বরিশাল
সম্মানি দেয়ার কথা বলে বরিশালের ডিসি, ইউএনও’র প্রবেশপত্র আটকে রেখে টাকা আদায়!
নিজস্ব প্রতিবেদক : জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উচ্চপদস্থদের সম্মানি দেওয়ার কথা বলে ডিগ্রি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের সরকারি রসিক চন্দ্র (আর.সি.) কলেজের এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের পদত্যাগ চেয়ে মঙ্গলবার সকালে কলেজের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এরআগে গতকাল সোমবার দুপুরে ডিগ্রি ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষায় প্রবেশপত্র আটকে ৫শ টাকা চান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল। সেই ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
সেই ভিডিওতে ওই শিক্ষককে বলতে দেখা যায়, ইউএনও, ডিসি, এডিসি, দুইজন ট্যাগ অফিসারের সম্মানি দিতে হবে। আমারে ২১ দিনের ট্রেনিংয়ে নিছে, আমাদের দিছে ৫৩ হাজার টাকা। আমার খরচ হইছে এক লক্ষ টাকা। এ সময় এক শিক্ষার্থী বলেন, তাহলে আমাদের ৫০০ টাকা দিয়ে নিতে হবে? তখন ওই শিক্ষক বলেন, এটি তোমাদের কাছে আমার আবেদন। যদি ৫০০ টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র না নিতে পারি? শিক্ষার্থীর এমন প্রশ্নে ওই শিক্ষক বলেন, এটা তোমার ইচ্ছা। তখন শিক্ষার্থী বলেন, তাহলে এ ক্ষেত্রে কি করতে পারি? শিক্ষক বলেন, তুমি যদি আমার সাথে যুদ্ধ করতে নামো সমস্যা নেই। সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার, যুদ্ধ করেই যেতে পারো এটা তোমার অধিকার।
২ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপের পরে ৫০০ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। তখন শিক্ষক বলেন, রিক্সাচালকের ছেলে টাকা দিয়ে গেছে। যারা ধনী, সামর্থবান তারা যুদ্ধ করে, কিভাবে অধ্যক্ষকে হেনস্থা করা যায়। তখন ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীর উদ্দেশে বলেন, তুমি যে অ্যাড্রোয়েট মোবাইল ফোন ব্যবহার করো, এমন ফোন আমি শিক্ষার্থী থাকার সময় কল্পনাও করতে পারিনি। আমার বেতনের টাকা তো তোমাদের পিছনে খরচ করতে পারবো না, আমার সংসার আছে।
সোমবারের এ ভিডিও ভাইরাল হলে মঙ্গলবার অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তখন মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রদের শান্ত করে। এরপর মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিব হোসেন পরিস্ত্রিতি পর্যবেক্ষণ করতে কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।
অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র আসাদ বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের থেকে অতিরিক্ত ফি নিয়ে তিনি ডিসি, এডিসি, ইউএনওদের সম্মানি পাঠান বলে ঘোষণা দিচ্ছে। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
কলেজের প্রভাষক এস.এ. শাহীন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ফ্রী করে দেন। সকল শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র ফ্রী গ্রহণ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কলেজে গিয়ে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। এরপর মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে বক্তব্য জানতে কলেজের সভাপতি ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।