বরিশাল
তুমুল ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে বরিশাল ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন, প্রসংশা
কেন্দ্রীয় পুলিশের নির্দেশনার আলোকে গত কয়েকদিন ধরে বরিশালে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আনাসহ মোটরসাইকেল আরোহীদের আইনের মধ্যে নিয়ে আসতে তোড়জোড় চালাচ্ছে মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ। খোদ এই বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা মাঠে নেমে কাজ করতেও দেখা যায়, বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুনা লায়লাকে অগ্রভাগে থেকে মাঠপর্য়ায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনাও হয়। সেই আলোচনার মধ্যেই দেখা গেলো ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা আজ সোমবার (২০ মে) শহরের কাকলির মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় যানজট নিরসনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তখন বেলা পৌঁনে একটা। এর কিছুক্ষণ আগেই স্থানটি পরিদর্শন করে যান এডিসি রুনা লায়লা, উর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা কাকলির মোড় পরিদর্শন করে যাওয়ার মিনিট দশেকের মাথায় শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। কিন্তু সড়কে যানজট থাকায় সেই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজেদের কর্তব্য পালন করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের, যারা ভিজে ভিজে যানবাহনের এলোমেলা চলাচল নিয়মের মধ্যে আনতে কাজ করছিলেন। ট্রাফিক পুলিশের কর্মক্ষেত্রে এমন ভূমিকা নিয়ে আশপাশের দোকানিসহ পথচারীদের মুখে প্রশংসা শোনা হয়।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, জিহাদুল কবির বরিশাল পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পরপরই তিনি বেশ কয়েকটি পদপেক্ষ নেন, যার মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো অন্যতম। এর গুরুত্ব অনুধান করাসহ শীর্ষ পুলিশ কর্তার নির্দেশে উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) তানভীর আরাফাত এবং এডিসি রুনা লায়লাও সেই লক্ষেই এগিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন ধরে ট্রাফিক পুলিশ ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ অভিযান শুরু করে। শহরের প্রতিটি পেট্রোলপাম্পে ট্রাফিক পুলিশ ফেস্টুন সাটিয়েছে, যাতে উল্লেখ আছে হেলমেডবিহীন মোটরসাইকেল আরোহীদের কাছে ফুয়েল বিক্রি করা যাবে না। এনিয়ে যদি কেউ পাম্প মালিকদের সাথে জোরজরবদস্তি করে, তাহলে পুলিশের বিশেষ কিছু নম্বরে ফোন করে জানাতে অনুরোধ রাখা হয়। এই কার্যক্রম কদিন আগে উদ্বোধন করে এডিসি রুনা লায়লা, দূরদর্শী এ কর্মকর্তা কিছুদিন পূর্বে পদোন্নতি পেয়েছেন। জানা গেছে, আজ সোমবার ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিদর্শনে নেমে তিনিও ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে সূর্যের তাপ এবং বেলা ১টার পরে মুষুলধারে বৃষ্টি হয়, যা উপেক্ষা করে শহরের যানজট নিরসনে কাজ করে ট্রাফিক পুলিশ। এই সময়ে কাকলির মোড়ে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আফসানা মিমিসহ মিজান, মোজাম্মেল এবং পিন্টু চন্দ্র দে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে যানবাহন চলাচলপ্রবাহ ঠিক করছিলেন, বরিশাল প্রেক্ষাপটে যার অতীত উদাহরণ খুব কম রয়েছে। অবশ্য সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বরিশাল ট্রাফিক সদস্যদের হতাহতের বেশকিছু উদাহরণ আছে, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি বেপরোয়া গতির কাভার্ডভ্যানের গতি রোধ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া, যার নাম আজও বরিশাল পুলিশ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
সূত্রগুলো জানায়, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির অত্যন্ত সৎ এবং স্বচ্ছ চিন্তাধারার মানুষ। অতীত কর্মক্ষেত্রে তিনি কোনো অপরাধ বা অপরাধীদের সাথে আপস করেছেন, এমন উদাহরণ নেই। তাছাড়া তিনি দায়িত্ব পালনে অবহেলাও সহ্য করেন না, বরং এই ধরনের অপরাধে মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করেছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করে।
শীর্ষ পুলিশ কর্তার তদারকিতে মাঠপর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ফাঁকি দেওয়ারতো সুযোগ যেমন থাকছে না, বরং তাদের কর্মক্ষেত্রে তাদের আরও কর্তব্যপরায়ণ করে তুলেছে, যা নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশে বহুমুখী আলোচনা শোনা যায়। বিশেষ করে আজ সোমবার কাকলির মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন পথচারীসহ অনেকেরই নজর কেড়েছে।
যদিও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও বলছেন, রাস্তায় থেকে কখনও রোদে পুড়তে হয়, আবার কখনও ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে। এতে কষ্ট হয়, কিন্তু দায়িত্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। বরং দিনে দিনে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে, শীর্ষ কর্তাদের নির্দেশে যা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
বৃষ্টিতে ভিজে দায়িত্ব পালনকালে কথা হয়, ট্রাফিক সদস্য পিন্টু চন্দ্র দের সাথে, তিনি জানান, রোদ, বৃষ্টি কিংবা ঝড় যা হোক না কেনো তাদের দায়িত্ব পালনে অনঢ় থাকতেই হচ্ছে। শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনাটাও এমনই জানালেন এই পুলিশ সদস্য।
রোদ ও বৃষ্টি, ঝড়ে প্রায়শই তাকেও দায়িত্ব পালন করতে হয়, জানিয়ে এডিসি (ট্রাফিক) রুনা লায়লা বলেন, ইদানিং সড়কে প্রচুর ট্রাফিক থাকছে। কখনও প্রচন্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে এই যানজটের লাইন দীর্ঘ হয়, আবার কখনও ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে অনুরুপ পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন মাঠপর্যায়ে কর্মরতদের কিছুটা বেগ পেতে হলেও অল্পসময়ের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে নগরবাসী ভোগান্তি থেকে মুক্ত হয়।
সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত এই নারী পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মাঠপর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশের যে সকল সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন, তারা প্রত্যেকেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশংসার দাবি রাখেন। তবে তিনি এটাও বলতে চান যে, শুধু ট্রাফিক পুলিশ চাইলেই শহরের যানজট নিরসন করা সম্ভব নয়, নগরবাসীকেও এতে সহযোগিতা করতে হবে।’