বরিশাল সদর
নগরীর জগদীস স্বারস্বত স্কুল এন্ড কলেজ
একাদশে ভর্তির গেড়াকলে শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির অনিশ্চয়তার গেড়াকলে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। নামে আছে কাজে নেই নগরীর জগদীস স্বারস্বত স্কুলের কলেজ শাখা। স্কুল কর্তৃপক্ষ কলেজ শাখা বাতিলের জন্য বরিশাল বোর্ডে আবেদন করলেও বোর্ড কর্তৃপক্ষ তা বাতিল না করায় অনলাইনে জগদীস স্বারস্বত স্কুল এন্ড কলেজ তালিকাটি রয়ে গেছে। ভর্তির সময় অনলাইনে তালিকা দেখে শিক্ষার্থীরা আবেদন করে এবং পরবর্তীতে নির্ধারিত ওই কলেজ ভর্তির জন্য এসে বিপাকে পড়ার ঘটনা ঘটছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটিতে কলেজ কার্যক্রম চালুর কোন ব্যবস্থা নেই কয়েক বছর ধরে। সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালীন পরিস্থিতির মধ্যে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি অনুমোদন মেলে। আনন্দেরও শেষ ছিলো না প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের। সেই একাদশ শ্রেণীই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক নেই, নেই পাঠদানের আনুষঙ্গিক কোন পরিবেশ। সবকিছু বিবেচনায় চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিসহ পুরো সেকশন বন্ধের জন্য বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধান। কিন্তু বোর্ড সে আবেদনে সাড়া না দিয়ে এবারও ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের নিশ্চয়ন প্রদান করেছে। বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে চরম বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার জরুরী সভা করেছে সভাপতি ও শিক্ষকরা। সেখানেও বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সাথে রাতে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাবেয়া খাতুন। তবে বোর্ড চেয়ারম্যান জানিয়েছেন কোন শ্রেণী বন্ধের সিদ্ধান্ত এডহক কমিটি নিতে পারে না। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে এডহক কমিটি দিয়ে চলছে তাই আমরা তাদের একাদশ শ্রেণীর পাঠদান বন্ধের আবেদনটি বৈধ বলে মনে করছি না। তাই তাদের এ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। জানা গেছে ২০১২ সালে একাদশ শ্রেণীতে পাঠদানের অনুমতি পায় জগদীস স্বারস্বত স্কুল। অনুমতি পাওয়ার পর প্রথম দুই তিন বছর ৫/৭ জন ছাত্রী ভর্তি হলেও মাঝখানে কয়েক বছর কোন ছাত্রীই ভর্তি হয়নি। গতবার ১১ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছিলো। কিন্তু শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষ সংকটে একদিনও পাঠ গ্রহণের সুযোগ পায়নি তারা। যে কারণে ওই ছাত্রীরা আর কলেজমুখী হয়নি। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি বছর থেকে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি বন্ধ চেয়ে এ বছরের ২৬ জুলাই বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান শাহ আলম এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাবেয়া খাতুন। কিন্তু বোর্ড সে আবেদনের প্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
জানতে চাইলে সভাপতি রাবেয়া খাতুন বলেন, এখানে একাদশ শ্রেণী চালু রাখার মত কোন পরিবেশ নেই। একাদশ শ্রেণীর জন্য আলাদাভাবে কোন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। এছাড়া কলেজের জন্য অবকাঠামোগত যে সব প্রয়োজন রয়েছে তার কিছুই এখানে নেই। ছাত্রীরা ভর্তি হলে ক্লাশ করতে পারছে না। আমরা এভাবে তাদের সাথে প্রতারণা করতে পারি না। তাই আমরা সভা করে রেজুলেশন আকারে একাদশ শ্রেণীর পাঠদান বন্ধের জন্য বোর্ডে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বোর্ড কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন শুনেছি এবারও নাকি বোর্ড ২০/২৫ জন ছাত্রী ভর্তির নিশ্চয়ন প্রদান করেছে। যে কারণে আমরা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি বিষয়টি নিয়ে জরুরী সভা করেছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সক্ষমতা না থাকার পরেও বোর্ড একটি প্রতিষ্ঠানের উপর এভাবে একটি বিষয় চাপিয়ে দিতে পারে না। বিষয়টি অবহিত করার জন্য আমরা সিটি মেয়রের সাথে সাক্ষাত করব। এদিকে বিদ্যালয়ের একটি সুত্র জানিয়েছে, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বোর্ড চেয়ারম্যানের সাথে আতাত করে প্রতিষ্ঠান প্রধান শাহ আলম একাদশে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে রাখার বিষয়টি সচল রেখেছেন। যে কারণে বোর্ড একাদশে ভর্তি বন্ধের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। যে কারণে জরুরী সভায় না এসে ফোন বন্ধ করে রাখেন প্রতিষ্ঠান প্রধান শাহ আলম। জানতে চাইলে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ ইউনুস শুরুতেই বলেন, ওই আবেদনের কোন বৈধতা নেই। কারণ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে এডহক কমিটি দিয়ে চলছে। তিনি বলেন এডহক কমিটি শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য রুটিন ওয়ার্ক করবে। কোন শ্রেণীর পাঠদান বন্ধের সিদ্ধান্ত একটি মৌলিক সিদ্ধান্ত। যা এডহক কমিটি নিতে পারে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়টি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবেন। এজন্য শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে যা যা করা প্রয়োজন তারাই করবেন। বোর্ডের এখানে কিছু করার নেই। পাঠদান বন্ধের জন্য পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত রেজুলেশন আকারে বোর্ডে আবেদন করতে হবে বলে জানান তিনি।