুরু করি এবং পরবর্তীতে ঋণ মওফুকে অফিসিয়াল সহায়তা করি। তাই ভবিষ্যতে সরকারি কাজে প্রয়োজন না হওয়া পর্যন্ত সেখানে নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনার করতে চাই এবং আমার জামানতের প্রাপ্য টাকা আমি ফেরৎ চাই। কেননা আমার অর্থায়নে ঐ স্থাপনা নির্মাণের কারনে জমির মূল্যের কয়েকগুন টাকা পেয়েছে তৈয়ব গাজী। এখন আমার টাকাটা অবশ্যই আমি প্রাপ্য।
এ বিষয়ে ঘর মালিক তৈয়ব গাজী বলেন, অসম্পূর্ণ স্থাপনার বাকি কাজ করে দোকান নিয়েছে রানা। যার চুক্তিপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। জমিটি একোয়ার হওয়ার পর এখন সেই টাকা থেকে রানা দাবি করে কিভাবে। অনেক বার শালিসি হয়েছে কিন্তু সমাধান হয়নি। প্রয়োজনে আমিও মামলা দিব। তাছাড়া হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তৈয়ব গাজী।



