বরগুনা
মন কেড়ে নেওয়া সোনারচরের ইকোপার্ক ও শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র সোনারচর ও শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত। এটি তালতলী উপজেলার সর্বদক্ষিণে সোনাকাটা ইউনিয়নের সাগর সৈকতে গড়ে ওঠা টেংরাগিরি ফাতরার বনের দক্ষিণ অংশে বঙ্গোপসারের কোল ঘেঁষে ওঠা এ চরটির নামই সোনারচর।
সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় এ বনাঞ্চলটি প্রাকৃতিক বনজ সম্পদে পরিপূর্ণ।
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বন স্থানীয়ভাবে ফাতরার বন নামে পরিচিত। সমুদ্রতীরের এ সোনারচর দক্ষিণ ও পশ্চিম দু’দিকেই বঙ্গোপসাগর, পূর্বে নীলগঞ্জ নদীর মোহনা ও উত্তর দিকে খাল দ্বারা মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিভাজিত। বন ও সমুদ্রের অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে এ সোনারচরে। আনন্দ-বিনোদনের জন্য রয়েছে একাধিক পিকনিক স্পট।
কুয়াকাটা থেকে এখানে আসার জন্য রয়েছে রকমারি নৌযানের ব্যবস্থা। সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের মধ্য থেকে পিকনিক পার্টি আসে এখানে। তখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে সোনারচরের ইকোপার্ক।
সোনারচরের সবুজের সমারোহ হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের। শীতকাল আর বসন্তের পাতাঝরা মৌসুমে এক অনাবিল সৌন্দর্যে ভরে ওঠে সোনারচর। এ চরে সূর্যাস্তের সোনালি আভা বনের বৃক্ষরাজিতে সোনালি বিচ্ছুরণ ঘটায়। এ সৌন্দর্যের তুলনাই নেই। সোনারচরের সৌন্দর্য যারা একবার উপভোগ করেছে তারা শত বাধা উপেক্ষা করে এখানে আসে বারবার।
পটুয়াখালী বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইকো-ট্যুরিজম সুযোগ বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সখিনা বিটে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬শ টাকা ব্যয়ে একটি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বনের ভিতরে বিভিন্ন প্রাণী সংরক্ষণের জন্য ইটের দেয়াল ও লোহার রড দিয়ে সীমানা প্রাচীর তৈরি করে এর মধ্যে চিতাবাঘ, হরিণ, সজারু, শুকর, অজগর, কুমির ও বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী ছাড়া হয়। পার্কটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পর্যটকদের জন্য পিকনিক স্পট, চলাচলের জন্য বনের ভিতরের ছোট ছোট খালের উপর ১৬টি কাঠের সেতু, ৪টি গভীর নলকূপ, ৪টি টয়লেট, ২টি টিকিট কাউন্টার, ৪টি গোল আকারে বিশ্রামাগারসহ বনের ভিতরে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ইটের রাস্তা তৈরি করা হয়।
১৩ হাজার ৬৪৪ একর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে প্রাকৃতিক ও বন বিভাগের সৃজিত এ বনে বিভিন্ন প্রকার বনজ বৃক্ষ রয়েছে। লবণাক্ত ও মিষ্টি মাটির অপূর্ব মিশ্রণের কারণে এই বনে রয়েছে সারি সারি গেওয়া, জাম, ধুন্দল, কেওড়া, সুন্দরি, বাইন, করমজা, বলই কেওয়া, তাল, বনকাঁঠাল, রেইনট্রি, হেতাল, তাম্বুলকাটা, গরানগাছের সমারোহ। অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হওয়ায় এখানে গড়ে উঠেছে সোনারচর ইকোপার্ক পর্যটন কেন্দ্র।
সবুজে ঘেরা এ বনে রয়েছে শিয়াল, বানর, ভাল্লুক, বেজী, কাঁঠবিড়ালী, বনমোরগসহ নানা বন্য প্রাণি। ডালে-ডালে নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ পর্যটকদের মনে অপার্থিব আনন্দ বয়ে আনে। ইকোপার্কের এসব প্রাণী প্রদর্শন করলে মন জুড়িয়ে যায় পর্যটকদের।
ইকোপার্কে অবমুক্ত করা বিভিন্ন প্রাণিসহ পুরো ইকোপার্কের সৌন্দর্য ঘুরে দেখতে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। ইকোপার্কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাকা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে হয় সমুদ্র সৈকতে।
স্থানীয়ভাবে সোনারচর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত থাকলেও এর যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ার কারণে এলাকাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। এই সৌন্দর্যময় সোনারচরের সাথে দেশের বিভিন্ন এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হলে বাড়বে পর্যটকদের সংখ্যা এবং সোনারচর ইকোপার্ক পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হলে সরকারি কোষাগারে আসবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। বাড়বে এলাকার হতদরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান। তালতলী শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে সোনারচরের এই ইকোপার্ক।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নদীপথে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর বঙ্গোপসাগরের মোহনা দিয়ে যাওয়া যাবে এই সোনারচরে। এলাকাটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করা হলে সোনারচর বয়ে আনবে সোনালি সমৃদ্ধি।