বরিশাল
প্রতিবাদ করলে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত
বাকেরগঞ্জে লাবিব বাহিনী কর্তৃক ভিক্ষুকের টাকা ছিনতাই
মোঃ বশির আহাম্মেদ, বাকেরগঞ্জ ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি ইউনিয়নের কাফিলা গ্রামের লাবিব বাহিনী কর্তৃক ভিক্ষুকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত মাসের ২৪ তারিখ এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের তৎপরতায় এরই মধ্যে ওই ভিক্ষুকের ছিনতাই হওয়া টাকার কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। ভিক্ষুক আ: লতিফ হাওলাদার (৭০) উপজেলার পাদ্রীশিপপুর ইউনিয়নের পাদশিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাদ্রীশিপপুর গ্রামের হতদরিদ্র আঃ লতিফ হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। একটি চটের ব্যাগ, একটি লাঠি ও টিনের কৌটা নিয়ে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। চুরি বা হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ভিক্ষা করে জমানো টাকা চটের ব্যাগে করে নিজের কাছেই রাখতেন তিনি। ঘটনার দিন ভিক্ষা করে বিকেলে নিজ গ্রামে ফিরছিলেন। এসময় তাকে অনুসরণ করে কাফিলা গ্রামের সৈয়দ রেজওয়ান এর পুত্র সৈয়দ লাবিব, মোকছেদ মোল্লার পুত্র শামিম মোল্লা, হাসেম মোল্লার পুত্র বশির মোল্লা ও মজিবুর হাওলাদারের পুত্র শিপন সহ একদল বখাটে যুবক। হঠাৎ করে বৃদ্ধ ভিক্ষুক আ: লতিফকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার দেড় বছর ধরে ভিক্ষা করে জমানো ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ভিক্ষুক লতিফ ডাক-চিৎকার করলে কিল-ঘুষি মেরে টাকার থলে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে চলে যায়।
ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় আঃ ওহাব খানের পুত্র মোঃ ফারুক হোসেন খান তাকে সাথে নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় ভিক্ষুক আঃ লতিফ বাদী হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা লাবিব সহ তার বাহিনীর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করে ভিক্ষুক আব্দুল লতিফকে ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনার জেরে ৯ জুন রাতে লাবিব বাহিনী ফারুক হোসেন খানকে তার এনজিও থেকে ধরে এনে কাফিলা বাজারে প্রকাশ্যে ঝাড়ু দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। এবং তার কাছে থাকা নগদ অর্থ ও স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
এ বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, আমি এনজিওর কালেকশন শেষ করে অফিসে বসে ছিলাম। হঠাৎ করে লাবিব বাহিনী আমার অফিসে এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। এ সময় ভিক্ষুককে দিয়ে থানায় অভিযোগের কথা উল্লেখ করে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আমার কলার ধরে বাজারের মধ্যে নিয়ে এসে শত শত লোকের মাঝে ঝাড়ু ও জুতা দিয়ে বেধড়ক পিটাতে থাকে। স্থানীয়রা ওদের ভয়ে আমাকে উদ্ধার করতে আসেনি। ওরা বাজার থেকে চলে গেলে আমাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরবর্তীতে আমি বাকেরগঞ্জ থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। পরবর্তীতে তা এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, সকল আসামী আটক না হওয়ায় আমার জীবন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিনি আরো বলেন, এই সন্ত্রাসী বাহিনী পূর্বেও প্রকাশ্যে সাবেক কৃষি কর্মকর্তা আলহাজ্ব আবুল হোসেন শরীফ, অবসরপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর আঃ খালেক, এএসআই নাসির উদ্দীন, গ্রাম পুলিশ শাজাহান, সমাজসেবক আকবর আলি, জিয়াউল হক ও শরীফ আনসার খলিফা সহ একাধিক ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত করেন। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ডাকাতি মাদক চুরি চাঁদাবাজি সহ একাধিক মামলা চলমান। তাদের ভয়ে স্থানীয়রা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
কাফিলা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ টিটু খান মুঠো ফোনে জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এই সন্ত্রাসীরা বাজারে তার অফিসে এসে টেবিলের উপরে পিস্তল রেখে তাকে হত্যার হুমকি প্রদান করে। এছাড়াও কিছুদিন পূর্বে কাফিলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী সুভাষচন্দ্র দাস এর দোকানে গিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পান ব্যবসায়ী সমির ও সুবাস এর কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
নিয়ামতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম দুলাল জানান, এই চক্রটি চাঁদাবাজি, মাদক, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও জুয়া আসর বসানোর সহ সকল ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা এসব অপকর্ম করেও বেঁচে যাচ্ছেন। অজানা কারণে থানা পুলিশ তাদেরকে কিছুই করতে পারছে না।
পাদ্রীশিপপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল হাসান বাবু বলেন, ভিক্ষুককে মারপিট করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি আমাকে অবহিত করলে আমি ভিক্ষুক আব্দুল লতিফকে থানা পুলিশের সহযোগিতা নিতে বলি। থানা পুলিশ লাবিব বাহিনীর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করে আমার উপস্থিতিতে ভিক্ষুক আব্দুল লতিফকে ফেরত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে নেয়ামতি বিটের এএসআই নুরুল আমিন ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরে লাবিব বাহিনীর কাছ থেকে আমরা নগদ চল্লিশ হাজার টাকা উদ্ধার করে বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ও দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে ভিক্ষুককে টাকাটা ফেরত দেই। ভিক্ষুক পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় মামলা নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মাকসুদুজ্জামান জানান, ভিক্ষুকের টাকা ছিনতাই এর ঘটনায় ৪০ হাজার টাকা আমরা উদ্ধার করেছি এবং ফারুক খানকে মারধর ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানায় রেগুলার মামলা নেওয়া হয়েছে। যাহার জিআর ১৭৪/২৩। ইতিমধ্যে একজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতের পাঠানো হয়েছে।