বরিশাল
সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
থেমে গেছে শিক্ষার মান ও উন্নয়নমূলক কাজ
৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং ববির অবস্থান ৪৫ তম,
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রতিষ্ঠার এক যুগে প্রবেশ করলেও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো শেষ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রকল্পের কাজ। ফলে ক্লাসরুম সংকট, আবাসিক সংকট, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস সংকটও চরমে। শুধু তাই নয়, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের জন্য মানসম্মত পৃথক অডিটোরিয়াম নেই, নেই পর্যাপ্ত গবেষণাগার ও বিজ্ঞানাগার। লাইব্রেবিতে প্রয়োজনীয় বইয়ের সংকটসহ পরিবহন সুবিধা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর পাশাপাশি সর্বাগ্রে প্রয়োজন দক্ষ, যোগ্য, নিবেদিত প্রাণ, আদর্শবান শিক্ষক। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতে রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা।
প্রফেসর মাত্র একজন, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের সকল পদ শূন্য। নেই উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সহ ৫টি অনুষদের ডিন। অপরদিকে ২৪টি বিভাগেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। একজন শিক্ষককে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কোর্স পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের ওপর জেঁকে বসেছে সেশনজটের কালো থাবা। কবে কাটবে এই সেশন জট তা বলতে পারছেন না কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকটের শেষ নেই।
লাইব্রেরীতে গেলে পাঠ্য বই পাওয়া যায় না। ক্লাসরুম না থাকায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। আবাসন ব্যবস্থা অতি সীমিত। ছোট্ট একটি খাটে ২ জনকে থাকতে হয়। পরিবহন সংকট তীব্র। এর উপর শেষন জট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন বিভাগে। বৃষ্টি এলেই ক্যাম্পাস পানিতে ডুবে যায়। অথচ ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই সেখানে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সহকারী অধ্যাপক বলেন, এখানে শিক্ষক সংকট তীব্র। অনেক বিভাগে ১, ২ এবং ৩/৪ জন করে শিক্ষক রয়েছে। ক্লাস রুমের অভাব প্রকট। ল্যাব ফেসিলিটিজ পর্যাপ্ত নেই। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট। আবসিক সমস্যা দূর করা দরকার। প্রশাসনের দুর্বলতার কারনে প্রথম ধাপের উন্নয়ন কাজ এখনও শেষ হয়নি। এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, শেষন জট থাকলেও শিক্ষকরা চেষ্টা করছেন তা কাটিয়ে উঠতে। এদিকে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুনিয়র’ পদে যোগদানের জন্য আবেদন করতে চাইলেও সেটি পারেন না বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মর্যাদা’ ক্ষুণ্ন হওয়ার কথা বলে অনাপত্তিপত্র দেয়া হয় না তাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সিনিয়র পদ থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়র পদে যোগদান তাদের জন্য স্বস্তিকর নয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাওয়া শিক্ষকরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তারা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যেতে অনাপত্তি পত্র চেয়েছিলেন। তাদের সেটি দেয়া হয়নি। শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনাপত্তি পত্র না দেয়ার কোনো লিখিত নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেই। মৌখিকভাবে এটি কার্যকর আছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং এ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪৫ তমে দাঁড়িয়েছে। যা দক্ষিণাঞ্চলের এক মাত্র সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। অথচ পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর ছিল ৮ম।
এদিকে ২০২১ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রথমে কোন পদক্ষেপ নেয়নি ভিসি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারনে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছিলেন ভিসি। ভিসির কার্যক্রম সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী বলে, আমাদের কাছে মনে হয় ভিসি স্যারের আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। এছাড়াও ভিসি স্যার যেভাবে গণহারে সব জায়গায় মেলামেশা করেন, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান বাড়ে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, অভিযোগগুলো শতভাগ সত্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ক্রান্তিকাল চলছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সম্প্রতি উপাচার্যের মেয়ে অহনা আরেফিন বশেমুরবিপ্রবিতে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের) প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া নিয়ে ড. ছাদেকুল আরেফিন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সমস্যার ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাইলে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন এর মোবাইলে দু’বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি তার নম্বরে ম্যাসেজ ও হোয়াটসএ্যাপে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও তিনি উত্তর প্রদান করেননি।