আন্তর্জাতিক
মানবদেহে ঢুকে নতুন রূপ নিয়ে বিধ্বংসী হচ্ছে করোনাভাইরাস
রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ মানুষের দেহে ঢুকে মিউটেশনের মাধ্যমে অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে আরো ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করছে করোনা ভাইরাস। বিজ্ঞানীরা বলছেন গঠন পরিবর্তনের ফলে, এটি আরো অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং আরো দ্রুত ছড়াতে পারে। এই ভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে। শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। ঠাণ্ডা লাগার মতো এই ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। এই ভাইরাস কারো ফুসফুসে আক্রমণ করার পর শ্বাসকষ্ট এবং কাশি দেখা দেয়। দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। নিউমোনিয়া এবং মৃত্যুও ঘটতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর প্রায় পাঁচদিন লাগে এর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে। প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর এরপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় একসপ্তাহের মধ্যে। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে সর্বপ্রথম এই ভাইরাস মানুষের দেহে আক্রমণ করে। গত ১১ জানুয়ারি প্রথম এই ভাইরাসের আক্রমণে একজনের মৃত্যু হয়। যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন তাই এখনো এর কোনো ওষুধ বা টিকা নেই। তবে এর টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে চীনে। এমন কোনো চিকিৎসা নেই যা এই ভাইরাসে সৃষ্ট রোগ ঠেকাতে পারে। এই ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সতর্কতা অবলম্বন। যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ধারে-কাছেও ঘেষা যাবে না। ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছেন বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ করা যাবে না। ঘরের বাইরে বের হলে মুখোশ পরে বের হতে হবে। যারা ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকেও মুখোশ পরাতে হবে। যাতে অন্যদের দেহে তা ছড়িয়ে না পড়ে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে এক হাজার ৩০০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত চার হাজার ১৯৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মূলত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত ৩১ ডিসেম্বরে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজার থেকেই কোনো একটি প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাসটি মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের ২৯টি প্রদেশ সহ আরো ১৫টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং তাইওয়ানেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীনে সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এনেছে। এই ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কারণ এ বিষয়ে এখনও ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক এবং এটা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়গুলো এখনও পরিষ্কার নয়। এখন পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়েছে যে, এই ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া হবার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা অনেক ভয়াবহ হতে পারে। অপরদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।