বরিশাল
নগরীতে বেড়েই চলেছে থ্রি-হুইলার যানের দাপট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নামসর্বস্ব সংগঠনের মাসিক ৫শ’ টাকা ফি আর মাসে একদিন পুলিশের ডিউটি করে নগরীতে চলাচল করছে অবৈধ থ্রি হুইলার। দিন দিন বেড়েই চলেছে এসব যানবাহনের দাপট। আইন না মেনে বেপরোয়া ভাবে চলাচল করছে অবৈধ থ্রি হুইলার। নগরীতে হাতে গোনা কয়েকটি সংগঠন রয়েছে যারাই এদের নিয়ন্ত্রন করে।
আর এসব সংগঠনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ট্রাফিক বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। মূলত ওইসব অসাধু কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়ে চালক-মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় সংগঠনের নামে মাসিক চাঁদা। এমনকি সংগঠনের কয়েকজন শ্রমিক হাতে দেখা গেছে ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের স্বাক্ষরিত রিকুইজিশন স্লিপ।
যদি কোন থ্রি-হুইলারের চালক কিংবা মালিক তাদের সংগঠনের সদস্য না হয় কিংবা মাসিক চাঁদ না দেয় তাহলে ট্রাফিক বিভাগের ওই স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হয়। একজন সাধারন শ্রমিক কিভাবে পুলিশের এমন গুরুত্বপূর্ন কাজ নিজ হাতে তুলে নেয়, বিষয়টি পুরো ট্রাফিক বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বলে জানায় সচেতন মহল।
এছাড়াও যত্রতত্র অঘোষিত স্ট্যান্ড বানিয়ে এসব যানে যাত্রী পরিবহন করায় মূল সড়কে লেগে থাকে তীব্র যানজট। শহরের অলিগলিতে এসব থ্রি-হুইলারের বেপরোয়া চলাচলে বাড়ছে দুর্ভোগ-দুর্ঘটনা। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় এসব যানে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। নথুুল্লাবাদ, রুপাতলী, জেলখানার মোড়, লঞ্চ ঘাট, শেবাচিম হাসপাতাল এলাকাসহ নগরীর সড়কের অর্ধশতাধিক স্থানে যত্রতত্র এসব ইজিবাইক ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজোশে নগরীতে অবৈধ থ্রি-হুইলার চলাচল করতে পারছে। ট্রাফিক বিভাগ মোটরসাইকেল সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযান চালালেও থ্রি হুইলারগুলোর দিকে তাদের তেমন কোনো নজর নেই। তাছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানা গেছে। আর বিআরটিএ দাবি করছে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার অটো গাড়িগুলো অবৈধ। এ অবৈধ গাড়ির বৈধ চালক হতে পারে না। তাই এদের লাইসেন্সও নেই।
পুলিশ জানিয়েছে, এসব বিষয়ে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোনো চালকই যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না। বেপরোয়া গতিতে থ্রি হুইলার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে গতিসীমা নির্ধারণের কাজও ইতিমধ্যে শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। বিআরটিএ বরিশাল সার্কেলের এক কর্মকর্তা জানায়, ২০১৭ সাল থেকে বরিশালে গ্যাস চালিত থ্রি হুইলার সিএনজি অটোরিকশা চালু হয়। বৈধ যান হওয়ায় বিআরটিএ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনও পায় এ যান। তবে সিএনজি রেজিস্ট্রেশন করা হলেও এ যানের অধিকাংশ চালকদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। একই অবস্থা থ্রি হুইলার আলফাগুলোর ক্ষেত্রেও। থ্রি হুইলার আলফার সংখ্যাও প্রায় ৪ হাজার। গ্যাস-তেল চালিত থ্রি হুইলারের সংখ্যাও ২ হাজারের মতো। এ যানগুলো পুলিশের কোনো কাজে না এলেও মাস শেষে পুলিশের নামে টাকা তোলা হয়ে থাকে চালক বা মালিকদের কাছ থেকে। নগরীর রুপাতলী এলাকায় দেখা গেছে, সড়কের উভয় পাশেই বেপরোয়া গতি এবং উল্টোপথে চলাচল করছে অবৈধ থ্রি হুইলার যানবাহন। এ এলাকায় ট্রাফিক বক্সের সামনে এসব অবৈধ থ্রি হুইলারে যাত্রী উঠানামা করানো হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলমান এইসব কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা।
বেল্লাল নামের এক বাসচালক জানান, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কাশিপুর চৌমাথা এলাকায় একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে আমার বাসটির সামনেই পড়েছিল একটি থ্রি হুইলার আলফা। আল্লাহর রহমতে ওই মাহিন্দ্রা আলফাতে থাকা ড্রাইভারসহ ৯ জন প্রাণে বেঁচে যায়। আমরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছি মহাসড়কে থ্রি হুইলার সরিয়ে ফেলার বিষয়ে। এরা যে মহাসড়কে কতটা ভয়াবহ সেটা বলে বোঝানোর মতো না। বর্তমানে মহাসড়কে গলার কাঁটা থ্রি হুইলার আলফা মাহিন্দ্রা হলেও নগরীতে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে সিএনজি ও গ্যাস-তেল চালিত নীল অটোর কন্ট্রোল না থাকায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, এসব দেখার জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে তদারকি না করায় নেশাসক্তরাও চালনা করে যাত্রী পরিবহন করা থ্রি হুইলারগুলো। থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা চালক জসীম বলেন, প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে সড়কে চলাচল করি। কেউ কোনো বাঁ দেয় না। এছাড়া প্রতিদিন টাকা দেই, ওই ভাগ প্রশাসনও নেয়। বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বাস চলাচলের ক্ষেত্রে থ্রি হুইলারগুলো একটি সমস্যা। ঝুঁকিপূর্ণ এবং অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে এসব যানবাহন চলাচল করে, যেসব কারণে কন্ট্রোল না থাকায় প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। বাস চালাতে খুব অসুবিধায় পড়তে হয়। এসব বিষয় পুলিশকে জানানো হয়েছে, তারাও অবগত।
বিআরটিএ বরিশাল সার্কেলের উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) জিয়াউর রহমান বলেন, থ্রি হুইলার চালকদের নিয়ে প্রতিমাসে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সব চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার জন্য আমরা নির্দেশনা দেব। নতুবা ওই গাড়ি চালককে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শেখ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বেপরোয়া গতিতে চলাচলরত থ্রি হুইলারের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, থ্রি হুইলার থেকে পুলিশের বাড়তি সুবিধা নেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। যদি তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে যে পুলিশ সদস্য এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।