পটুয়াখালী
পটুয়াখালীতে সব রোগের চিকিৎসা দেন দন্তচিকিৎসায় ডিপ্লোমাধারী হারুন
পরিচিত দন্তচিকিৎসক হিসেবে। কিন্তু চিকিৎসা দেন দাঁত, নাক-কান, পলিপাস, চোখ সবকিছুরই। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় হারুন-অর-রশীদ নামের একজন ডিপ্লোমা ইন ডেন্টাল টেকনোলজি ডিগ্রিধারী এভাবেই চিকিৎসা দিচ্ছেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর বাজারে ‘এশিয়া ডেন্টাল কেয়ার’ নামে তার চেম্বারটি অবস্থিত।
উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের দোবাসীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম। তার চার বছরের ছেলে আদনানকে নিয়ে চোখের চিকিৎসক দেখাতে আসেন মহিপুর বাজারের ‘চক্ষু সেবা কেন্দ্রে’। এসে চেম্বারে চিকিৎসক না পেয়ে ফোন করেন সাইনবোর্ডে লেখা নম্বরে। কিছুক্ষণ পর হারুন-অর-রশিদ এসে নিজেকে ‘চক্ষু চিকিৎসক’ পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা দেন আদনানকে। তবে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেননি। শুধু মোবাইলে ওই রোগীর একটি ছবি তুলে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন হারুন। পরে ফি হিসেবে নেন ৩০০ টাকা।
এমন চিকিৎসা দেখে সন্দেহ হয়। পরে রোগীর বাবা খাইরুল ইসলাম আশপাশে খোঁজখবর নিয়ে দেখেন, আসলে ব্যবস্থাপত্রটি ওই হারুন-অর-রশীদের নয়, তার ভাই আব্দুল হাকিমের (চোখের চিকিৎসা দেন)। পরে ফের ‘চক্ষু সেবা কেন্দ্রে’ ওই অভিভাবক ছুটে যান। তবে আব্দুল হাকিমকে না পেলেও হারুনকে পাওয়া যায় তার নিজ চিকিৎসালয় ‘এশিয়া ডেন্টাল কেয়ারে’। তিনি কেন এমনটা করলেন, অন্যের ব্যবস্থাপত্রে কেন চিকিৎসা দিলেন জানতে চাইলে রোগীকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যা লিখেছি তা খাওয়ান, সুস্থ হয়ে যাবে’।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার মহিপুর বাজারে ঘটনাটি ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হারুন-অর-রশীদ ৮-১০ বছর ধরে মহিপুর বাজারে দন্ত চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। তবে তার ভুল চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। দাঁতের পাশাপাশি নাকের পলিপাস কাটা, চোখের চিকিৎসা দেওয়াসহ সব ধরনের রোগী দেখেন তিনি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয় ড্রাগ অ্যাসোসিয়েশনে অভিযোগ দিলেও তিনি রীতিমতো তার এই হাতুড়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ভুক্তভোগী গ্রামের সাধারণ ও অসহায় মানুষ।
মহিপুর এলাকার সেরাজপুরের এলাকার বাসিন্দা মো. শাহ-জাহান কাজী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই হারুনতো দাঁতের চিকিৎসাই ভুল করে, সেখানে অন্য চিকিৎসা দেয় কেমনে? সমস্যা এক দাঁতে, তুলে দিয়েছে অন্য দাঁত। এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’
মহিপুরের বাসিন্দা সোহেল হাওলাদার বলেন, ‘আমরা জানি তিনি দাঁতের চিকিৎসা দেন। তার ভাই চোখের চিকিৎসা দেন। তবে তিনিও তার ভাইয়ের প্রেসক্রিপশনে চোখের চিকিৎসা দেন। এগুলো নিয়ে প্রায়ই রোগীদের সঙ্গে ঝামেলা হয়। কিন্তু সেটা বন্ধ হচ্ছে না, তিনি এটি করেই যাচ্ছেন। তার চোখের বিষয়ে কোনো ধারণা নেই।’
মহিপুর বাজার ড্রাগ অ্যান্ড কেমিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব আলম মুসুল্লি বলেন, ‘তিনি দন্ত চিকিৎসার পাশাপাশি অ্যালার্জি, নাকের পলিপাস, চোখ সবকিছুর চিকিৎসা দেন। তিনি দন্ত চিকিৎসায় ভুল করে অনেক রোগীর বড় সমস্যা তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা বারবার নিষেধ করার পরও তিনি না শুনে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হারুন-অর-রশিদ চিকিৎসা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি চোখের চিকিৎসার কিছু বুঝি না। আমি আমার ভাইকে ছবি পাঠিয়েছি। তিনি যেটা বলেছেন, সেটা আমি তার প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়েছি।’
অন্যের প্রেসক্রিপশনে লিখতে পারেন কি-না জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। একপর্যায়ে বলেন, ‘যা লিখে দিয়েছি তা খেলে রোগী সুস্থ হয়ে যাবে।’
ওই ব্যবস্থাপত্রের চিকিৎসক আব্দুল হাকিমের চেম্বারে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে কিছু শোনার আগেই দেখা করতে বলেন। মোবাইলে কোনো কথা বলবেন না বলে সংযোগ কেটে দেন।
কলাপাড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, ‘কোনোভাবেই তিনি এসব চিকিৎসা করতে পারেন না। আমাদের কাছে এর আগে অভিযোগ ছিল না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’