কলাপাড়া
শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করতে স্থায়ী জমি চান ব্যবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ পটুয়াখালী জেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর ৩০ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়। যার ২০ শতাংশই হয় পটুয়াখালীর এ অঞ্চলে। তাদের জন্য স্থায়ী পল্লীর ব্যবস্থা করা হবে শিগগিরই।’
শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে পটুয়াখালীর উপকূলের জেলেদের। এই এলাকার কীটনাশকমুক্ত শুটকির চাহিদা দেশ-বিদেশের সর্বত্র। তবে প্রক্রিয়াজাত করার জন্য স্থায়ীভাবে কোনো জমি নেই বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। তবে সমস্যা সমাধানে শোনা গেছে আশার বাণীও।
শুঁটকি ব্যবসায়ী মন্টু গাজী বলেন, ‘তিন বছর আগেও হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ছিল এই পেশায়। বর্তমানে অনেক লোক জড়িত। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখানকার শুঁটকির চাহিদা বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।’
মন্টু গাজী বলেন, ‘করোনার মধ্যেও গত বছর ১০ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। এ বছর যেহেতু গতবারের চেয়ে বিধিনিষেধ একটু কম, তাই লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে। তাই এ বছর প্রায় অর্ধকোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি।’
এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুটি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছি। অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যারা লোন নিতে পারেন না। যে কারণে তাদের দাদন নিতে হয়। আবার অনেকে বছরের বাকি সময়ের আয়ের অংশ পুঁজি করে শীত মৌসুমে এই ব্যবসায় নামেন।
‘সরকার যদি আমাদের স্থায়ী একটি পল্লীর ব্যবস্থা করে দিত আর ছোট ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে লোনের ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে এই অঞ্চলে শুটকি ব্যবসা আরও ভালোভাবে করা যেত।’
মন্টু গাজী বলেন, ‘নিজস্ব জমি না থাকায় সাগরপাড়ে বা নদীর মোহনার পাড়ে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে আমাদের শুঁটকির চাতাল তৈরি করতে হয়। সেখানে দিনরাত পাহারার জন্য লোক রাখতে হয়। মাছ কাটাছেঁড়া বা ধোয়া-মোছার জন্য যে যেভাবে পারছে সেভাবেই করছে। যদি সরকারিভাবে নির্দিষ্ট একটি স্থান নির্ধারণ করে দিত, তাহলে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ সহজ হতো। আমাদের অনেক টাকা বেঁচে যেত।’
পটুয়াখালী জেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘শুঁটকি ব্যবসায়ীদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি। জেলেদের আধুনিক সেবার আওতায় আনতে সরকারি সহায়তা দেয়া হয়।’
মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর ৩০ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়। যার ২০ শতাংশই হয় পটুয়াখালীর এ অঞ্চলে। তাদের জন্য স্থায়ী পল্লীর ব্যবস্থা করা হবে শিগগিরই।
‘এরইমধ্যে আমরা রাঙ্গাবালী ও কুয়াকাটায় কয়েকটি স্থানও পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষও অবগত আছেন। আশা করা যাচ্ছে, এ এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।’
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্থায়ী শুটকি পল্লী গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসককে আমি লিখিতভাবে জানিয়েছি। তিনি আমাকে জমি দেখতে বলেছেন। তবে যেহেতু কুয়াকাটা পৌরসভার নিজস্ব কোনো জমি নাই, তাই এই পল্লী করতে হলে সরকারি খাস খতিয়ানে করা দরকার।
‘আমরা সেভাবেই এগুচ্ছি। আশা করি, আগামী বছরের মধ্যে এখানকার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি স্থায়ী শুঁটকিপল্লীর ব্যবস্থা করা হবে।’
কুয়াকাটার আলীপুর, মহিপুর, খাজুরা, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর লেম্বুরচর এবং পাশের উপজেলা রাঙ্গাবালীর সোনারচর, চরমোন্তাজসহ জেলার উপকূলের অন্তত ২০ এলাকায় চলে শুঁটকি তৈরির কাজ। লইট্যা, রুপচাঁদা, ছুড়ি, বাইন, ফাইস্যা, ছোট চিংড়ি, ছোট পোয়া, বিভিন্ন ধরনের কমোট, লাক্ষাসহ অন্তত ৪০ জাতের সামুদ্রিক মাছ শুঁটকি করা হয়।
কীটনাশকমুক্ত এসব শুটকি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় রয়েছে চাহিদা।
সম্প্রতি নড়াইল থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা সরকারি চাকরিজীবী জামশেদ আলী জানান, তিনি চার ধরনের শুটকি কিনেছেন। যার দাম নড়াইলের তুলনায় অনেক কম। ছোট চিংড়ি, লইট্টা, বাইন আর লাক্ষা মাছের শুঁটকি কিনেছেন তিনি। এর মধ্যে শুধুমাত্র চিংড়ি মাছের শুঁটকি কিনেছেন পাঁচ কেজি।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীরাও এখান থেকে শুঁটকি কেনেন।
শরীয়তপুর থেকে আসা শুঁটকি ব্যবসায়ী জাফর ব্যাপারী বলেন, ‘নভেম্বর মাসে বিভিন্ন মাছের ৪০ মণ শুঁটকির অর্ডার করেছি। অর্ধেক টাকা অগ্রিম দিয়েছি কুয়াকাটার ১০ ব্যবসায়ীকে। ১০ জানুয়ারি অর্ডার দেয়া শুঁটকিসহ আরও তিন মণ চিংড়ির শুঁটকি পাঠিয়েছি শরীয়তপুরে।’