বরিশাল
দুই দিনের পরিবহণ ধর্মঘটে শতকোটি টাকা লোকসান
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২ দিনের ধর্মঘটে শতকোটি টাকার লোকসান গুনেছে বরিশালের পরিবহণ সেক্টর। ৫ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন থেকে ওই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বাস ও থ্রি-হুইলার মালিক সমিতি। আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও একই সময়ে বন্ধ ছিল লঞ্চসহ ভাড়ায় চলা প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস এমনকি খেয়া নৌকাও। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গণসমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দলের ইশারায় ওই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
যদিও এ অভিযোগ স্বীকার করেননি বাস ও থ্রি-হুইলার মালিক সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, সড়ক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের দাবিতে বাস এবং চলতে যাতে বাধা দেওয়া না হয় সেজন্য থ্রি-হুইলার মালিক সমিতি ওই ধর্মঘট করেছে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, যেসব দাবিতে এ ধর্মঘট তা আদায়ে পরে আর প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কারও সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি পরিবহণ মালিকরা। এ নিয়ে আর কোনো কর্মসূচিও দেননি।
বরিশালের বাস মালিকদের দুটি সংগঠন ডাক দিয়েছিল ওই ধর্মঘটের। এর মধ্যে বাস মালিক গ্রুপের বাসগুলো চলে নগরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মালিক গ্রুপের এক সদস্য বলেন, ধর্মঘটের বিষয়টি আসলে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সমিতির নেতারা যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের তাই সাহস করে কেউ প্রতিবাদ করেননি। লোকসান বিষয়ে আরেক মালিক বলেন, লোকসান তো বহুমুখী। প্রতিদিন এ টার্মিনাল থেকে ২৫০টি ট্রিপ হয়। প্রতি ট্রিপে নির্ধারিত হারে দিতে হয় টার্মিনাল চার্জ। দুদিন তা আদায় হয়নি। বাস চললে ড্রাইভার, সুপারভাইজার, হেলপার যেমন মজুরি পায় তেমনি মালিকের ঘরেও টাকা আসে। ধর্মঘটের দুদিন তা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া এ দুদিন বিপুল পরিমাণ জ্বালানি বিক্রি হয়নি পাম্পগুলোর। সেতুর টোলও পায়নি সরকার। এর সঙ্গে আয় বন্ধ ছিল টার্মিনালের ব্যবসায়ী, হকার, কাউন্টার ম্যান, কলম্যানসহ ২-৩ হাজার মানুষের।
বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির আওতায় রূপাতলী টার্মিনাল থেকে চলাচল করা বাস মালিক বলেন, ধর্মঘটের এ দুদিন টার্মিনালের চার্জসহ কোনো টাকাই আয় হয়নি। সেই সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীর দুদিন বেতনহীন থাকা এবং মালিকদের লোকসান।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে একজন বাস মালিক বলেন, কেবল বরিশাল-কুয়াকাটার রুটে একবার রাউন্ডে ৬০-৭০ লিটার ডিজেল দরকার হয়। আসা-যাওয়ায় ব্রিজের টোল খরচ হয় প্রায় ১২শ’ টাকা। এভাবে হিসাব করলে জ্বালানি, সেতুর টোলসহ আনুষঙ্গিক মিলিয়ে লোকসানের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া কেবল লোকাল মালিক সমিতি নয়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানীর সঙ্গে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে এখন হাজারের বেশি দূরপাল্লার বাস চলে। দুদিন বন্ধ থাকায় তাদেরও ব্যাপক লোকসান হয়েছে।
লঞ্চ মালিক সমিতির এক সদস্য বলেন, আমাদের এখানে তিনটি রুটে লঞ্চ চলেনি দু’দিন। বরিশাল-ভোলা রুটে তিন দিন বন্ধ রাখা হয় লঞ্চ। বিআইডব্লিউটিএ বার্থিং চার্জ, যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ, মালিনক-শ্রমিক. জ্বালানি তেল, লঞ্চঘাটে হকারসহ সব খাতেই বিপুল পরিমাণ লোকসান হয়েছে। অথচ লঞ্চ মালিক সমিতি কিন্তু ধর্মঘট ডাকেনি। লঞ্চ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি আমরা।
পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বলেন, বরিশাল বিভাগে ৪৩টি ফিলিং এবং ১৮টি এলপিজি স্টেশন রয়েছে। বাস লঞ্চ বন্ধ থাকায় এগুলো ছিল কার্যত বন্ধ। বরিশাল নগরের এক পেট্রলপাম্প মালিক বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক বিক্রির পরিমাণ ১০-১২ লাখ টাকা হলেও ধর্মঘটের দুদিন দুই লাখ টাকাও বিক্রি হয়নি। দুদিনের ধর্মঘটে পরিবহণ সেক্টরের এ বিপুল লোকসান হলেও যেসব দাবি আদায়ে ডাকা হয়েছিল ধর্মঘট তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরঞ্চ বিএনপির সমাবেশ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফিকে হয়ে গেছে। থ্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস বলেন, আমরা ধর্মঘট করেছি যাতে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না করে বাধা দেওয়া না হয়। প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি তাই এ নিয়ে আর কোনো কর্মসূচি দেইনি।
বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম মাশরেক বাবুল বলেন, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা দাবি আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
নেতারা এভাবে বললেও বিভাগীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, চিঠি দিয়ে ধর্মঘট ডাকার বিষয়টি অবহিত করা ছাড়া পরিবহণ সেক্টরের নেতারা আমাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করেননি। ধর্মঘটের আগেও না, পরেও না।