বরিশাল
বরিশাল-৬ বাকেরগঞ্জ
জোটের অঙ্কে বদলাতে পারে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক হিসাব
- ঘাঁটি হলেও নিরাপদ নয় বিএনপি
মোঃ বশির আহাম্মেদ, বাকেরগঞ্জ ॥ ক্ষমতার পালাবদল হলেও স্বাধীনতার পর থেকে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কার্যত একটি ধারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বিরোধী শক্তির সংসদে পৌঁছানোর ইতিহাস না থাকায় এই আসনটি বরাবরই জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যারোমিটার হিসেবে বিবেচিত। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সেই ধারাবাহিকতায় এবারও বাকেরগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তাপ ও জোট রাজনীতির জটিল হিসাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৬ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৭ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪০ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৪ জন। ভোটের এই বিশাল সংখ্যাই আসনটিকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য এবং বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক পরিচিতি থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নির্বাচনী মাঠে দলটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একাধিক গ্রুপিং ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব প্রচারণার গতি ও ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বরিশাল জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা মাহমুদুন্নবী তালুকদার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে এখানেই শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক হিসাব। সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ইসলামি সমমনা দলগুলোর আটদলীয় বর্তমানে ১০ দলীয় জোট চূড়ান্ত হলে বরিশাল-৬ আসনে জোটগত প্রার্থী হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমকেই মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে কোনো অন্তঃকোন্দল না থাকায় পুরো ইসলামি ভোটব্যাংক একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
যদিও বরিশাল-৬ আসনটি ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, তবে ইসলামি দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী মাঠে নামলে এই আসনের রাজনৈতিক সমীকরণ আমূল বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এবং ইসলামি জোটের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নির্বাচনী লড়াইকে হাড্ডাহাড্ডি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত এই আসনে এনসিপি, এবি পার্টিসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ফলে মূল লড়াইটি বিএনপি বনাম ইসলামি সমমনা জোটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন আর আগের মতো একপাক্ষিক নয়। ইসলামি জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম মাঠে নামলে বিএনপির জন্য এটি হবে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ কোন্দল বনাম সংগঠিত ঐক্য এই দুই বাস্তবতার সংঘর্ষে বরিশাল-৬ আসনে এবার তৈরি হচ্ছে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা, যার ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।



