রাজনীতি
পায়ে হেঁটে ফিরোজায় ঢুকলেন খালেদা জিয়া, উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বেশ কয়েক বার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কয়েক বার মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রোষানলে পড়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর প্রাক্কালে নির্বাহী আদেশে মুক্তি মিললেও ছিলেন নানা বিধি-নিষেধের মধ্যে বাসার চারদেয়ালে বন্দি।
তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ঘটলে মুক্তি মেলে খালেদা জিয়ার। মামলা থেকে খালাস পাওয়ায় পথ খুলে বিদেশে যাওয়ার। নানা জল্পনা-কল্পনার পর গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তিনি লন্ডনে যান উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানে ছেলে তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে চার চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে আজ ফিরলেন দেশে।
হুইল চেয়ার নিয়ে চলাচল করা বিএনপি চেয়ারপারসন সবাইকে অনেকটা বিস্মিত করে দিয়ে গুলশানে নিজ বাসায় ফিরোজায় ঢোকার সময় গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করেন। এ সময় দুই পাশে দুই পুত্রবধূ তাঁকে ধরে রাখেন। এই দৃশ্যটি অনেক দিন পর দেখল দেশবাসী। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার দিনও খালেদা জিয়া পায়ে হেঁটেই গিয়েছিলেন। তবে ২০২০ সালের মার্চে যখন বের হন তখন হুইল চেয়ারে বের হয়েছিলেন। এরপর থেকে তার অবস্থার শুধু অবনতিই হয়েছে।
খালেদা জিয়ার এই সুস্থতা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত হন। খালেদা জিয়া যে এখন অনেকটাই সুস্থ সেই বার্তাই পেলেন তারা। টানা ১৫ বছর ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর এখন বিপর্যস্ত। দলটির অবস্থা এখন খুবই করুণ। উল্টো প্রায় ১৭ বছর ধরে জুলুম-নিপীড়নের মুখে পড়ে এলোমেলো বিএনপি এখন অনেকটাই সুসংহত।
আগামী নির্বাচনে দলটির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। এই অবস্থায় একটি প্রশ্ন বড় হয়ে সামনে আসছে- বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? খালেদা জিয়া নাকি তারেক রহমান। যদিও এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনই কিছু স্পষ্ট করা হয়নি, তবু সবকিছু নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার সুস্থতা এবং সক্ষমতার ওপর।
শুধু বিএনপিতেই নয়, দেশবাসীর কাছেও খালেদা জিয়া এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তাঁর ব্যক্তিত্ব, আপসহীনতা এবং দূরদর্শী নেতৃত্ব বরাবরই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। নতুন করে অনেকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে শুধু দলের নেতাকর্মীরাই উচ্ছ্বসিত না, সাধারণ মানুষের মধ্যেও উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। তারা চান, সাবেক তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রী আবার দেশের হাল ধরুন, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদায় দেশকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যান।
এদিকে প্রায় চার মাস পর প্রিয় নেত্রীকে অনেকটা সুস্থ অবস্থায় কাছে পেয়ে আনন্দের শেষ নেই বিএনপির নেতাকর্মীদের। লাখ লাখ নেতাকর্মী নেমে আসেন রাস্তায়। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত ঢল নামে মানুষের। ফলে বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফিরতে তাঁর দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলেন। সেটিতেই তিনি লন্ডনে যান। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই আবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরলেন তিনি।