বরিশাল
২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে পরিবার, ববি শিক্ষার্থী মাইশার নামে হচ্ছে ফুটওভার ব্রিজ
নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষতিপূরণ পাবে নিহত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিমের পরিবার। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা ও বরিশাল-ভোলা মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পারাপারে বিভিন্ন উদ্যোগও বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে ফুটওভার ব্রিজটি মাইশার নামে করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে এসব নিশ্চিত করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়সাল মাহমুদ রুমি।
তিনি বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা, মানবিকতা ও তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাস চাপায় মাইশা ফৌজিয়া মিম নিহতের ঘটনায় শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি সুন্দর সমাধান হয়েছে।
সভাসূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া সভাটি শনিবার ভোররাত পর্যন্ত চলে। যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ব্যতীত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, সিন্ডিকেট মেম্বার, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, র্যাব-৮’র উপ অধিনায়ক, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, ডিজিএফআইর আঞ্চলিক প্রধান, বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির ও নারায়ণগঞ্জ বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিমের পরিবারকে বাস মালিক ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ ৫ লাখ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও ৫ লাখ টাকাসহ মোট ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ব্রিজটির নাম নিহত মাইশা ফৌজিয়া মিমের নামে করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বরিশাল-কুয়াকাটা ও বরিশাল-ভোলা মহাসড়কে গতিসীমা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান জানাতে অদূরে আরও কিছু সাইনবোর্ড স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সামনের মহাসড়কে স্পিড ব্রেকার, রাম্বল স্ট্রিপ বসানো, মহাসড়কের পাশে ফুটপাত নির্মাণ, দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা নিশ্চিত করে রাতের সড়কে পল্লি বিদ্যুতের সহায়তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা, সার্বক্ষণিক ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সামনে স্থায়ী ট্রাফিক বক্স নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরমধ্যে কিছু কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়সাল মাহমুদ রুমি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈঠকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা বাস মালিকের আর্থিক অবস্থা ও নিহত সহপাঠীর পরিবারের দিক বিবেচনা করেই সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রী নিহতের ঘটনায় ঘাতক বাস চালককে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে বাস চালককে পটুয়াখালীর মরিচবুনিয়া এলাকা থেকে আটক করা হয়। চালকের নাম মো. জামিল হোসন (২৫)। তিনি ওই এলাকার হায়দার হাওলাদারের ছেলে।
তিনি জানান, প্রথমে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। পরে সেখানে না পেয়ে পটুয়াখালীর মরিচবুনিয়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে জামিলকে আটক করা হয়। যেহেতু ঘটনাটি বন্দর থানাধীন তাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্টার (নিরাপত্তা শাখা) কে এম সানোয়ার পারভেজ লিটন বাদি হয়ে সেখানে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু দাবি দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম দাবি ছিল চালককে আটক করা। আমরা সেটি করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি হেলপারকে আটক করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বাস মালিকের কাছ থেকে নিহত মাইশার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর বাহিরেও যে দাবিগুলো রয়েছে সেগুলো মেনে নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্বদ্যিালয়ের প্রক্টর রাহাত হোসাইন ফয়সাল জানান, প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৯টায় ববির সামনে নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলস পরিবহনের বাসচাপায় শিক্ষার্থী মাইশা ফওজিয়া মিম নিহত হন। তিনি ববির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।