বরিশাল
বানারীপাড়ায় চাখারে ইউপি চেয়ারম্যানের মাথা ফাঁটালেন বিএনপি-ছাত্রদল নেতা পিতা-পুত্র
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশালের বানারীপাড়ায় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চাখারের ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকু গুরুতর আহত হয়েছেন।
তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গেছে,বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারী) বেলা ১১টায় চাখার ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম গতিশীল রাখতে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালণ ও এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বায়েজিদুর রহমান,উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মলয় কুমার দাস,উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহ আলম মিঞা,সদস্য সচিব রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ মৃধা,পৌর বিএনপির আহবায়ক আহসান কবির নান্না হাওলাদার,সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আ.সালাম,সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান জুয়েল,উপজেলা যুবদলের সভাপতি সাব্বির আহম্মেদ সুমন হাওলাদার,উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাইদুল ইসলাম ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেনসহ বিএনপির উপজেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং ইউপি চেয়ারম্যান,মেম্বার ও গ্রাম পুলিশরা অংশ নেন। সভা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পিআইওকে গাড়িতে তুলে দিয়ে বিদায় জানাতে পরিষদের সামনের রাস্তায় যান।
তাদের বিদায় জানিয়ে তিনি পুনরায় পরিষদে প্রবেশ করলে চাখার ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির সরদার,তার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মিরণ সরদার,তার সহযোগী ছাত্রদল কর্মী ফাহিম সিকদার এবং কসাই কামাল সিকদারের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি দল লাঠিসোটা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকুর ওপর অর্তকিত হামলা চালায়। এসময় তাকে বেধরক পিটিয়ে আহত করা হয়। এতে তার মাথা ফেটে যাওয়াসহ হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে তাকে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রসঙ্গত,এর আগে চাখার ইউনিয়ন পরিষদ ও চাখার বাসস্ট্যান্ডে অগ্রণী ব্যাংকের মধ্যে একই হামলাকারীরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকুকে দুই দফা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।
সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর চাখার বাসস্ট্যান্ডে অগ্রণী ব্যাংকে কয়েক ঘন্টা তাকে অবরুদ্ধ করে রেখে বাহিরে থাকা তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন পুলিশ সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার পরে চাখারের বিএনপি নেতা ফারুক সিকদারের তাৎক্ষনিক দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
বেশ কয়েকদিন হাজতবাস শেষে জামিনে বের হয়ে তিনি ঢাকায় চলে যান। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে চাখার বাজার সংলগ্ন খালে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকু। ওই ব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির সরদারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দোকান ঘর ভাঙ্গা ও মারধরের ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ রয়েছে গত বছরের ৫ আগস্টের পরে এ বিরোধকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকুকে দুই দফা অবরুদ্ধ করে রাখা,মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে চাখার ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির সরদার বলেন,তার সঙ্গে আমার কোন বিরোধ নেই।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া থানার ওসি মো. মোস্তফা বলেন,চাখারের ইউপি চেয়ারম্যান নির্বিঘেœ যাতে পরিষদে তার স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারেন সেজন্য ইউএনও ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ স্থানীয়দের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন।
সভা শেষে ইউএনও চলে আসার পরে মনির সরদার লোকজন নিয়ে চেয়ারম্যান টুকুর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে আহত করেছে জানতে পেরে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ব্যপারে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।