বরিশাল
শেবাচিমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকলে কাজে আসছে না, ঘটছে চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্ম
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আইন-শৃঙ্খলা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আনসার বাহিনী। কিন্তু শৃঙ্খলা এবং অপরাধ কমাতে কাজে আসছে না আনসার সদস্যরা। পূর্বের ন্যায় প্রতিদিনই হাসপাতাল অভ্যন্তরে ঘটে চলছে একের পর এক চুরি, চিনতাই এবং দালালের প্রতারণাসহ বিভিন্ন নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। গতকাল মঙ্গলবার সকালেও হাসপাতালের অভ্যন্তরে ঘটেছে পৃথক দুটি চুরির ঘটনা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দুই নারীর ব্যাগ থেকে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল সেট এবং নগদ সাত হাজার টাকা চুরি করে নিয়েছে চোর চক্র। অথচ এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। ফলে সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত আনসার সদস্যদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোগী এবং তাদের স্বজনরা।
এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তদারকি ও দায়িত্বজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ভিজিটর এবং দালাল নিয়ন্ত্রণ, চুরি, ছিনতাই, ওষুধ কোম্পানির প্রতিবেদক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল এবং ওষুধ চুরি ঠেকাতে গত অর্থ বছরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০ জন আনসার নিয়োগ করা হয়। জরুরি বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড, টিকেট কাউন্টার এবং প্রবেশ গেটে আনসার সদস্যদের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে তাদেরকে প্রতি মাসে দেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা পারিশ্রমিক। শুধু তাই নয়, আনসারদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টারের একটি ভবন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের জন্য। সেখানে বিদ্যুৎ এবং পানির বিল কোনটাই দিতে হচ্ছে না তাদের। যুগযুগ ধরে বসবাস করা কর্মচারীদের ওপর একপ্রকার জুলুম করে তাদের কোয়ার্টার থেকে নামিয়ে আনসারদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু এতোসব সুযোগ সুবিধা প্রদানের পরেও আনসার সদস্যরা কার্যত কোন কাজেই আসছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। বরং দায়িত্ব পালনের নামে হাসপাতালের দালালদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ফুটপাতের দোকান ও গাড়ি পার্কিং এবং সিরিয়ালের জন্য অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি রোগীদের স্বজনদের সাথে দূর্ব্যবহার এবং হামলার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আর এসব করতে গিয়ে মুল দায়িত্ব ভুলে যাচ্ছেন আনসার সদস্যরা। এমন অভিযোগ তুলে একাধিক কর্মচারী এবং রোগীর স্বজনরা বলছেন, আনসার সদস্যদের সামনেই একের পর এক চুরি, ছিনতাই ঘটছে। দালাল চক্র ঘুরে বেড়াচ্ছে হাসপাতাল অভ্যন্তরে। অবৈধ স্থাপনায় ভরে গেছে হাসপাতাল চত্বর। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার সকালে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দুই নারী রোগীর টাকা এবং মোবাইল সেট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে বাবুগঞ্জ উপজেলার রুবিনা নামের একজনের মোবাইল সেট এবং বরগুনার বেতাগী উপজেলার রাশিদা বেগম নামের অপর নারীর ব্যাগ থেকে সাত হাজার টাকা চুরি করে নিয়েছে চোর চক্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই দুই নারী বহিঃর্বিভাগে চিকিৎসা নিতে ব্যবস্থাপত্র (টিকেট) ক্রয়ের জন্য কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়ান। সেই সুযোগ রোগীবেশে চোর চক্র তাদের ব্যাগ থেকে মোবাইল এবং টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। অথচ ঘটনার সময় থেকে পরবর্তী জানাজানির পরেও ঘটনাস্থলে দেখা মেলেনি আনসার সদস্যদের।
এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও চুরির ঘটনা নিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। এসব বিষয়ে কথা হয় শেবাচিম হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা আনসার কমান্ডার (পিসি) মো. মোর্শারফ হোসেন এর সাথে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ৪০ জন সদস্য হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতালে প্রবেশের প্রধান গেট (মাঝখানে), জরুরি বিভাগ, শিশু ওয়ার্ড, প্রসুতী ওয়ার্ড, প্রশাসনিক ভবন, ইন্টার্ন ডক্টর্স হোস্টেলসহ বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যতটুকু পারছি হাসপাতালে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে। এরি মধ্যে হাসপাতালের অভ্যন্তরে ভ্রাম্যমান চা-পান, পপকন বিক্রেতাদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের পকেট কাউন্টারের সামনে চুরির ঘটনা আমাদের জানা নেই। ওই স্থানে আমাদের কোন সদস্য দায়িত্বে ছিলো না। কেন ছিলোনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মী সংকটের কারণে গোটা হাসপাতালে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।