বরিশাল
বাকেরগঞ্জের চরাঞ্চলে তরমুজের বাম্পার ফলন
মোঃ বশির আহাম্মেদ, বাকেরগঞ্জ ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি তরমুজ চাষিরা। ক্ষেত থেকেই পাইকারি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন কৃষকেরা। আবার কেউবা ট্রালার ও ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ভালো দামে বিক্রি করছেন তরমুজ। উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন তারা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হওয়ায় ফলন নিয়ে সন্তুষ্ট কৃষকেরা।
সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি ও বাজারজাতকরণে সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণ করে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের আলাউদ্দিন মৃধা, নিজাম ফিটার, মস্তফা, মুছা বয়াতি, শামিম, জুয়েল বাকেরগঞ্জের সোহরাব হোসেন, সাইফুল ইসলাম চাষিরা বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা, গারুড়িয়ার, ফরিদপুর, রঙ্গশ্রী ও দুর্গাপাশা ইউনিয়নের নদীর চরাঞ্চলের জমি লিজ নিয়ে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে এই বছর বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আবাদে ঝুঁকছে এখানকার কৃষকরাও।
জানা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে আগে কখনো তরমুজ চাষ হয়নি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে পটুয়াখালী জেলা থেকে আগত শতাধিক কৃষক পরীক্ষামূলক ভরপাশা ইউনিয়নের পায়রা নদীর চরে, গারুড়িয়ার ইউনিয়নের তুলাতলী নদীর চরে, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে বোয়ালিয়ার চরে ফরিদপুর ইউনিয়নে কারখানা নদীর চরে ও দুর্গপাশা ইউনিয়নে চরে তরমুজ চাষ হয়েছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার নদীর চরাঞ্চলে ৭০০ শত হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বাকেরগঞ্জে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে ভিক্টর সুগার, ওশেন সুগার, ব্লাক বেরী ও দেশীয় জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চরাঞ্চলে যুগের পর যুগ অনাবাদি অবস্থায় থাকা জনমানবশূন্য বিস্তৃর্ণ ভূমি এখন তরমুজ চাষে সবুজে পরিণত হয়েছে। উপজেলার ভরপাশা, গারুড়িয়ার, রঙ্গশ্রী, ফরিদপুর, দুর্গপাশ ইউনিয়নে চরাঞ্চলে যতদূর চোখ যাবে, দেখা মেলবে তরমুজের আবাদ। ভরপাশা ইউনিয়নে তরমুজ চাষি আলাউদ্দিন মৃধা সোহরাব মৃধা বলেন, বাকেরগঞ্জে এই বছর প্রথম উৎপাদিত তরমুজের আকার বড় হয়েছে। এখন মাঠে ৮/১০ কেজি ওজনের তরমুজ রয়েছে। গত ১০ দিন ধরে মাঠ থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। পাইকারদের মাধ্যমে এই তরমুজ দেশ-বিদেশে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাটবাজারে এখন তরমুজ বিক্রয় করা হচ্ছে। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ফলে বাকেরগঞ্জের চরাঞ্চলে উৎপাদিত তরমুজ এখান থেকে ঢাকার মাহাজনরা পাইকারি নিয়ে যাচ্ছেন। রমজান মাস সামনে রেখে বাজারজাত করনের চাহিদা আরো বাড়বে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বাকেরগঞ্জ থেকে সংগৃহীত তরমুজ সহজেই দেশ-বিদেশে বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে খুব সহজে।
পটুয়াখালী জেলা থেকে তরমুজ চাষ করতে আসা কৃষক খেতের মাঝেই ‘টংঘর’ স্থাপন করে থাকা-খাওয়া আর বিশ্রাম করছেন। চরাঞ্চলে তরমুজের মাঠে রোদের উত্তাপ এড়িয়ে কৃষক এখন তরমুজ খেতে তরমুজ বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। তরমুজ চাষী শামিম ও সাইফুল ইসলাম জানান, তরমুজ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই। সময় কম লাগে। লাভও ভালো। এই বছর পটুয়াখালী থেকে প্রথম বাকেরগঞ্জের স্থানীয়দের কাছ থেকে ৩ কানি জমি লিজ নিয়ে আমি তরমুজ চাষ করেছি। এক কানি জমির তরমুজের মাঠের তরমুজ ক্ষেত সহ বিক্রি করেছি ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আরো ২ কানি জমির চাষ করা তরমুজ ১৫ দিন পরে বিক্রি করা হবে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকার ও তরমুজের ফলন ভালো থাকায় আমরা লাভবান হব।
অপরদিকে, গারুড়িয়ার ইউনিয়নে পটুয়াখালী থেকে তরমুজ চাষ চাষ করতে আসা চাষিরা জানান, বাকেরগঞ্জে শতাধিক চাষিরা তরমুজ চাষ করতে এসেছে। তরমুজ বিক্রি শেষে তারা আবার নিজ এলাকায় চলে যাবেন। তবে সঠিক সময়ে সার ও ঔষধ পেলে ফলন আরো ভালো হতো। তরমুজ চাষিরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি কোন সহযোগিতা আমরা পাই না। যদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের উৎপাদিত তরমুজ বিদেশে বিক্রি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।