বরিশাল
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
সমাজ বিরোধীরাই যেখানে সমাজপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল জেলায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন ইউপিতে সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে বিতর্কিতদের ফের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আ’লীগ। ইউপি নির্বাচনে হত্যা, চাঁদাবাজি, চাল চুরি, ঘুষ ও ত্রাসসহ একাধিক চাঞ্চল্যকর মামলায় কারাভোগ শেষে জামিনে থাকা আসামীদের এ মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, তাদের মতামত উপেক্ষা করে জেলা আওয়ামী লীগ এর মাধ্যমে কেন্দ্রের কাছে সন্ত্রাসী এবং একাধিক মামলার আসামীদের নাম সুপারিশ করে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য পাঠানো হয়েছে। এনিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে সমাজদ্রোহীদের কাছে জনপ্রতিনিধিত্ব যাওয়ার ভয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
জনপ্রতিনিধিত্ব’র প্রথম ধাপে নেতৃত্ব নির্ধারণে এমন চরিত্রগুলোকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও কোন কর্নপাত নেই শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের।
তবে এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, মামলায় দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা যাবে না। কারন যাদেরকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন চূড়ান্ত রায় আসেনি। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন দিতে আইনগত কোন সমস্যা নেই। কিন্তু হত্যা-চাঁদাবাজির মতো ঘটনায় মামলা এবং সাময়িক বরখাস্ত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরী হওয়ার পরেও যদি সেই অভিযুক্তদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে দলের ইমেজ ক্ষুন্ন হবে কিনা কিংবা জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন মামলার আসামীকে যদি আদালত দোষী না বলে আমরা তাকে দোষী বলতে পারি না।
এদিকে সূত্রে জানা গেছে, বাবুগঞ্জের কেদারপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি চাল চুরিতে র্যাবের মামলায় তিন মাস কারাভোগ শেষে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া নুর আলমকে ফের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দেশব্যাপী এ চাল চুরির হিড়িক থামাতে সরকারের উচ্চমহলের পদক্ষেপে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের অভিযানে এ চাল উদ্ধার করা হয়। চুরির ঘটনা হাতেনাতে ধরার পরও এমন একজন ব্যক্তিকে ফের দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে এলাকাবাসি।
অপরদিকে বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নে হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী মজিবুল ইসলাম টুকুকেও ইউপি নির্বাচনে ফের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। জাসদের সাংগাঠনিক সম্পাদক হুমায়ন কবির হত্যা মামলার আসামী টুকু। শুধু তাই নয়, বরিশাল নগরী জুড়ে চাঞ্চল্যকর ২টি চাঁদাবাজি মামলার আসামী লিটন মোল্লাকেও দেয়া হয়েছে কাশিপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন।
বরিশালে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির মামলায় জেল হাজতে যাওয়ার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন লিটন মোল্লাকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়েছিলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে। বেশ কয়েকদিন কারাভোগ শেষে লিটন মোল্লা জামিনে মুক্ত হয়। এরপর রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই চুপচাপ ছিলেন তিনি। এত কিছুর পর ঘুরে ফিরে লিটন মোল্লা’র হাতেই দেয়া হলো নৌকার টিকিট। এমন বিতর্কিত কর্মকান্ডের দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদার।
ঘুষ চাওয়ার অডিও রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় বেশ সমালোচনা তৈরী হয়েছিলো। এরপরেও ফের তাকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও ভুক্তভুগী এলাকাবাসী এই মনোন্নয়নের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। তার বিরুদ্ধে সরকারের উন্নয়নের টাকা লোপাটসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যা কিনা পুরো ইউনিয়নে মুখরোচক ঘটনা।
উল্লেখ্য, বরিশাল বিভাগে ক্ষমতাসীন আ.লীগের মনোনয়ন পেয়েছে ২৮২ জন এর মধ্যে বরিশাল জেলায় দেয়া হয়েছে ৭৯ জনকে। আগামী ১১ এপ্রিল সারাদেশের ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।