বরিশাল
খেয়াঘাটে ভাড়া আদায়ের নামে চাঁদাবাজির শিকার যাত্রীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের উনিশটি খেয়াঘাটের অর্ধেকের বেশীতেই নেই ভাড়া আদায়ের চার্ট। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে সরাসারি চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বরিশাল জেলা পরিষদের খেয়াঘাটগুলোতে তেরোটি শ্রেনীতে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে ইজারাদারদের শোষনের এমন চিত্র চলছে বছরজুড়েই। ঘাট ইজারাদাররা সরকার নির্ধারিত রেট চার্ট না লাগিয়ে যাত্রীদের অন্ধকারে রেখে মগের মুল্লুক তৈরী করেছে। বছরজুড়ে ইজারা আইনের এমন লঙ্ঘন হলেও অবস্থার পরিবর্তনে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে সূত্রে জানা গেছে, বানারীপাড়া খেয়াঘাটের ইজারাদার বাইশারি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা লোকসানে আছি। এছাড়া করোনার কারণেও যাত্রী পারাপারসহ পণ্য পরিবহন কমে গেছে। যাহোক আমরা রেট চার্ট লাগিয়ে দেবো। কিন্তু এতোদিন কেন রেট চার্ট লাগানো হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগের ইজারাদার কোন চার্ট লাগায়নি এমনকি অনেক বেশি ভাড়া আদায় করতো। বানারীপাড়া খেয়াঘাটে জেলা পরিষদের নির্ধারিত রেট চার্টের চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল সাদিদ বলেন, রেট চার্ট না থাকলে অবশ্যই সেখানে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। সেক্ষেত্রে সেখানে যদি জেলা পরিষদ থেকে রেট চার্ট দেয়া হয় আর যদি ইজারাদার তা খেয়াঘাটে না লাগিয়ে দেয় তাহলে অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে মিরগঞ্জ খেয়াঘাটেও পারাপারের জন্য ভাড়া আদায়ের কোন তালিকা নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খেয়াঘাটের ইজারাদার খোকন বেপারী বলেন, আমরা রেটচার্ট লাগাইনি কারন জেলা পরিষদ থেকে দেয়নি। জেলা পরিষদ থেকে যদি রেট চার্ট না দেয়া হয় তাহলে আপনারা যাত্রীদের থেকে ভাড়া আদায় করেন কিভাবে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে সমর্থ হয়নি। অথচ জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে টেন্ডার প্রাপ্তির পর থেকেই রেট চার্ট দেয়া হয় ভাড়া আদায়ের জন্য।
একইভাবে বরিশাল গোমা খেয়াঘাটের ইজাদার ফারুক সিকদার বলেন, ভাই সব খেয়াঘাটেই বেশি ভাড়া নেয়া হয় তাই আমিও নেই। কিন্তু আপনি তো জেলা পরিষদের আইন ভঙ্গ করছেন। এসময় তিনি আরো বলেন, ভাই আমি একাতো নিচ্ছিনা। প্রত্যেক খেয়ঘাটেই চার্টের বাহিরে ভাড়া আদায় করা হয়। সূত্রে জানা গেছে, প্রায় মাস খানেক আগে এই খেয়াঘাটে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হলেও খেয়াঘাটটির ইজারাদার এখনো শোধরায়নি। বরিশাল জেলা পরিষদের অধীনে বিশটি খেয়াঘাটের অর্ধেকেরও বেশি খেয়াঘাটে ইজারাদার জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত রেটচার্ট অনুসরণ করছেনা। আর এর অন্যতম কারণ হলো যাত্রী ও পণ্য এবং ছোট-খাটো যানবাহন পারাপারে ভাড়া আদায়ের নামে বাড়তি টাকা হাতানো।
এনিয়ে বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মানিকহার রহমান বলেন, আমরা স্ব স্ব খেয়াঘাট সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জানিয়েছি কোন খেয়াঘাটে যদি নির্ধারিত রেটচার্টের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হয় তাহলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু খেয়াঘাটের ইজারাদারদের সাথে যোগাযোগ করা হলে উল্টো অভিযোগ করে বলেন, জেলা পরিষদ থেকে রেটচার্ট দেয়া হয়নি। এমন অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন, এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা কারন ঘাট ইজারা পাওয়ার পরপই তাদের রেট চার্ট দেয়া হয়। আর যদি না দেয়া হয় তাহলে সে ভাড়া আদায় করে কিভাবে? বরং তারা রেট চার্ট ফেলে দেয় যাতে পাবলিক রেট চার্ট দেখতে না পারে। তাহলে প্রতিনিয়ত যাত্রীরা চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে এর কি কোন সুরাহা মিলবে না জানতে চাইলে বলেন, আমরা দেখছি।
সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের খেয়াঘাটগুলোতে তেরোটি শ্রেণীতে ভাড়া আদায় করা হয়। এরমধ্যে মানুষ(যাত্রী), চালকসহ সাইকেল, চালকসহ মটরসাইকেল, রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মালামাল,( ১৫কেজির উপরে গণ্য), সিমেন্ট, সার ও চাউলের বস্তা, আসবাব পত্র/পালংক, শোকেজ, ওয়ারড্রপ, ঢেউটিন বান্ডিলসহ হাঁস-মুরগী খাঁচার ভাড়া আদায়ের জন্য আলাদা আলাদা রেট চার্ট রয়েছে। কিন্তু এই শ্রেনীগুলোর ভাড়া নির্ধারন করা থাকলেও পরর্বীতে ইজারাদাররা তা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারিত করে। এরমধ্যে মিরগঞ্জ খেয়াঘাটে যাত্রী জন প্রতি ৭টাকা, চালকসহ সাইকেল প্রতিটি ৭টাকা, চালকসহ মটরসাইকেল ১৮টাকা, রিকশা ও ভ্যান ১২ টাকা, গরু মহিষ (১বছরের উপরে ৫টাকা ও ২বছর পর্যন্ত ২২ টাকা), ছাগল ও ভেড়া ৫টাকা, মালামাল ১৫ কেজির উপরে প্রতি কেজি ৫০ পয়সা, সিমেন্ট সার চাউলের বস্তা ৫০কেজি পর্যন্ত ৬টাকা ও ৫০ কেজির উর্ধ্বে ৮টাকা, আসবাবপত্র, পালংক ইত্যাদি প্রতিটি ১৬টাকা, ঢেউটিন প্রতি বান্ডিল ১২টাকা, হাস-মুরগী খাঁচা প্রতি ৫ টাকাসহ রেট চার্ট র্নিধারন করা হয়েছে। অথচ এর কয়েকগুন বেশি ভাড়া নেয়া হয় যাত্রীদের থেকে। একই চালচিত্র বানারীপাড়া, গোমা এবং মিরগঞ্জসহ অধিকাংশ খেয়াঘাটে। খেয়া পারাপারের সময় সরকারি রেট চার্ট না থাকায় মানুষ সঠিক ভাড়াটা জানতে পারেনা যেকারণে ইজাড়াদারের চাঁদাবাজির শিকার হয় যা একপ্রকার নিয়মিত শোষনে পরিণত হয়েছে।
এনিয়ে বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা সাংগাঠনিক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত চৌধুরী বলেন, সরকারি নির্ধারিত রেট চার্টের বেশি ভাড়া আদায় এটি একটি শোষন। এনিয়ে মারামারি সংঘর্ষ কতকিছু হয় ঘাটগুলোতে। কিন্তু এরপরেও এই শোষন বন্ধ হয়না। অথচ এই শোষন মুক্তির জন্য বাঙ্গালি জাতি যুদ্ধ করেছিলো এবং এই কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। আর এহেন কর্মকান্ড সরাসরি গণমানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পরে সরকারের শাসন ব্যবস্থার প্রতি। সরকার যতোই উন্নয়ন করুক মানুষের মধ্যে দাগ কাটেনা। তাই গুটিকয়েক লুটেরাদের জন্য সরকারের ইমেজ সংকট তৈরী হোক এটাও আমরা চাইনা।
খেয়া ঘাটগুলোতে নির্ধারিত রেটচার্ট অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঈদুল ইসলাম বলেন, আমি অসুস্থ্য এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারবোনা। আপনি সিও’র সাথে যোগাযোগ করেন।