বরিশাল
জাহাঙ্গীরের পরিণতি কি সাদিক আব্দুল্লাহ বরণ করতে চাচ্ছেন?
সাদিক অনুসারীদের জন্য অশনি সংকেত!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে জাহাঙ্গীরের পরিণতি কি সাদিক আব্দুল্লাহ বরণ করতে চাচ্ছেন? এখন এমন কথার বাতাস যেন আরো জোরে বইতে শুরু করেছে পুরো নগরী জুড়ে। আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে সাদিক অনুসারীদের। নৌকার মনোনীত প্রার্থীর বিরোধীতাসহ দলের আদর্শ বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় বিব্রত দলীয় হাইকমান্ড। নানা বির্তকিত কর্মকান্ডে যেকোন অশনি সংকেত বার্তা আসতে পারে সাদিকসহ তার অনুসারীদের মাঝে। সিটি নির্বাচন ঘিরে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর সর্মথন তো দূরের কথা একের পর এক বির্তকিত কর্মকান্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে তারা। দলের তৃণমূলে স্বেচ্ছাচারী ও কোন্দল সৃষ্টিকারী নেতাদের আর কোনো ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমকে বহিস্কার করে যেমন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তারা মিটিয়েছে কঠোরভাবে। ঠিক তেমনি একই ঘটনা বরিশালে ঘটতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বরিশালের বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে এবার আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তার বদলে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে খোকন সেরনিয়াবাতকে। যিনি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই এবং সাদিক আব্দুল্লাহ চাচা। কিন্তু চাচাকে মনোনয়ন দেয়াটা সাদিক আব্দুল্লাহ পছন্দ করেননি। তবে ভিডিও কনফারেন্সে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে তার অনুসারী নেতাদের কাজ করার নির্দেশ দিলেও বাস্তবে যারা পোস্ট-পজিশন ধরে রেখেছেন, তারা কেউই খোকনের পক্ষে সরব না। ফলে আপন ছোট চাচাকে সমর্থনের কথা দিয়েও ‘না রাখা’ বিষয়টি প্রতীয়মান হচ্ছে। তিনি এখন খোকন সেরনিয়াবাতকে হারানোর জন্য নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিনি সেখানে হাতপাখা মার্কাকে প্রকাশ্য এবং গোপনে সমর্থন দিচ্ছেন এমন অভিযোগ বরিশালে মুখে মুখে। আর এই কারণেই হাতপাখা আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, বরিশাল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নিয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের পর বিভেদ আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে এবং তা সহিংস রূপ ধারণ করেছে। যারা খোকন সেরনিয়াবাত এর পক্ষে মাঠে নামছেন তাদেরকে ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে। সাদিক আব্দুল্লাহর লোকজনই এমন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্র। গত রোববার (১৪ মে) আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর তিন কর্মীকে মারধর করে গুরুতর জখম করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে এবং এই অভিযোগের পরপরই পুলিশ এটা নিয়ে অ্যাকশনে যায় এবং ছাত্রলীগের নেতা রইস আহম্মেদ মান্নাকে গ্রেপ্তার করে। এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আবার নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি এই ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে মনে করেছেন।
নগর আওয়ামী লীগ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সাদিক আব্দুল্লাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে এসেছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নিজে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং যদি শেষ পর্যন্ত নগর আওয়ামী লীগ এবং অন্যরা খোকন সেরনিয়াবাতকে সমর্থন না দেন তাহলে গাজীপুরের মতো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বরিশালে খোকন সেরনিয়াবাত এর বিরুদ্ধচারণকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। প্রথমত, শেষ পর্যন্ত বরিশালের পরিস্থিতি যদি ভালো না হয় তাহলে সেখানকার কমিটিগুলো বিলুপ্ত করে দেয়া হতে পারে নির্বাচনের আগে। দ্বিতীয়তঃ সাদিক আব্দুল্লাহ যে খোকন সেরনিয়াবাত এর বিরুদ্ধাচারণ করছেন এ বিষয়টি যদি প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে তাকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং এমনকি বহিস্কারাদেশের মতো শাস্তি দেয়া হতে পারে বলে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা যেন খোকন সেরনিয়াবাত এর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছেন, বরিশাল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারাই কাজ করবে তাদেরকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, যেখানেই সাংগঠনিক স্থবিরতা আসবে অথবা সংগঠনের আদর্শ বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকবে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের একটা মাঠের সার্ভে জরিপ আছে। যারা জনহিতকর কাজের বদলে জনগণকে ক্ষিপ্ত করছে। যাদের আচার-আচরণে মানুষ সন্তুষ্ট না। যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয় মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হল দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলগুলোকে মিটমাট করা এবং নির্বাচনের আগে এমন একটি বার্তা দেয়া যে দলের বিরোধিতা করলে দল তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। আর এই বার্তাটা দেয়ার জন্য গাজীপুরের পর বরিশালের দিকে নজর রাখছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে সাদিক আব্দুল্লাহর রাজনীতির ভবিষ্যতও জাহাঙ্গীরের মতো হতে পারে বলে কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।