জাতীয়
সীমান্তে হত্যাসহ ১০ বিষয়ে বৈঠকে বিজিবি-বিএসএফ
রির্পোট দেশ জনপদ ॥ সীমান্তে হত্যাসহ ১০ বিষয়ে আলোচনায় শুরু হয়েছে বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সম্মেলনে।
ভারতের গোহাটিতে মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় শুরু হওয়া সম্মেলনে ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।
আর ১২ সদস্যের ভারতীয় দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সিলেটের তামাবিল-ডাউকি আইসিপি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। বিজিবি মহাপরিচালককে ফুলেল সংবর্ধনা ও গার্ড অফ অনার দেয়া হয়।
বরাবরের মতো এই সম্মেলনেও সীমান্ত হত্যা যে প্রধান্য পাবে, সেটা বিজিবির পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল।
সম্মেলন ঘিরে মোট বিজিবি যে ১০ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রথমটিই হলো- ‘সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো ও আহত/হত্যা করা সম্পর্কে প্রতিবাদ জানানো এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে করণীয়।’
২০ ডিসেম্বর বিজিবি দিবসেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বাহিনীটির প্রধান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন কূটনৈতিকভাবে আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি যেন সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে পারি।
‘আমরা সীমান্তবর্তী মানুষজনকে সচেতন করার চেষ্টা করছি যেন তারা অবৈধভাবে বর্ডার পার না হন। সীমান্তবর্তী এলাকায় যেসব জনপ্রতিনিধি আছেন উনাদের মাধ্যমে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যেন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা বা সীমান্তে অপরাধে জড়িত না হয়ে পড়েন।’
গত দুই দশক ধরেই সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বড় কাঁটা হয়ে আছে। গত এক দশকে এসব ঘটনা আগের চেয়ে কমে আসলেও এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে বিএসএফের গুলিতে। বিজিবি-বিএসএফের আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের সরকারের মধ্যেও এই বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কথা হয়েছে।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জাতীয় সংসদে জানান, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে ২৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক তথ্যে বলা জানানো হয়, গত ১২ বছরে প্রায় ৫৫০ জন বাংলাদেশিকে সীমান্তে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ। গত প্রায় এক বছরে খুন হয়েছে ৪৫ জন।
গত বৃহস্পতিবার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল সামিটেও সীমান্ত হত্যা নিয়ে কথা হয়। আর মোদি অঙ্গীকার করেন, বিএসএফ আর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে না। যদিও ভারত এমন অঙ্গীকার নতুন করেনি।
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন (ফাইল ফটো)
২৫ ডিসেম্বর যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শেষ হবে চার দিনের এই সম্মেলন।
সীমান্তে হত্যা ছাড়া বিজিবি ও বিএসএফের এই সম্মেলনে আরও যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে:
# ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, হেরোইন এবং ভায়াগ্রা/সেনেগ্রাসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মাদকদ্রব্যের চোরাচালান রোধ। এছাড়া ভারতের অভ্যন্তরে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য/মাদকদ্রব্যের কারখানা/গুদাম এবং মাদকের চোরাচালান রোধ, মাদক পাচারকারীদের সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়।
# ভারত হতে বাংলাদেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান রোধ এবং অস্ত্র চোরাচালান রোধে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে তথ্য বিনিময়।
# বিএসএফ এবং ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক সীমানা লংঘন/অবৈধ পারাপার/অনুপ্রবেশ রোধ।
# সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভারত কর্তৃক অনুমোদনহীন উন্নয়নমূলক নির্মাণ কাজ না করা এবং বন্ধ থাকা বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করা।
# উভয় দেশের সীমান্ত এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন।
# রাজশাহী সীমান্তের চর মাজারদিয়া ও চর খানপুর এলাকার স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে পদ্মানদীর ভারতীয় অংশ ব্যবহারের অনুমতি নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা।
# ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়।
# সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা দ্রত সমাধানের জন্য ও কার্যকর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন।
# পারস্পরিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ।