গৌরনদী
বরিশালে ইউএনও-ওসির সামনে মুসল্লীকে মারধর করলেন বিএনপি নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং ওসির উপস্থিতিতে মো. সামচু মৃধা (৫৭) নামের স্থানীয় এক মুসল্লীকে মারধর করেছেন বিএনপি নেতা মো. বদিউজ্জামান মিন্টু। এ ঘটনায় এলাকার সাধারন মানুষের মাঝে তিব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মারধরের শিকার মুসল্লী, তার স্বজন ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আহলে সুন্নাত আল-জামায়াতের ইমাম চট্রগ্রামের আগ্রাবাদের পীর আল্লামা সৈয়দ মোঃ সাইফুর রহমান নিজামীর অনুসারী গৌরনদী উপজেলার দক্ষিন বিল্বগ্রাম বাসিন্দাগন দীর্ঘ প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে তাদের দক্ষিন বিল্বগ্রাম জামে মসজিদে আযান ও নামাজের একামাতের পূর্বে ‘আসলালাতু আসসালা মুআলাইকা-ইয়া রাসুলুল্লাহ্ ও আসসালাতু আসসালা মুআলাইকা-ইয়া হাবিবাল্লাহ’ বলে দুরুদ পড়ে আসছিলেন। ওই দুরুদ পড়ার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মসজিদটির মুসল্লীগন দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।
মসজিদের ইমাম মাওলানা দেলোয়ার হোসেন দুরুদ পড়ার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় অপর পক্ষটি মসজিদে নামাজ পড়া ছেড়ে দেন। গত কয়েক মাস ধরে চলে আসা এ বিরোধ সম্প্রতি চরমে পৌছে। এর ফলে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিফাত আরা মৌরি ও গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া মুসল্লীদের ওই বিরোধ নিরসনের জন্য উপজেলার প্রখ্যাত আলেমগনকে সাথে নিয়ে ইউএনওর অফিস কক্ষে আলোচনায় বসেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ শতাধীক সাধারন মুসল্লী। দুরুদ পড়ার বিপক্ষে অবস্থানকারীদের পক্ষ হয়ে সেখানে উপস্থিত হন গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মো. বদিউজ্জামান মিন্টু। দুরুদ পড়ার পক্ষে অবস্থানকারী মুসল্লীদের মধ্যে মসজিদটির ইমাম ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন আলেম ছিলেন না। তবে তাদের পক্ষ হয়ে সেখানে উপস্থিত হন সরকারী গৌরনদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ও আগ্রাবাদের পীর আল্লামা সৈয়দ মোঃ সাইফুর রহমান নিজামীর অনুসারী মমতাজ খানম।
আলেমগন একতরফাভাবে বলেছেন, আযান ও নামাজের একামাতের পূর্বে দুরুদ পড়া জায়েজ নেই। অতএব ওই মসজিদে দুরুদ পড়া বন্ধ করতে হবে। তখন অনেকেই দাবি করেন, দুরুদ পড়া হাদিসে আছে। হযরত বেলাল (রাঃ) আযান ও নামাজের একামাতের পূর্বে দুরুদ পড়তেন। এ নিয়ে সরকারি গৌরনদী কলেজ মাঠে উভয় পক্ষের আলেম ওলামাদের নিয়ে বাহাসের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। আলোচনার এক পর্যায়ে ইউএনও রায় দেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওসি মসজিদটিতে যাবেন এবং তিনি মুসল্লীদের নিয়ে ভোটাভুটি করবেন। যতদিন ওসি সেখানে না যাবেন ততদিন দুরুদ পড়া বন্ধ থাকবে। তার রায় সবাই মেনে নেয়।
এরমধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে একজন বলে ওঠেন মসজিদটির ইমাম কতদিন থাকবে। জবাবে মুসল্লী সামচু মৃধা বলেন আজীবন থাকবে। তার এ কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মো. বদিউজ্জামান মিন্টু ইউএনও’র অফিস কক্ষের ভেতরেই ইউএনও এবং ওসির সামনে মুসল্লী সামচু মৃধা(৫৭)’র উপর চড়াও হয়ে এলোপাতাড়ি চর থাপ্পর দেয়াসহ মারধর করে। এ সময় তার সাথে থাকা ৫/৬জন সহযোগী মিলে মুসল্লী সামচু মৃধাকে টেনে হেচড়ে কক্ষের বাইরে নেয়ার চেষ্টা চালায়। পরে ওসি এগিয়ে গিয়ে তাকে রক্ষা করেন। এ সময় হামলাকারীদের আঘাতে ওসির ডান হাতের একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়।
মারধরের শিকার মুসল্লী সামচু মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমাকে মারধর করে তারা আমার গায়ের কাপড় (পাঞ্জাবী) ছিড়ে ফেলে। ওসি এগিয়ে এসে আমাকে রক্ষা না করলে ওরা আমাকে আরো মরধর করত। আমি এর বিচার চাই।
মুসল্লীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মো. বদিউজ্জামান মিন্টু বলেন, অভিযোগটি সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ‘ইমাম আজীবন থাকবে’ বলে মুসল্লী সামচু মৃধা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এ কারনে তার উপর সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, এ সময় সেখানে একটি উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া সাংবাদিকদের জানান, মুসল্লী সামচু মৃধার কথায় সেখানে উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তবে তাকে মারধর করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিফাত আরা মৌরি বলেন, ‘মুসল্লীর উক্তিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে এক পর্যায়ে হাতাহাতির মত ঘটনা ঘটেছে, মারধর করে নাই। তবে যেটা হয়েছে এটাও কাম্য নয়’ বলেও জানান তিনি।