আমতলি
বীজ সংকটে আমন চাষে শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জোবায়দুল আলম বলেন, ‘টানা বর্ষণের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এ বছর আমনের সব বীজতলাই নিমজ্জিত হয়েছিল। অপেক্ষাকৃত নিচু বীজতলার প্রায় সব চারা নষ্ট হয়েছে। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় উপকূলীয় এ জেলার আমন ফলনে শঙ্কা রয়েছে।’ টানা বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বরগুনায় আমন বীজের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। রোপণের জন্য আমন ক্ষেত প্রস্তুত করেও বীজ সংকটে মাঠ খালি রাখতে হয়েছে। এতে উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রধান ফসল আমন চাষ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
কৃষকরা বলছেন, মাঠ প্রস্তুত করার পরও বীজের অভাবে বেশ কিছু জমি অনাবাদি থাকবে। জেলা কৃষি বিভাগও জানিয়েছে, এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে দেখা গেছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহজুড়ে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ৪৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া আগস্টে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে চারা নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষকরা জানান, উঁচু জমিতে যারা বীজতলা তৈরি করেছিলেন, তাদের চারা নষ্ট হয়নি। সেসব চারা কিনছেন অনেকেই। তবে এক সের ধানের বীজের দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা। ফলে চারা নষ্ট হওয়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে।
এখন জেলায় বিপুল পরিমাণ জমিতে চারা সংকট দেখা দিয়েছে, যা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যেতে পারে বলে জানান কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের (খামারবাড়ি) তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় এ বছর ৯৮ লাখ ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে বরগুনা সদরে ২৫ হাজার ৪০০, আমতলীতে ২৩ হাজার ৩৭১, তালতলীতে ১৬ হাজার ২৩০, বেতাগীতে ১০ হাজার ৬৯২, বামনায় ৬ হাজার ৩৩০ এবং পাথরঘাটা উপজেলায় ১৬ হাজার ৮২৭ হেক্টর। এসব জমিতে হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের আমন আবাদের কথা জানানো হয়।
কৃষি বিভাগ জানায়, উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের প্রধান ফসল রোপা আমন। কৃষকদের বীজ দিয়ে সহায়তা করে কৃষি বিভাগ। বরগুনার ৫৫ ভাগ জমিতে বি-আর, ব্রি ও বিনা এই তিন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করা হয়। এ ছাড়া বাকি ৪৫ ভাগ জমিতে আবাদ হয় স্থানীয় জাতের রোপা আমন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ‘টানা বর্ষণের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এ বছর আমনের সব বীজতলাই নিমজ্জিত হয়েছিল। অপেক্ষাকৃত নিচু বীজতলার প্রায় সব চারা নষ্ট হয়েছে। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় উপকূলীয় এ জেলার আমন ফলনে শঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমন বরগুনার কৃষকদের প্রধান ফসল। কিন্তু এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।’
বরগুনা সদরের খাজুরতলা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমনের জন্য আধগানি (দুই একর) জমিতে বীজতলা করেছি। দেওইর (বৃষ্টি) কারণে আলচাষ (হালচাষ) করতে পারি নয়। এহন (এখন) পানি কমছে, চাষবাস কইরা জমিতে বীজ লাগামু। কিন্তু বীজ সব পইচ্চা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন কি করমু খ্যাতে? নতুন কইররা বীজ করারও সোমায় নাই এহন। হেইতে খ্যাত খিল (অনাবাদি) থুইয়া দিছি।’
জেলার সবচেয়ে বেশি আমন চাষ হয় আমতলী উপজেলায়। উপজেলার হলদিয়া, আঠারগাছিয়া, আমতলী সদর এবং তালতলী উপজেলার ছোটবগী, পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, আমনের খেত বীজ রোপণের জন্য প্রস্তুত করা হলেও বীজের অভাবে মাঠ খালি পড়ে আছে।
চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার মৃধা বলেন, ‘আমনের ক্ষেতে এহন (এখন) বীজ রোয়ার সময়, জমিন রেডি করছি চাষাবাদ কইররা, কিন্তু মোগো বীজ সব শ্যাষ, দেওইর পানি জইম্মা সব বীজ নষ্ট।’
একই অবস্থা জেলার পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা উপজেলার আমন চাষিদেরও। পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘার কৃষক সেলিম হাওলাদার বলেন, ‘মোগো প্রায় দুই কানি (তিন একর) জমি এবার খিল (অনাবাদি) থাকপে। এত কষ্ট হরছি এহন মাঠে ধান ফলাইতে পারতে আছি না। এর চাইতে মোগো আর কষ্ট থাহে না কিছু।’
কৃষি কর্মকর্তা জোবায়দুল আলম বলেন, ‘অতিবৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট হওয়া একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমরা সরকারিভাবে কৃষকদের আমনের ধানবীজ সরবরাহ করেছিলাম। বীজ বপনের সময় উঁচু জমি নির্বাচনের পরামর্শও দিয়েছি। কিন্তু এবার বীজ নষ্ট হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি কৃষকদের বীজ সংকট কাটানোর জন্য। যাদের অতিরিক্ত বীজ আছে তাদের কাছ থেকে বীজ কিনেছেন অনেক কৃষক। তবুও সংকট কাটেনি। এই সমস্যার এখন কোনো সমাধান নেই।’