বরিশাল সদর
বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ
অধ্যক্ষের দুর্নীতিতে কলেজের সুনাম শূন্যের কোঠায়
নিজস্ব প্রতিবেদক ।। বরিশালের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কলেজটি সরকারিকরণ করা হলেও অধ্যক্ষ’র দুর্নীতিতে কলেজের সুনাম এখন শূন্যের কোঠায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটির সরকারিকরণের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রেষণে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে শাহিদুর রহমান মজুমদারকে। তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই অর্থ আত্মসাতসহ জড়িয়েছেন নানান দুর্নীতিতে।
২০২০ সালের ১৯ জুলাই ৪০ জন শিক্ষক-কর্মচারী কে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করেন কিন্তু অধ্যক্ষ হিসেবে শাহিদুর রহমান মজুমদারকে পদায়ন করা হয়নি। এমনকি তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করার কোনো বিধানও নেই। কারণ বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়নের জন্য একজন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সাইদুর রহমান মজুমদারকে প্রত্যাহার না করার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে কাউকে নিয়োগ দিতে পারছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
আর এই সুযোগে শাহিদুর রহমান মজুমদার অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া গড়ে তুলেছেন বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজটিতে। কোন সরকারি আদেশ নিষেধ মেনে চলার বালাই নেই তার মধ্যে। শিক্ষক-কর্মচারীদের এডহক ভিত্তিতে নিয়োগের পর অদ্যবধি প্রতিষ্ঠানটিতে কোন আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারেনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কিন্তু তাতেও থেমে নেই অধ্যাক্ষের টাকা খরচ করা। সরকারি নিয়ম অমান্য করে অধ্যক্ষ যোগদানের দিন থেকেই শতকরা ২০ ভাগ হারে অতিরিক্ত ভাতা হিসেবে ডেপুটেশন ভাতা নিয়ে আসছিল। পরবর্তীতে শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার অধ্যক্ষের শতকরা ২০ ভাগ অতিরিক্ত ভাতা মে ২০২০ থেকে বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ সভাপতি বরাবরে ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখ পুনরায় শতকরা ২০ ভাগ হারে অতিরিক্ত ভাতার জন্য আবেদন করলে ৫ আগস্ট ২০২০ তারিখ বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এক পত্রের মাধ্যমে অধ্যক্ষকে জানিয়ে দেয় সরকারি বিধি অনুযায়ী পুনরায় অধ্যক্ষের প্রেষণ ভাতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া অধ্যক্ষের যোগদানের তারিখ হতে এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত তিনি বিধি বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত যে প্রেষণ ভাতা গ্রহণ করেছে সেটি ফেরত প্রদানের বিষয়টি পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদ সভায় উত্থাপন পূর্বক নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয় পত্রে।
১৯ জুলাই ২০২০ তারিখ প্রতিষ্ঠানটির ৪০ জন শিক্ষক-কর্মচারী আত্তীকৃত হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানটির সরকারি কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হয় এ কারণে বেসরকারি আমলের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত হয় এই সুযোগে অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার কোন নিয়ম বা আদেশের তোয়াক্কা না করে পুনরায় নিজেই শতকরা ২০ ভাগ হারে ডেপুটেশন ভাতা পুনরায় চালু করে যা সম্পূর্ণ বেআইনি, অবৈধ, নিয়ম বহির্ভূত ও ক্ষমতার অপব্যবহার । এমনকি প্রতিষ্ঠানটিতে কোন আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার না থাকার পরেও অধ্যক্ষ নিজেই নিজের বেতন সহ বিভিন্ন খাতে অবৈধভাবে অর্থ ব্যয় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, অধ্যক্ষ যা নেয়ার তা নেয় এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা এখনো নিয়োগ হয়নি স্বীকার করে বলেন, অধ্যক্ষ এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।
এদিকে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় থেকে নবম শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ শুরু হলেও বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে প্রথমদিকে আবেদন করতে পারেনি শত শত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। প্রথমদিকে ভর্তির আবেদনে করতে গিয়ে ওয়েবসাইটে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের নাম পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ থেকে অভিভাবকদের চাপের মুখে সরকারি নিয়মে ভর্তি কার্যক্রমের সাথে তারা সংযুক্ত হতে বাধ্য হয়। জানা গেছে সরকারি নিয়মে ভর্তি না করে নিজেদের পদ্ধতিতে ভর্তি করলে বেশি আবেদন ফি নেওয়া সহ বিভিন্ন রকম ভর্তি বাণিজ্য করতে পারবে বলেই অধ্যক্ষ সরকারি পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আসতে চেয়েছিল না। পরবর্তীতে শিক্ষক-অভিভাবকদের চাপের মুখে সরকারি পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আসতে বাধ্য হয় অধ্যক্ষ। এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে ভর্তি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শিক্ষক জানান অধ্যক্ষ চাইনি বলেই আমরা প্রথম দিন থেকে সরকারি নিয়মে ভর্তি কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে পারিনি এ বিষয়ে আমার আর কিছু মন্তব্য করার সুযোগ নেই।
অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে অর্থআত্মসাৎ ও তহবিল তসরুপসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তদন্তে অর্থআত্মসাৎ এর প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে অর্থআত্মসাৎ ও তহবিল তসরুপসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরন করেছে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার।
এছাড়াও করোনা কালীন সময়ে ও জুলাই ২০২০ পর্যন্ত মাসিক ৫৫০ টাকা হারে বেতন আদায় করেছে। পুরোপুরি সরকারি হওয়ার পরেও আগষ্ট থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মাসিক ১৫০ টাকা করে বেতন নেওয়া হয়েছে। সরকারি স্কুলের মাসিক বেতন ১৫০ টাকা কেন এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারের মোবাইলে এবাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। এদিকে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে একজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের দাবী জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিবর্গ।