দৌলতখান
দৌলতখানের ১৪ জেলে সিত্রাং ঝড়ে নিখোঁজ, পরিবারে শোকের মাতম
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভোলার দৌলতখানের ১৪ জন জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সিত্রাং ঝড়ে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হয়েছে। এখনও তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে স্বজনরা এখন বিলাপ করছেন। জেলে পল্লীতে চলছে স্বজনহারাদের শোকের মাতম। নিখোঁজদের বাবা-মা, স্ত্রী ও ভাই বোনদের আহাজারিতে জেলে পল্লীর বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
বুধবার ( ২ নভেম্বর) সরেজমিন চরপাতা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড, ভবানীপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড, চরখলিফা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি গিয়ে এমন শোকাবহ পরিবেশ দেখা যায়।
নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা জানান, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার নাছির উদ্দিন খানের মাছ ধরা ট্রলারে তারা (নিখোঁজ জেলেরা) জেলে হিসেবে কাজ করতেন। অক্টোবর মাসের ২১ তারিখে নিষেধাজ্ঞার সময় ওই ট্রলারের মাঝি দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের দুলাল মাঝি এসব জেলেদের জাল মেরামত কাজের কথা বলে চরফ্যাসন উপজেলার সাগর পাড়ের শামরাজ নিয়ে যায়।
তাদেরকে দিয়ে জাল মেরামতের কাজ না করিয়ে ট্রলার মালিকের নির্দেশে দুলাল মাঝি জেলেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে মাছ ধরতে সাগরে যায়। ২৪ অথবা ২৫ অক্টোবর ঘূণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি সাগরে ডুবে যায়। ট্রলারটিতে দৌলতখানের ১৪ জনসহ মোট ২১ জন জেলে ছিল বলে জানা যায়। ট্রলার মালিক রায়পুরের নাছির উদ্দিন খান অবশ্য দাবি করেন এক মৌসুমের জন্য ট্রলারটি দুলাল মাঝি ২০ লাখ টাকার চুক্তিতে ভাড়া নেন। সাগরে যাওয়ার ব্যাপারে তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করা হয়নি।
নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে উপজেলার চরপাতা ৯ নং ওয়ার্ডের আবদুল মোতালেবের তিন ছেলে মো: ইয়াছিন, মো: নজির ও মো: মহসিন রয়েছেন। ইয়াছিনের মেয়ে রেহানা সাংবাদিকদের কাছে তার বাবার কথা বলতে গিয়ে কান্নার এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যান। একই এলাকার অশিতিপর বৃদ্ধ তার ছেলে আক্তার হোসেনকে হারিয়ে একেবারে মুষড়ে পড়েছেন।
ওই ট্রলারের জেলে দুই কন্যা সন্তানের জনক নুরে আলমের স্ত্রী বিবি হাজেরা নবজাতক পুত্র সন্তান কোলে বিলাপ করে বলছিলেন, ২২ অক্টোবর ট্রলার চালক দুলাল মাঝি আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে জাল মেরামতের কথা বলে শামরাজ নিয়ে যান। সেদিনই আমার কোল জুড়ে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। সে (স্বামী) ছেলের মুখ দেইখা যাইতে পারে নাই।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন, মো: আকতার হোসেন, মো: ইয়াছিন, নজির আহাম্মদ, মো: আলী, আবুল খায়ের, আলাউদ্দিন, নুরে আলম, শরিফ হোসেন, মহসিন, আবু আবদুল্লা, মহিউদ্দিন, মো: মিরাজ, হান্নান ও দুলাল মাঝি।
নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা দৌলতখান থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন।
দৌলতখান থানার ওসি মো: জাকির হোসেন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে থানায় সাধারণ ডায়রি নথিভুক্ত করা হয়েছে।