বরিশাল
মসজিদের নামে স্পিডবোট থেকে চাঁদা উত্তোলন করে আ:লীগ নেতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের তালতলি থেকে মেহেন্দিগঞ্জ-পাতারহাট নৌ-রুটে অবৈধ স্পিডবোট চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী কয়েকজনের বিরুদ্ধে মসজিদের নামে ঘাট থেকে চাঁদা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। কোনো ধরনের নিবন্ধন ও রুট পারমিট ছাড়াই প্রত্যেক স্পিডবোট থেকে প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা করে চাঁদা আদায় করে ঘাট নিয়ন্ত্রণকারীরা। যদিও এই চাঁদা স্থানীয় তালতলি ও মেহেন্দিগঞ্জ মসজিদের নামে উঠানো হলে আত্মসাত করেন ঘাট নিয়ন্ত্রণকারী মনির জমাদ্দার, গোলাম কবির ও আলিসহ কয়েকজন। সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের তালতলি মেহেন্দিগঞ্জ নৌ-রুটে প্রতিদিন ৫০টি করে স্পিডবোট চলাচল করে। অধিকাংশ স্পিডবোটের নিবন্ধন নেই। বরিশাল আধুনিক নৌবন্দর কতৃপক্ষ স্পিডবোট পারাপারে নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা বললেও তেমন সাড়া দেখা যায়নি। আর নিবন্ধিত না হওয়ার কারণে কোন প্রকার জবাবদিহিতার আওতায় আনাও সম্ভব হচ্ছেনা। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন এসব অবৈধ স্পিডবোট থেকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়। সেই হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন ঘাট নিয়ন্ত্রণকারীরা। মসজিদের নামে এই বিপুল পরিমান টাকা আদায় করা হলেও একটি টাকাও মসজিদের কাজে খরচ করা হয় না। তাহলে আদায়কৃত বড় অংক চাঁদা যাচ্ছে কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাব মেলে মেহেন্দিগঞ্জের লাইনম্যান মো: আলীর কথায়। তিনি বলেন, তালতলি থেকে মেহেন্দিগঞ্জ-পাতারহাট নৌ-রুটে প্রতিদিন ৩০টি স্পিডবোট চলাচল করে যা মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী মনির জমাদ্দার নিয়ন্ত্রন করেন। প্রতিটি স্পিডবোট থেকে প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়াও ঘাট কমিটির নামে প্রতিদিন আরো একটি অতিরিক্ত স্পিডবোড চলাচল করে যা থেকে প্রতিদিন পনেরশ’ টাকা জমা হয়। আর এই টাকা মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিমদের বেতন ভাতা সহ নাইটগার্ড ও স্টাফদের দেয়া হয়। আমাকেও প্রতিমাসে আট হাজার দেয়। তিনি আরো বলেন, মেহেন্দিগঞ্জ ঘাটের মসজিদ ও স্টাফদের বেতনের টাকা আমরা দেই। আর তালতলী বাজারের মসজিদ ও নাইটগার্ডের টাকা বাজার কমিটির সভাপতি চেয়ারম্যান মাহাতাব হোসেন সুরুজ মোল্লার ভাই গোলাম কবিরের কাছে দেই। প্রতিমাসে তাকে ১৬ হাজার টাকা দেয়া হয়। তবে এ বিষয়ে তালতলি বাজার কমিটির সভাপতি গোলাম কবির বলেন, আমি কোনো স্পিডবোটের সাথে জড়িত নেই। তারা আমাকে কোন টাকা দেয়না। তাহলে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিমদের বেতন ভাতা সহ ঘাটের নাইটগার্ডের বেতন কে দেয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে ক্ষোভের সহিত দেশ জনপদের প্রতিবেদককে মামলার হুমকি দিয়ে লাইনটি কেটে দেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মনির জমাদ্দার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছেন এসব অবৈধ নৌযান। শুধু তাই নয়, সড়ক পথের চেয়ে এসব নৌ-রুটে রাতে মাদক পাচারের নিরাপদ বাহন হয়ে উঠেছে স্পিডবোটগুলো। কারন দ্রুত গতিসম্পন্ন নিবন্ধনবিহীন এসব নৌযান সহজেই স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলাচল করতে পারে। স্পিডবোট ও ঘাট নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি অকপটেই স্বীকার করলেন মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মনির জমাদ্দার। তিনি বলেন, আমার নিয়ন্ত্রনেই স্পিডবোটগুলো চলাচল করে। তবে কতটি চলাচল করে তা সঠিক বলতে পরবো না। তবে মনে হয় ৩০ টার মতো চলাচল করে। প্রতিদিন স্পিডবোটগুলো থেকে কত টাকা আদায় করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি টাকাও নেই না। তাহলে তালতলি ঘাটের জন্য বাজার কমিটির সভাপতি গোলাম কবিরকে প্রতিমাসে কিভাবে ১৬ হাজার টাকা দেন? এমন প্রশ্নে তালগোল পেঁচিয়ে বলেন, তাকে কোন টাকা দেই না। তবে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিম ও ঘাটের নাইটগার্ডকে দেবার জন্য দেই। তাহলে আপনার নিয়ন্ত্রনেই স্পিডবোট থেকে চাঁদা আদায় করা হয় এমন প্রশ্নের কোন সদুউত্তর না দিয়ে বলেন, আমি নিয়ন্ত্রণ করি না। তবে কি করব ভাই, পোলাপানের ভালমন্দ দেখাশুনার জন্য অল্প কিছু টাকা কালেকশন করি। ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৬’ অনুযায়ী নিবন্ধন ও রুট পারমিট ছাড়া স্পিডবোট চলাচলে আইনগত সুযোগ নেই। এটি অপরাধ। তারপরও প্রতিদিনই চলাচল করছে নিবন্ধনবিহীন এসব নৌযান। এ বিষয়ে বরিশাল বিআইডব্লটি’র ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো: কবির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত কোনো ধরনের নিবন্ধন ও রুট পারমিট ছাড়াই বরিশালের তালতলি বাজার থেকে মেহেন্দিগঞ্জ-পাতারহাট নৌ-রুটে অবৈধ স্পিডবোড চালাচ্ছে একটি চক্র। আমরা অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।