বরিশাল সদর
বরিশালের আলোচিত রিয়াজ হত্যা মামলা পুন:তদন্তে সিআইডিতে হস্তান্তর
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলা চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর গ্রামের বাসিন্দা দলিল লেখক রেজাউল করীম রিয়াজ হত্যা মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দিয়েছেন বরিশাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাসুম বিল্লাহ। গতকাল মঙ্গলবার মামলার ধার্য তারিখে রিয়াজের বড় ভাই মামলার বাদী মনিরুল ইসলাম রিপন পুলিশের দায়ের করা তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা মামলায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বাদীর আর্জি ও আইনজীবীর শুনানী শেষে রিয়াজ হত্যা মামলাটি পুনঃতদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করার জন্য সিআইডি পুলিশের উপর দায়িত্ব অর্পণ করার আদেশ দেন।
সূত্রমতে, আলোচিত দলিল লেখক রিয়াজ হত্যা মামলাটি দুই দফা মডেল কোতয়ালী থানা পুলিশের তদন্ত থাকাকালীন সময়ে বাদীর আবেদন ছাড়াই রহস্যজনকভাবে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মামলাটি বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করে। পরবর্তীতে ডিবির ইন্সপেক্টর মোঃ সগির হোসেনকে রিয়াজ হত্যা মামলা তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। মোঃ সগির হোসেন মামলার তদন্তকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে চার ছিচকে চোরকে আটক করে আদালতে রিয়াজ হত্যার জবানবন্দী গ্রহণ করান। সেই জবানবন্দির কাগজপত্র সূত্রে দেখা যায়, যাদেরকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি গ্রহণ করিয়েছে, সেই চার জনের দেয়া জবানবন্দি কারো কথার সাথে কোন হত্যা সম্পর্কে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী মনিরুল ইসলাম রিপন অভিযোগ করে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি তদন্তের নামে দীর্ঘদিন করোনার অজুহাতে কালক্ষেপন করে এবং হত্যা সংঘটিত সরেজমিন এলাকায় তদন্ত না করে মামলার প্রধান আসামী আমিনা অক্তার লিজাকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি এ ঘটনা বুঝতে পেরে ২৩ই অক্টোবর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে সিআইডি পুলিশ সদস্য দ্বারা সুষ্ঠুভাবে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন প্রার্থনা করেন। সে সময়ে বাদীর আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক মোঃ মারুফ আহমেদ তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পরবর্তী তারিখ ১১ই নভেম্বর মামলার সকল সিডি নিয়ে আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ সগির হোসেন করোনার অজুহাত দেখিয়ে মামলার ধার্য তারিখ ১১ই নভেম্বর আদালতে আসা থেকে বিরত থাকেন। পরবর্তীতে আদালতের বিচারক মোঃ মারুফ আহমেদের বদলির আদেশের কথা শুনে ৩০ নভেম্বর মোঃ সগির হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে অপর চার ছিচকে চোরকে হত্যাকারী বানিয়ে আদালতের বর্তমান বিচারক মোঃ মাসুম বিল্লাহ আদালতে চার্জশিট প্রতিবেদন দাখিল করেন। গতকাল আদালতের বিচারক মাসুম বিল্লাহ বাদীর আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডিতে হস্তান্তর করেন।
এদিকে মামলার পুনঃতদন্তের খবর জানতে পেরে পুনরায় গা ঢাকা দিয়েছে মামলার অন্যতম প্রধান আসামী মাসুম। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ সগির হোসেন তাকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট প্রতিবেদন দাখিল করিলে প্রকাশ্যে আসে লিজার পরকীয়া প্রেমিক মাসুম হোসেন। চরমোনাই নিজ গ্রামে লিজাকে সাথে নিয়ে প্রকাশ্যে শুরু হয় তাদের চলাফেরা। শুধু তাই নয়, বরিশাল রেজিস্ট্রি অফিসে রিয়াজের দলিল লেখার জন্য নির্ধারিত ঘরটিও সে দখল করে। অপরদিকে নিহত রিয়াজের পলাশপুরের বাড়িটি জামিনে বের হয়ে অনেক আগেই নিজ দখলে নেয় লিজা। তবে গতকাল আদালত হত্যা মামলাটি পুনঃতদন্ত দিলে মাসুমকে ফের পালানোর পায়তারা চালাচ্ছে লিজা বলে অভিযোগ করেন নিহতের বড় ভাই বাদী মনিরুল ইসলাম রিপন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে দলিল লেখক রিয়াজকে তার নিজ ঘরে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরের দিন রিয়াজের ভাই রিপন বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রিয়াজের স্ত্রী লিজাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে লিজা স্বামীকে হত্যায় জড়িত থাকাসহ মূল রহস্য স্বীকার করে। পরে স্ত্রী আমেনা আক্তার লিজা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে লিজা স্বীকার করে তার স্বামীর সহকারী তার পরকীয়া প্রেমিক মাসুম হোসেন দা দিয়ে কুপিয়ে ঘুমন্ত রেজাউলকে হত্যা করে। এসময় তার অন্য সহকারী হাবিব বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে। এর আগে তিনি (স্ত্রী) রিয়াজকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৬ টি ঘুমের ওষুধ কৌশলে দুধের সাথে মিশিয়ে রাখেন। যা খেয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে রিয়াজ। ওই অবস্থায়ই কুপিয়ে খুন করা হয় তাকে। এই মামলায় থানার দুই সাব ইন্সেপেক্টর দ্বারা তদন্ত চলার এক প্রর্যায়ে হঠাৎ করে ২০২০ সালের ২২ই ফেব্র“য়ারী হত্যা মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।