বরিশাল
বাবুগঞ্জে হতদরিদ্রের প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
বাবুগজ্ঞ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নে সরকার হতদরিদ্রের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের (ইজিপিপি) মাধ্যমে ৪০ দিনের ২য় পর্যায়ের কর্মসূচি চালু হচ্ছে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ইউপি সদস্যরা এই কর্মসূচির ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ জন্য তারা নগদের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের জন্য শ্রমিকদের নামে ভুয়া মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। একইভাবে গত অর্থবছরেও ৫টি প্রকল্প দিয়ে শ্রমিকের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। যদিও প্রশাসনের দাবি তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাধবপাশা ইউনিয়নে অতি-দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির ৫টি প্রকল্পে জমা দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো হচ্ছে ১নং ওয়ার্ডের একটি মাটির রাস্তা। এ জন্য শ্রমিক নির্ধারণ করা হয় ৩৭ জন। একইভাবে ৫নং ওয়ার্ডের একটি রাস্তা, ৬নং ওয়ার্ডে, ৮নং ওয়ার্ডে ও ৯ নং ওয়ার্ডে একটি করে মাটির রাস্তার জন্য ২৫ জন করে ৪ প্রকল্পের জন্য ১০০ শ্রমিক বাছাই করে এর তালিকা প্রকল্পের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রকল্পের স্বাক্ষর চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমানের নামে থাকলেও তিনি এই স্বাক্ষর করেননি। এমনটি ৫টি প্রকল্পের জন্য ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়। যদিও সেখানে দুই জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ইউপি সদস্য জাকির সিকদার ও মো. সুলতান ব্যাপারীর নামে। যদিও এই ইউনিয়নে জাকির সিকদার ও মো. সুলতান ব্যাপারী নামে কোনো ইউপি সদস্য নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
শুধু তাই নয়, ৫ প্রকল্পের জন্য ১৩৭ জন শ্রমিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তবে তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, শতাধিক শ্রমিকের মোবাইল নম্বর একই সিরিয়ালের। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই প্রকল্প দিয়েছে ইউপি সদস্য (৫নং ওয়ার্ড) মাহবুবুর রহমান, (৭নং ওয়ার্ড) খলিলুর রহমান ও (২নং ওয়ার্ড) ফকরুল ইসলাম রোকন। তারা নিজেরা মোবাইল নম্বর কিনে শ্রমিকদের নামে তা তালিকায় জমা দিয়েছেন। যার কারণে এই টাকা শ্রমিকরা না পেয়ে সরাসরি এই মেম্বারদের কাছে যাবে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, সরকার একজন শ্রমিকের জন্য দৈনিক ৪শ টাকা করে প্রদান করে। সেক্ষেত্রে ৪০ দিন একজন শ্রমিক ১৬ হাজার টাকা পাবে। আর ৫ প্রকল্পের ১৩৭ জন শ্রমিক এই কাজের জন্য ২১ লাখ ৯২ হাজার টাকা পাবে। এটাই সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই ইউপি সদস্যরা আত্মসাতের চেষ্টা চালাচ্ছে।
যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, স্বাক্ষর জালের বিষয়টা পরিষদ বুঝবে। এটা নিয়ে যারা বেশি কথা বলে (এখানে তিনি গালি দিয়েছেন।) এরপর তিনি ফোন কেটে দেন। পরে ফোন করে জানান, সরি। মূলত, আগে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। তিনি বিএনপি করতেন। এখন জাতীয় পার্টি থেকে তিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন। তিনি স্বাক্ষর করতেও জানে না। কয়েকবার স্বাক্ষর করানোর চেষ্টাও করেছি। কিন্তু তিনি শিখতে পারেনি। এটা সত্য যে যখন এই প্রকল্প জমা দেওয়া হয় তখন তিনি ঢাকাতে ছিলেন। আমাদের যেটা ভুল হয়েছে, সেটা হচ্ছে তাকে জানানো উচিত ছিল। আমরা এখন বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে আগের প্রকল্প ভালোভাবে হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
একই ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য রেখা বেগম ও ফাতেমা আক্তার লিপি বলেন, আমরা এই প্রকল্পের বিষয় কিছুই জানি না। তবে শুনেছি আমাদের পরিষদ থেকে ৫টি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। মাধপপাশা ইউপি চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমান জানান, সম্প্রতি ৫টি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমার স্বাক্ষর না নেওয়ার বিষয়টি সত্য। তখন ঢাকায় ছিলাম। বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নাসির উদ্দিন জানান, মাধবপাশা ইউনিয়নের প্রকল্প নিয়ে সভাপতিই আসছে ও জমা দিয়েছিল। যদিও বুধবার আবার সেই প্রকল্প উঠিয়ে নিয়ে গেছে। সময়মতো তারা প্রকল্প দাখিল করতে না পারলে এই ইউনিয়ন বাদ দিয়ে প্রকল্প জেলা অফিসে প্রেরণ করা হবে।
কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে সম্পর্কে জানতে চাইলে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান কালও আসছে, কিন্তু তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। যদি এমনটা হয়, তবে এই প্রকল্পই বাতিল। আর শ্রমিকদের তালিকা ও তাদের মোবাইল নম্বর চেক করা হবে। আমরা দেখব কার নামে এই সিমগুলো রেজিস্ট্রেশন করা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবং সহকারী কমিশনার আরাফাত হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে