বরিশাল সদর
পুরো নগরীকে সি সি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে- ট্রাফিক ডিসি
বরিশালের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজড সংযোজন
এ এইচ মাহমুদ ॥ সড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার প্রক্রিয়া গ্রহন করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। পাশাপাশি ২০২১ সালের মধ্যে পুরো নগরীকে সি সি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসবে বরিশাল ট্রাফিক বিভাগ। ইতিমধ্যে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত সিসি ক্যামেরাগুলো সচল করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. জাকির হোসেন মজুমদার।
তিনি বলেন, একটি নিদিষ্ট কক্ষ থেকে নগরীর সকল ক্যামেরা নিয়ন্ত্রন করা হবে। যাতে সড়কের যে কোন বাস্তব চিত্র দেখে দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এবং ওই নিদিষ্ট স্থান থেকে সড়কের সকল আপডেট তথ্য বিভিন্ন ট্রাফিক পুলিশের কাছে দ্রুততার সাথে পৌঁছানো হবে। তাছাড়া সড়কে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাৎক্ষণিক উদ্ধার কার্যক্রম সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে বাড়ানো হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা। হেলমেট ও লাইসেন্স বিহীন মোটরসাইকেল চালকদের প্রতি কঠোর নজরদারি থাকায় দিন দিন মামলার সংখ্যা বেড়েই চলছে। সড়কে উন্নয়নের নামে বিভিন্ন মহলের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নগরীতে বিভিন্ন অটো সংগঠনের নামে চাঁদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে একাধিক মামলা। বন্ধ করা হয়েছে নগরীর বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়। পাশাপাশি চলতি বছরের শুরু থেকেই নগরবাসীকে মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মানা, জনসচেতনতা বাড়াতে নগরবাসীর মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে নগর ট্রাফিক বিভাগ।
নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার ক্ষেত্রে নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের নভেম্বরে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাশ হলেও করোনার কারনে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। তাই নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক ডিসি মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, নতুন আইন বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। যেমন নগরীর টার্মিনাল গুলোতে ও ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন অফিসে গাড়ির মালিক, শ্রমিক ও সাধারণ জনগনকে নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এবং বরিশাল নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থিত ট্রাফিক বক্সে বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে জানাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নতুন আইনে সাজার পরিমাণ বেশি হওয়ায় জনগণকে নতুন আইন সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রথম ৫/৬ মাস জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। এ সময় অল্প পরিসরে মামলা দেওয়া হয়েছে। পরে মহামারি করোনার কারণে নানা রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় মামলার পরিমাণ কম হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মানুষ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন এবং কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তাছাড়া পুলিশের ওপেন হাউজ ডে তে এসব বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে প্রতিনিয়ত আলোচনা চলছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালের সড়ক পরিবহন আইনকে আওতায় রেখেই নগরীতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজড করার প্রক্রিয়া চলছে। সড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ও চলমান আইনকে দৃশ্যমান করতে ২০২০ সালে বরিশাল নগরীতে মোট ২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা মামলা থেকে আদায় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নগরীর ট্রাফিক বিভাগের প্রসিকিউশন শাখার দায়িত্বে নিয়োজিত সার্জেন্ট মশিউর জানান, ২০২০ সালে নগরীতে বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে জব্দকৃত গাড়ির মধ্যে সিএনজি, মটরসাইকেল, বাস, ট্রাক, থ্রি হুইলারসহ প্রায় ৮৮৪ টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে এবং নয় হাজার ২১৮টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে আট হাজার ৪৬১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়ে দুই কোটি ৪১ লাখ পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। বাকি ৭৫৭টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি আরও জানান, ২০২০ সালে ৯৩৮টি যানবাহন আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮৪৭টি যানবাহন অবমুক্ত করা হয়েছে। মুলতবি করা হয়েছে ৯১টি।