বরিশাল
অবৈধভাবে ছাত্র হোস্টেল ভাড়া দিয়ে অধ্যক্ষের রমরমা বানিজ্য
দুর্নীতিতে ভরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) বর্তমানে নানা ধরনের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদেশগামী কর্মীদের প্রি-ডিপার্চার ওরিয়েন্টেশন কোর্সের সময় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার নামে অংশগ্রহণকারী অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে হোস্টেল ভাড়া আদায়, ভাড়ার অর্থের কোন রশিদ প্রদান না করা, রেস্ট হাউজের আয়ের তথ্য গোপন, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ঘাটতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অনিয়মের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোঃ গোলাম কবির। ২০১৯ সালে বরিশাল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)’তে যোগদানের পর থেকেই শুরু হয়েছে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মান রক্ষা এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্দেশ্যে গঠিত এই প্রতিষ্ঠান আজ প্রশ্নবিদ্ধ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদেশগামী কর্মীদের সাময়িক আবাসনের জন্য টিটিসির ছাত্র হোস্টেল ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ এসব হোস্টেল মূলত দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে অধ্যয়নরত ছাত্রদের জন্য নির্মিত হলেও বর্তমানে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অধ্যক্ষ গোলাম কবির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই এসব হোস্টেল প্রতিদিন ১০০ টাকা হারে ভাড়া দিয়ে আসছেন। এতে প্রতিদিন বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হলেও কোনো রকম সরকার নির্ধারিত রশিদ বা প্রমাণপত্র প্রদান করা হচ্ছে না। সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে বরিশাল টিটিসি’র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোঃ গোলাম কবির বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের সাময়িক আবাসনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা হোস্টেল ভাড়া দিচ্ছি এবং ভাড়ার রশিদও সরবরাহ করছি। ভাড়া দেয়ার অনুমতি সাপেক্ষের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেনি। তিনি বলেন, আমাদের ডিজি স্যার মৌখিকভাবে ভাড়া দেয়ার অনুমতি দিয়েছে। এ বিষয়ে তেমন কোন কাগজপত্র এখন নেই। তবে ভাড়ার একটি রশিদ দেখালেও সেখানে টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে কোন তারিখ উল্লেখ নেই। এ সময় কেন তারিখ দেয়া হয় নাই বিষয়টি নিয়ে তার অধীনস্তদের রাগারাগি করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন বলে জানান।
এছাড়াও টিটিসি’র রেস্ট হাউজে পাঁচটি কক্ষ প্রতিদিন ভাড়া দেওয়া হলেও আয়কর কিংবা হিসাবরক্ষণের খাতায় মাত্র একটি বা দুটি রুমের ভাড়া দেখানো হয়। এতে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি টিটিসির অভ্যন্তরীণ আর্থিক স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিই এই অর্থনৈতিক লেনদেনের সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ছোটখাটো মেরামত ও ক্রয় সংক্রান্ত কাজের জন্য প্রকাশ্য টেন্ডার না করে নির্ধারিত কিছু পছন্দের লোকদের দিয়ে কাজ করানো হয়। এসব লোকদের নামে নামমাত্র লাইসেন্স দেখিয়ে অধ্যক্ষ নিজেই এসব কাজ করেন। লাইসেন্স বাবদ কিছু অর্থ তাদের দেয়া হয় এবং কাজের মূল্য বাবদ বেশিরভাগ অর্থ অধ্যক্ষ নিজেই আত্মসাৎ করেন। এতে সরকারি ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘিত হওয়ার পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অডিট প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। জানা গেছে, টিটিসিতে তিন মাস ও ছয় মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে প্রতি ব্যাচে ৮৫,০০০ টাকা উপকরন বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এই অর্থ ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ সামগ্রী ক্রয় না করে আত্মসাৎ করা হয় বলে জানা গেছ। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে বাজেটের অপব্যবহার ও অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ তার মাসতুতো ভাই সম্পর্কিত কয়েকজন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে পুরো বরাদ্দের টাকা ভাগ করে নেন। প্রশিক্ষণ সামগ্রী ক্রয় কিংবা সরবরাহের কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না। টিটিসি’র অভ্যন্তরে শিক্ষানবীস ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ চলাকালে ছাত্রছাত্রীদের চলাচলের মূল পথেই প্রশিক্ষণ চালানো হয়, যা নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই অব্যবস্থাপনা যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে অভিযোগ উঠলেও কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বরিশাল টিটিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের অভাব এবং স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। এই ধরনের দুর্নীতি অব্যাহত থাকলে কেবল প্রতিষ্ঠান নয়, পুরো অ লের বেকার তরুণদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়বে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো যেন মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সেবা প্রদান করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক নজরদারি এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বরিশালে বহিস্কৃত বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে বহিষ্কৃত বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আচরণ ও ভয়ভীতির অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মহিলা কলেজের অধ্যাপক আনিচুর রহমান। অভিযোগে বলা হয়, সম্প্রতি বিলকিস জাহান শিরিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে মানিক মিয়া মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায়, মঙ্গলবার দুপুরে শিরিন চারজন সহযোগীসহ কলেজে উপস্থিত হয়ে কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। অধ্যাপক আনিচুর রহমান অভিযোগে উল্লেখ করেন, “আমি সহ আরও কয়েকজন শিক্ষক সাদা কাগজে সই দিতে অস্বীকৃতি জানালে শিরিন আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। একই সঙ্গে তার সঙ্গে থাকা নগরীর বাংলা বাজার এলাকার আফজালুর রহমান চৌধুরীর ছেলে আমিনুর রহমান চৌধুরী মামুন আমাদের মারধরের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।” এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নেন এবং কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, “থানা পুলিশ সদস্যরা তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, “অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বিলকিস জাহান শিরিন সাংবাদিক পরিচয় শুনে ফোন কেটে দেন। তবে তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তি মামুন বলেন, “আমি শিরিন আপার সাথে কলেজে গিয়েছিলাম, কিন্তু কাউকে হুমকি দিইনি।” ঘটনাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে, এবং সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে।