বরিশাল
অচল পয়সা নিয়ে রহস্যজনক ভূমিকায় বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু আড়াল থেকে সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামাল’র ছেলে কামরুল আহসান রুপনকে ভোটের মাঠে নামিয়েছে। এ ঘটনাকে অচল পয়সা চালিয়ে দিতে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল বলছে নগরীর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতে রজানৈতিক কুটকৌশল বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে বিএনপি। বরিশাল সিটিসহ তথা ৫ সিটিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে দলটি। কিন্তু বাস্তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে বরিশালে মেয়র পদে লড়বেন বিএনপি দলীয় সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামাল’র ছেলে কামরুল আহসান রুপন। কিন্তু দলীয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দলীয় কোন ধরনের চাপে নেই বলে দেশ জনপদের কাছে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন এই প্রার্থী। তিনি বলেন, দল ও কর্মীদের মৌন সম্মতিতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন এবং দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত তার সাথে যোগাযোগ রেখে চলছেন। এমনকি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তাকে নিয়মিত দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত অবস্থার সম্মুখীন করতেই তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এবং এই সিটি নির্বাচনকে ঘিরে তার দল বিএনপির পক্ষ থেকেও বিভিন্ন চমক থাকবে বলেও তিনি জানান।
তবে রুপনের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচীব মীর জাহিদুল কবির বলেন, তিনি আমাদের দলের কেউ না। দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন তার সাথে যোগাযোগ করবে? যদি এমন কথা বলে থাকে তবে সম্পূর্ন ভিত্তিহীন। আমরা তার দলের কর্মী তাই কোন বিষয়ে প্রয়োজন হলে তিনি নির্দেশনা দিবেন। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই সরকারের অধীনে আমরা কোন নির্বাচনে অংশগ্রহন করবো না, এটা দলের হাইকমান্ড থেকেই চুড়ান্ত। এসময় মীর জাহিদুল কবির অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, কিছু চাটুকারী ও বদমাশী লোক সব দলেই রয়েছে তেমনি রুপনও একটা ভার্সন। তিনি বলেন, রুপনকে বলতে বলেন দলের কোন কোন নেতা-কর্মী তার সাথে দেখা করে।
তবে অনেকে বলছেন, সিটি নির্বাচনে রুপনকে টেস্ট কেস হিসাবে নিয়েছে বিএনপি। যদিও এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নন দলটির স্থানীয় নেতারা। যেহেতু কোনো পদ-পদবি নেই, তাই নির্বাচনে দাঁড়ালেও তাকে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে না দল। রুপনের হার কিংবা জিত-দুদিকেই লাভ দেখছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। পরিস্থিতি অনুকূল মনে হলে শেষের দিকে তার পক্ষে কাজ করার গ্রিন সিগন্যালও আসতে পারে। যদিও এখনই এই বিষয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। বরং তার নির্বাচন করার এই ঘোষণার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে মহানগর বিএনপি।
অপরদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বরিশাল মহানগর বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, রুপনকে দিয়ে আমরা দেখতে চাইছি এবারের পরিস্থিতি। আনঅফিশিয়ালি দলের সমর্থনও পেতে পারেন তিনি। নির্বাচনে রুপনের হার বা জিত, দুদিকেই লাভ। ভোটব্যাংক প্রশ্নে যেহেতু দলের শক্ত অবস্থান বরিশালে, তাই তাকে হারাতে আশ্রয় নিতে হবে কারচুপির। তেমনটা হলে আরও একবার প্রমাণ হবে আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা। আর জিতে গেলে প্রমাণ হবে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই বলতে পারেন যে, বরিশালের নির্বাচনে রুপন হয়ে উঠতে পারে আমাদের টেস্ট কেস।’
এদিকে নির্বাচনের এখনো এক মাসের বেশি বাকি থাকলেও এখনি রুপন নির্বাচন কমিশনের উপর নানামুখি অভিযোগ করে চলেছেন। তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে তর্জন গর্জন করলেও, অফিসিয়ালী নির্বাচন কমিশনে সে কোন লিখিত অভিযোগ করবে না বলে তিনি জানান। এদিকে ইভিএম এ ভোট সুষ্ঠু হবে না বলে অভিযোগ করে রুপন জানান, ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট চুরির মিশনে নেমেছে সরকার। আর মাঠ পর্যায়ে সেটা বাস্তবায়ন করবে নির্বাচন কমিশন।
অপর এক সাক্ষাতকারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচীব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, একটা ন্যাশনাল কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাছাড়া আমাদের নেত্রী বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজা ভোগ করছেন। তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও আমাদের দলের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। দেশ ও দলের এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোন ধরনের নির্বাচন সম্ভব নয়। এর আগে আমরা এ সরকারের অধীনে ইউপি নির্বাচন বর্জন করেছি। এখন সিটি নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। সেখানে প্রার্থীর নাম আসে কোথা থেকে? রুপম নির্বাচন করবে কিনা সেটা তার একক সিদ্ধান্ত, কোন দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। তাছাড়া রুপম নির্বাচনের জন্য নেতা-কর্মী কোথায় পাবে?
এদিকে সম্প্রতি বরিশাল দুদক কার্যালয়ে হাজিরা দেন কামরুল হাসান রুপন। হাজিরা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি গুমের আশঙ্কা করছি, হয়তোবা আপনাদের সামনে আমার এটা শেষ বক্তব্য এবং মেয়র র্প্রার্থী হয়েছি বলেই আমারও আমার পরিবারের উপর দুদকের এ খড়গ। অপরদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, প্রয়াত আহসান হাবিব কামাল পরিবারের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। নোটিশে তাদের নামে থাকা রিভার আইল্যান্ড ইন্ট্রোগেশন লি. কোম্পনির মূলধনের উৎস সংক্রান্ত কাগজপত্র, কোম্পানির শেয়ার পরিবর্তনের কাগজপত্র, আয়কর নথি এবং সম্পদ বিবরণীতে সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের দলিলপত্র চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে রূপমের গুম হওয়ার শঙ্কাকে পাগলের প্রলাপ বলে আখ্যায়িত করেছে নগরীর বিশিষ্টজনেরা। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে এটি নিছক কৌতুক বলে আখ্যায়িত করেছেন।